পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সাক্ষাৎকার: কানাডায় সরকারি চাকুরেদের বাড়ি কেনা প্রসঙ্গে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কানাডার ‘বেগম পাড়া’ বারবার আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে নিয়ে কানাডায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে বড় বড় বাড়ি কেনা হয়েছে, যেসব বাড়িতে মূলত তাদের স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন। যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচিতি পেয়েছে বেগম পাড়া নামে। অভিযোগ বা সন্দেহ ছিল মূলত রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে।

এই প্রথম দেশের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডায় বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনা বিষয়ে কথা বললেন। জানালেন বাড়ি কেনার তালিকায় রাজনীতিবিদরা নন, এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের সরকারি চাকুরেরা। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার সকালে টেলিফোনে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

 

দ্য ডেইলি স্টার: কানাডাতে বাংলাদেশের সরকারি চাকুরেরা বড় বড় বাড়ি কিনেছেন, আপনি গতকাল এরকম কিছু তথ্য উল্লেখ করে কথা বলেছেন। সেটাই একটু বিস্তারিত জানতে চাইছি।

আবুল কালাম আব্দুল মোমেন: আপনারা কাগজে কানাডার যে বেগম পাড়ার কথা লেখেন, সেখানে বাংলাদেশের কাদের কাদের বাড়ি আছে, এমন একটা তথ্য আমরা গোপনে সংগ্রহ করেছি। নন-অফিসিয়ালি এই তথ্য আমরা নিয়েছি। এটা ভেরিফাইড তথ্য নয়। একজন প্রবাসী বাংলাদেশি এই তথ্য আমাদের দিয়েছেন। সেখানে বেশ অবাক করা তথ্য পাওয়া গেছে। কারণ আমাদের সচরাচর ধারণা যে, এগুলো হয়তো রাজনীতিবিদরা করেন। কিন্তু, সেখানে দেখা গেল এদের অধিক সংখ্যক সরকারি চাকরি করেন। অবসর নিয়েছেন বা এখনো চাকরিতে আছেন, তারা বাড়ি কিনেছেন। তাদের ছেলে-মেয়েরা সেখানে থাকেন বড় বড় বাড়িতে। কিছু বাড়ি কিনেছেন আমাদের ব্যবসায়ীরা।

সামথিং ইন্টারেস্টিং। সরকারি অফিসারদের পরিচিতি তো দিনে আনেন, দিনে খান। এরমধ্যে বিদেশে কানাডাতে বাড়ি কিনলেন! তারা এটা আসলে কীভাবে করেছেন, তা আমরা জানি না। হয়তো তাদের ক্রেডিট রেটিং ভালো। আপনি জানেন যে, উত্তর আমেরিকায় ক্রেডিট রেটিং ভালো থাকলে ঋণ সুবিধায় বাড়ি কেনা খুব সহজ। ডাউন পেমেন্ট অনেক কম দিয়েও বাড়ি কেনা যায়। আই ডোন্ট নো। এই জন্যে ইটস নট এ বিগ ইস্যু। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি।

ডেইলি স্টার: তথ্য আপনারা নন-অফিসিয়ালি পেয়েছেন। কিন্তু, তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি তো সরকারের একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত?

আব্দুল মোমেন: আমরা জানতে চাচ্ছি, পজিশন কী। প্রায়ই তো পত্রপত্রিকায় দেখি, টাকা পাচার হচ্ছে। তবে, আমি কিন্তু টাকা পাচার বিষয়ে বলতে পারব না। এটা সম্ভব যে, তারা হয়তো বিদেশেও আয় করেছেন। আই ডোন্ট নো।

ডেইলি স্টার: কাজটি তো আপনারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই করছেন?

আব্দুল মোমেন: উই ওয়ান্ট টু ইনভেস্টিগেট, কী আসলে হচ্ছে। কিন্তু, তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন। মাঠে নেমে দেখা যাচ্ছে যে, তথ্য সহজে পাওয়া যায় না।

ডেইলি স্টার: কিন্তু, সরকারিভাবে চেষ্টা করলেও কি তথ্য পাওয়া যায় না?

আব্দুল মোমেন: না, সে দেশের সরকার এখানে কোনো তথ্য দেয় না। ইউ হ্যাভ টু ডু কেস বাই কেস। আপনি যদি শোনেন যে ওমুক জায়গায় ওমুকের বাড়ি আছে, তবে ওয়েবসাইটে গিয়ে খুঁজে বের করতে হবে। সরকার আপনাকে এসব তথ্য দিবে না।

ডেইলি স্টার: সরকারিভাবে বাংলাদেশ যদি এ সংক্রান্ত তথ্য কানাডা সরকারের কাছে চায়, তা পাওয়া কি খুব কঠিন?

আব্দুল মোমেন: যথেষ্ট কঠিন। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে একজন আমেরিকানের কত টাকা আছে, তা জানা সম্ভব। কারণ বাংলাদেশ সরকার একটি চুক্তিতে সই করেছে যে, যদি আমেরিকান কোনো নাগরিক বাংলাদেশে বাড়ি কেনেন কিংবা ব্যাংকে টাকা রাখেন কিংবা বিনিয়োগ করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক আইআরএসকে (আমেরিকান ইন্টারনাল রেভিনিউ সিস্টেম) জানাবে যে তার ওমুক নাগরিকের এখানে এই পরিমাণ টাকা আছে বা বিনিয়োগ করেছে। আর আমেরিকার আইনে আছে যদি তিনি ১০ হাজার ডলারের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকে রাখেন, তাহলে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে। ফলে তারা তাদের নাগরিকদের তথ্য অটোমেটিক পেয়ে যায়। অনেক দেশ এই চুক্তিতে রাজি হয়নি। কিন্তু, বাংলাদেশ এই চুক্তিতে রাজি হয়ে সই করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত ট্রান্সপারেন্ট। কিন্তু, বাংলাদেশের নাগরিক উত্তর আমেরিকায় টাকা রাখলে, তা আমাদের জানার সুযোগ নেই।

ডেইলি স্টার: একজন আমেরিকান বা কানাডিয়ান বাংলাদেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে সেই তথ্য আমরা সেই দেশের সরকারকে জানাচ্ছি। কিন্তু, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক সেসব দেশে টাকা রাখলে সেই তথ্য তারা আমাদের জানাচ্ছে না, তথ্য চাইলেও পাচ্ছি না।

আব্দুল মোমেন: আমরা তথ্য চাইলেও তারা দিতে পারবে না। কারণ উত্তর আমেরিকার ফেডারেল গভর্নমেন্ট এসব নিয়ে ডিল করে না।

ডেইলি স্টার: তার মানে এই যে বেগম পাড়া জাতীয় যেসব সংবাদ জানা যায়, এই প্রথম আপনারা বিষয়টি জানার বা বোঝার চেষ্টা করছেন?

আব্দুল মোমেন: আমরা জানার এবং বোঝার চেষ্টা করছি। ইটস ভেরি ইনিশিয়াল স্টেজ। আমরা জাস্ট বোঝার চেষ্টা করছি।

ডেইলি স্টার: যারা বাড়ি কিনেছেন বা কিনবেন, তাদের কাছে কি এই ম্যাসেজ যাচ্ছে যে, এগুলো এখন আর গোপন নাও থাকতে পারে।

আব্দুল মোমেন: নিশ্চয়ই যাবে। আপনারা যেহেতু পত্রিকায় লিখছেন, তারা একটু সতর্ক হবেন।

ডেইলি স্টার: কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা একটি আন্দোলন করছেন। তাদের সঙ্গে কি আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে?

আব্দুল মোমেন: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাঠানোর জন্যে যারা কানাডায় আন্দোলন করছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশ থেকে যারা কানাডায় টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা কয়েক মাস আগে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। জানতে চাইছি, সেই সব বাংলাদেশিদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ হয়েছে কি না?

আব্দুল মোমেন: না, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

6h ago