ঢাকাই চলচ্চিত্রের হারিয়ে যাওয়া তারকারা

একটি সিনেমা একজন শিল্পীকে বছরের পর বছর বাঁচিয়ে রাখে। এজন্য প্রতিটি শিল্পী চায় সিনেমা করতে। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমও ধরা হয় সিনেমাকে। বাংলাদেশের সিনেমায় অনেক শিল্পী অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ নেই। সেই সব তারকা অভিনয় শিল্পীরা না থাকলেও তাদের কাজ ঠিকই রয়ে গেছে। এখনো তাদের কাজ দর্শকরা দেখেন। হারিয়ে যাওয়া বা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া সেই সব উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকজন তারকা অভিনেতাদের নিয়ে এই ফিচার।

একটি সিনেমা একজন শিল্পীকে বছরের পর বছর বাঁচিয়ে রাখে। এজন্য প্রতিটি শিল্পী চায় সিনেমা করতে। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমও ধরা হয় সিনেমাকে। বাংলাদেশের সিনেমায় অনেক শিল্পী অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ নেই। সেই সব তারকা অভিনয় শিল্পীরা না থাকলেও তাদের কাজ ঠিকই রয়ে গেছে। এখনো তাদের কাজ দর্শকরা দেখেন। হারিয়ে যাওয়া বা পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া সেই সব উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকজন তারকা অভিনেতাদের নিয়ে এই ফিচার।

আনোয়ার হোসেন: এ দেশের সিনেমাকে যারা সমৃদ্ব করেছেন-আনোয়ার হোসেন তাদের অন্যতম। কত শত সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন তার হিসেব নেই। অভিনয়ের বটবৃক্ষ তিনি। যে কোনো চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন শতভাগ। কখনো ছিলেন নায়ক, কখনো ভাই, কখনো বাবা, কখনো রাজা, কখনো জমিদার। সব রকম চরিত্রে মানিয়ে যাওয়া একজন নিখুঁত শিল্পী তিনি।

কেবলমাত্র ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমা দিয়েই জয় করে নিয়েছেন  বাঙালির মন। আজও সিনেমাপ্রেমী বাঙালিরা তাকে ‘নবাব’ হিসেবেই  জানেন।

তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী সিনেমার তালিকা করলে অসংখ্য নাম চলে আসবে। একটা সময়ে তিনি নায়কও ছিলেন। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের নাম নিতেই তার নাম উঠে আসে অনায়াসে।

আজিম: আজিম ছিলেন নায়ক। ষাটের দশকের সিনেমায় যে কজন নায়ক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন আজিম তাদের একজন ছিলেন। তার অভিনীত অনেক জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। ষাটের দশক থেকে শুরু করে সত্তরের দশক পুরোটা সময় জুড়ে নায়ক ছিলেন আজিম। ওই সময়ের সব জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নায়ক  হিসেবে। ‘হারানো দিন’, ‘ডাকবাবু’, ‘সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামান’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘ভানুমতি’সহ অনেক সিনেমার নায়ক ছিলেন তিনি।

উর্দু সিনেমারও নায়ক ছিলেন আজিম। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মাঝে আজও তিনি অমর হয়ে আছেন।

রহমান: রহমান ছিলেন ষাটের দশকের নায়ক। রহমান ও শবনম জুটির হিট সিনেমা আজও দর্শকদের মনকে ছুঁয়ে যায়। রহমান অভিনীত সাদাকালো যুগের সিনেমাগুলো আজও তাকে মানুষের মনে জায়গা দিয়ে রেখেছে।

‘হারানো দিন’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’সহ আরও অনেক সিনেমার নায়ক ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে রহমান ও শবনম ছিল আলোচিত জুটি। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে রহমান নামটিও লেখা থাকবে বহুদিন।

গোলাম মুস্তাফা: অসম্ভব মেধাবী একজন অভিনেতার নাম গোলাম মুস্তাফা। তাকে বলা হয়ে থাকে শিল্পীদেরও শিল্পী। নায়ক, খলনায়ক, এমনকি, যে কোনো চরিত্রের জন্য পারফেক্ট শিল্পী ছিলেন তিনি। তার মতো শিল্পী কমই এসেছে সিনেমায়।

‘রাজধানীর বুকে’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘দেবদাস’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘রূপালি সৈকতে’সহ বহু আলোচিত ও প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে তার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য।

রাজ্জাক: তাকে বলা হতো নায়করাজ রাজ্জাক। টানা চার দশকেরও বেশি সময় এদেশের সিনেমায় রাজত্ব করেছেন তিনি। ষাট, সত্তর ও আশির দশক নাগাদ তিনি ছিলেন এদেশের সিনেমার নায়ক।

নায়ক, পরিচালক ও প্রযোজক— এই তিনটিতেই সফল ছিলেন তিনি। কী রোমান্টিক, কী সামাজিক, কী অ্যাকশন— সব ধরনের সিনেমায় রাজ্জাক অনবদ্য অভিনয় করেছেন।

‘মধু মিলন’, ‘অবুঝ মন’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘রংবাজ’সহ তিনশরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই শিল্পী। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে তিনি বড় একটি আসন গড়ে নিয়েছেন দর্শকদের মাঝে।

জসিম: সত্তর দশকের শুরুতে সিনেমায় আসেন জসিম। নায়ক আজিমের হাত ধরেই সিনেমায় আগমন ঘটে তার। খলনায়ক হিসেবে সফলতা পাওয়ার পর জসিম হঠাৎ করেই নায়ক হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন। যা ছিল এ দেশে ব্যতিক্রম।

এক সময় সামাজিক সিনেমায় তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আবার অ্যাকশন সিনেমাতেও জসিম ছিলেন নম্বর ওয়ান অভিনেতা।

‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমাটি জসিমকে দিয়েছে ব্যাপক খ্যাতি। শাবানার সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক সামাজিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। জসিম একজন মুক্তিযোদ্বাও। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

খান আতা: একাধারে অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার, সংগীতপরিচালক— কতোই না কাজ করেছেন তিনি। ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ সিনেমায় নায়ক ছিলেন তিনি। আবার ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমার পরিচালক ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘জীবন থেকে নেয়া’ আলোচিত সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অনায়াসে বলা চলে হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে খান আতা একজন।

শওকত আকবর: ষাটের দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন শওকত আকবর। সেই সময়ে নায়ক হিসেবে অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। আবার সহ-অভিনেতা হিসেবেও অভিনয় করেছেন। ‘অবুঝ মন’-এর মত বিখ্যাত সিনেমায় রাজ্জাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘আপন দুলাল’সহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। একজন পরিচালকও ছিলেন শওকত আকবর।

আালোচিত উর্দু সিনেমা ‘পুনম কি রাত’সহ অনেকগুলো উর্দু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন তিনি। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমায় রাজার চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন চিকিতসক। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে তিনিও একজন সফল সিনেমা শিল্পী।

খলিল: খলিলকে একটা প্রজন্ম চেনেন খলনায়ক হিসেবে। মূলত  তিনি ছিলেন জাত অভিনেতা। শুরুটা করেছিলেন নায়ক হিসেবে। ‘সংগম’, ‘সোনার কাজল’, ‘বেগানা’, ‘ভাওয়াল সন্নাসী’সহ বেশ কিছু সিনেমার নায়ক ছিলেন খলিল। পরে অবশ্য খলনায়ক হিসেবেই বেশি পরিচিতি পান।

চারশরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করা খলিল সিনেমা জগতের সফল শিল্পী। আজও হারিয়ে যাওয়া তারকার নাম নিলে তার নামটি উজ্জল হয়ে সবার সামনে আসে।

হুমায়ুন ফরীদি: একজন সফল ও পরিপূর্ণ শিল্পী বলা হয় হুমায়ুন ফরীদিকে। তিনিও নায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। নায়ক হিসেবে তার অভিনীত একমাত্র সিনেমার নাম ‘দহন’। পরে যদিও খলনায়ক হিসেবেই বেশি পরিচিতি পান এবং সফলতার চূড়ান্ত শিখরে অবস্থান করেন। অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেন এই শিল্পী। হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে তিনিও একজন।

বুলবুল আহমেদ: সাদাকালো যুগের সফল আরেক নায়ক বুলবুল আহমেদ। তাকে একসময় ‘দেবদাস’ নামে ডাকা হতো। কেউ কেউ তাকে ডাকতেন ‘মহানায়ক’ বলেও। ‘দেবদাস’ সিনেমায় তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও প্রশংসিত হন। আজও তিনি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে রয়ে গেছেন তার কালজয়ী কিছু সিনেমা দিয়ে।

জাফর ইকবাল: ঢাকাই সিনেমার হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে আলোচিত ও প্রশংসিত আরেক শিল্পী জাফর ইকবাল। যিনি নায়ক ও গায়ক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ‘নয়নের আলো’ সিনেমাটি এই প্রজন্মের কাছেও জনপ্রিয়। সেখানে তিনি নায়ক ছিলেন। প্রথম সিনেমায় নায়িকা হিসেবে পান কবরীকে। সিনেমার নাম ছিল ‘আপন পর’। প্রায় দেড়শ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। বেশিরভাগ সিনেমায় তিনি নায়ক ছিলেন। তাকে চিরসবুজ নায়ক বলা হতো।

মান্না: ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ বলা হতো মান্নাকে। নায়কদের মধ্যে অকালে যে কজন মৃত্যুবরণ করেছেন তার মধ্যে মান্না একজন। তিনশরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ছিলেন পরিচালকও। ‘কাশেম মালার প্রেম’ তার ক্যারিয়ার বদলে দেয়। ‘আম্মাজান’ সিনেমটি তার জীবনের অন্যতম সফল সিনেমা।

সোহেল চৌধুরী: ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়ক সোহেল চৌধুরী  সিনেমায় নাম লেখান আশির দশকে। এক এক করে অনেক সিনেমা করেন। আততায়ীর গুলিতে মারা যান তিনি।

সালমান শাহ: নব্বই দশকের সবচেয়ে আলোচিত নায়কের নাম সালমান শাহ। এ দেশের সিনেমায় এতো অল্প দিনের ক্যারিয়ারে এতো জনপ্রিয়তা কম নায়কই পেয়েছেন। যে রকম অল্প দিনে সফলতা পান, সেই রকম অল্প দিনেই বিদায় নেন পৃথিবী থেকে। ‘কেয়ামত  থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটি এখনো দর্শকরা আগ্রহ নিয়ে দেখেন। ঢাকাই সিনেমার হারিয়ে যাওয়া তারকাদের মধ্যে সালমান শাহ আজও রয়ে গেছেন ভক্তদের হৃদয়ে।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago