তামাক চাষে বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের

ধান কিংবা সব ধরনের সবজি চাষে প্রত্যাশিত লাভ পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে অনীহা প্রকাশ করলেও তামাক কোম্পানির ফাঁদে আটকে তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ, তামাক কোম্পানিগুলো তাদের তামাক চাষে বাধ্য করছে। এই ফাঁদে ঝুলিয়ে রাখতে এসব কোম্পানি আগে বিনামূল্যে বীজ দিয়েছে, আর এখন দিচ্ছে সার।
গত বছর লালমনিরহাটে ৮০ হাজারে বেশি বিঘা জমিতে তামাক চাষ হয়েছিলো (সূত্র: জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর)। ছবি: এস. দিলীপ রায়

ধান কিংবা সব ধরনের সবজি চাষে প্রত্যাশিত লাভ পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে অনীহা প্রকাশ করলেও তামাক কোম্পানির ফাঁদে আটকে তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ, তামাক কোম্পানিগুলো তাদের তামাক চাষে বাধ্য করছে। এই ফাঁদে ঝুলিয়ে রাখতে এসব কোম্পানি আগে বিনামূল্যে বীজ দিয়েছে, আর এখন দিচ্ছে সার।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর জামুরটারী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫৮) বলেন, ‘বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ধান ও সবজি চাষ তামাক চাষের চেয়ে বেশি লাভজনক। তামাক চাষে অনীহা এসেছে, কিন্তু তামাক কোম্পানির চাপের কারণে তামাক চাষে প্রস্তুতি নিয়েছি।’

‘একটি তামাক কোম্পানি আমাকে দেড় একর জমিতে তামাক চাষের কার্ড দিয়েছে। কিন্তু, এ বছর অর্ধ একর জমিতে তামাক চাষের কোনো আগ্রহ নেই। আগে ধানসহ সবজির তেমন দাম ছিলো না, তাই ক্ষতিকারক জেনেও তামাক চাষ করেছিলাম,’ বলেন তিনি।

বত্রিশ হাজারী গ্রামের কৃষক রমনী কান্ত বর্মণ (৫৫) বলেন, ‘আমি তামাক চাষ করতে আর আগ্রহী নই। তামাকের পরিবর্তে ধান ও সবজি চাষ করতে চাই। কিন্তু, তামাক কোম্পানি কার্ড দিয়েছে বলে তামাক চাষে বাধ্য করছে। আমাকে তামাক কোম্পানি বীজ ও সার দিয়েছে বিনামূল্যে। আমার দুই একর জমিতে তামাক চাষের কার্ড আছে, কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক একর জমিতে তামাক চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

‘তামাক চাষে আমরা যে পরিমাণ পরিশ্রম করি সে তুলনায় লাভবান হই না। তামাক আমাদের জমির ও স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে,’ বলেন একই গ্রামের কৃষক আলিম হোসেন (৬২)।

আলিম হোসেন আরও বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলো আমাদের বাধ্য না করলে আমরা তামাক চাষ থেকে বেরিয়ে আসতো পারব। গত বছর ৯ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করলেও এ বছর তিন বিঘা জমিতে তামাক চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

একটি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা চাকরির সুবাদে কোম্পানির নির্দেশনা মেনে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করি। গত বছরগুলোতে কৃষকদের তামাক চাষে খুব আগ্রহ ছিলো। কিন্তু, এ বছর ধানসহ অন্য ফসলের বাজারমূল্য প্রত্যাশিত থাকায় তামাক চাষে তারা আগ্রহী হচ্ছেন না। বিনামূল্যে বীজ, সার এমনকি সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে আগ্রহী করে কোম্পানিগুলো। কিন্তু, তাদেরকে বাধ্য করা হয় না।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ‘গত বছর লালমনিরহাট জেলায় ৮০ হাজারে বেশি বিঘা জমিতে তামাক চাষ হয়েছিলো। তার আগের বছর ২০১৮তে হয়েছিল ৯০ হাজার বিঘা জমিতে। এ বছর তামাক চাষ গত বছরের চেয়ে অর্ধেকের কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালিয়েন্স’র লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সদস্য খোরশেদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কৃষি অফিসের তথ্যের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে জেলায়। তামাক কোম্পানিগুলোকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এবং কৃষকের সঙ্গে সমন্বয় থেকে বিরত রাখতে পারলে তামাক চাষ কমবে।’

জেলায় ৬টি তামাক কোম্পানির দৌরাত্ম্যর কারণে কৃষকরা তামাক চাষের ফাঁদ থেকে বের হতে পারছেন না বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তামাক চাষে কৃষকদের অনুৎসাহী করে তামাক চাষ কমাতে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে তামাক কোম্পানিগুলোর কর্মযজ্ঞ বন্ধ করার অনুমতি চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকদের মাঝে এখন সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং তামাকের জ ধান, সবজি, সরিষা চাষ শুরু করেছেন। তামাক চাষ বন্ধ হলে তামাক চাষের জমিগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে খাদ্য শস্য পাওয়া যাবে।’  

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago