স্বায়ত্তশাসনের সঙ্গে দক্ষতাও হারিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জলসম্পদ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডাব্লিউডিবি)। প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে অনেকটাই যেন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জলসম্পদ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডাব্লিউডিবি)। প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে অনেকটাই যেন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০০০ প্রণয়নের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসিত থেকে বিডাব্লিউডিবিকে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে সরকার।

সরকারের এই ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ‘দক্ষ’ করে তোলা। তবে, সেই সময় থেকেই বিডাব্লিউডিবি ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। মূলত একটি প্রতীকী গভর্নিং কাউন্সিলের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞ এবং অভ্যন্তরীণরা।

বিডাব্লিউডিবি আইন অনুসারে, অপারেশনাল কাজ ও বড় প্রকল্পগুলো তদারকির জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ১৩ সদস্যের গভর্নিং কাউন্সিলের প্রতি দুমাসে একটি বৈঠক হওয়ার কথা।

সে হিসেবে গত ২০ বছরে গভর্নিং কাউন্সিলের মোট ১২০টি সভা হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মতে হয়েছে মাত্র ৪৫টি।

৪৫তম গভর্নিং কাউন্সিলের সভা ২০১৯ সালের মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকবার পিছিয়ে তা শেষ পর্যন্ত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়।

স্বায়ত্তশাসিত থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির সভা হয়েছে সপ্তাহে দুবার। বিডাব্লিউডিবির এক কর্মকর্তা জানান, সপ্তাহে দুটি সভা হওয়ায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।

বিডাব্লিউডিবি আইনে পানি সম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত কাউন্সিলকে অর্গানোগ্রামের শীর্ষে রাখা হয়েছে।

এতে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন পানি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; একজন পানিসম্পদ প্রকৌশলী; একজন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ; একটি এনজিও, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট এবং সুবিধাভোগী সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি; পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক এবং বিডাব্লিউডিবির মহাপরিচালক।

আইন অনুসারে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত সময় এবং ভেন্যুতে প্রতি দুই মাস পর পর একটি সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে। কোরাম পূরণের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে কমপক্ষে ছয় জন সদস্য।

এই গভর্নিং কাউন্সিলের কার্যকারিতা না থাকায় বিডাব্লিউডিবিকে বড় সিদ্ধান্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দৌড়াতে হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মন্ত্রণালয়ের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডাব্লিউডিবি কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীনতার পর প্রথম ২৮ বছরে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে বিডাব্লিউডিবির কাজে ভাটা পড়েছে।

তবুও এই প্রতিষ্ঠানটি তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ, উপকূলীয় বাঁধ ও ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড বন্যা সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার মতো দুর্দান্ত কিছু কাজ করেছে বলে তিনি যোগ করেন।

তবে প্রতিষ্ঠানটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় পরিণত হওয়ার পর থেকে বদলে গেছে। চাকরির নিরাপত্তাহীনতা এবং নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষদের অনুপস্থিতির কারণে বিডাব্লিউডিবি এখন কম লাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

‘বোর্ড’ থেকে ‘অধিদপ্তর’

সম্প্রতি একটি অকার্যকরী পরিচালনা পরিষদ এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিডাব্লিউডিবি আইন ২০০০ সংশোধন করার জন্য ২০১৮ সালের এপ্রিলে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কমিটির চতুর্থ বৈঠকে বোর্ডকে একটি অধিদপ্তরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বিষয়ে তিনটি উপ-কমিটি গঠন করে।

বিডাব্লিউডিবির মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ এম আমিনুল হক জানান, একটি অধিদপ্তর গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সব সীমাবদ্ধতা সমাধান করা হবে।

দ্য ডেইলি স্টারকে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘এ কারণেই সংবিধিবদ্ধ বোর্ডকে একটি সম্পূর্ণ সরকারি সংস্থায় রূপান্তর করার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিডাব্লিউডিবি ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। আমাদের কাজে গতি আসবে।’

জনবলের ঘাটতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি জানান, অনেক দক্ষ কর্মকর্তা বিডাব্লিউডিবির চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এটি শুধুমাত্র একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বলে।

তিনি বলেন, ‘তবে অধিদপ্তর হয়ে গেলে কর্মকর্তারা বিসিএস র‌্যাঙ্ক পাবেন। তখন সমস্যার সমাধান হবে।’

পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমও জানান, বিডাব্লিউডিবিকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হলে প্রতিষ্ঠানটি আরও গতিশীল হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিদপ্তর দ্রুত কাজ করতে সক্ষম হবে।’

বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মতিন জানান, বিডাব্লিউডিবির কাজ প্রযুক্তিগত। তাই প্রযুক্তিগতভাবে যোগ্যদের নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ‘এটি যখন স্বায়ত্তশাসিত ছিল তখন প্রযুক্তিবিদরা এর নেতৃত্ব দিতেন এবং দেশ তখন এই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু দুর্দান্ত কাজ দেখেছিল।’

অধিদপ্তর হয়ে গেলে বোর্ডটি সম্পূর্ণরূপে আমলাদের কব্জায় থাকবে বলে যোগ করেন ড. মতিন।

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago