বেনাপোলকে ঘিরে শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট সক্রিয়

ফাইল ফটো

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলকে ঘিরে একটি শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতীয় ট্রাক ব্যবহার করে বিভিন্ন চোরাই পণ্য আনা হচ্ছে বাংলাদেশে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোলের বেশ কিছু চিহ্নিত ট্রাক ড্রাইভার প্রতিদিন রপ্তানি পণ্য বোঝাই করে ভারতে যায়। ফেরার পথে ভারতের বনগাঁও ও কলকাতার ট্রাক চালকদের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশি চালকরা ভারতীয় ওষুধ, কসমেটিকস, মাদক দ্রব্য, পোশাক, শাড়ী, খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতীয় ট্রাকের কেবিনে লুকিয়ে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসছে।

তারা জানান, আমদানিকৃত বৈধ রপ্তানি পণ্যের সঙ্গে এসব মালামাল আনা হচ্ছে। কখনো বন্দরের ট্রাক টার্মিনাল থেকে, আবার কখনো বন্দরের ভেতর থেকে চোরাইভাবে আনা এসব পণ্য খালাস করে দেওয়া হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাই গ্রুপের ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ্যালটেক এলুমিনিয়াম লিমিটেড ভারত থেকে ১২ টন ৯০৮ কেজি এলুমিনিয়াম আমদানি করে। চালানটি পরীক্ষার পর ৪৮ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। পরে, বন্দর থেকে ১৪টি ট্রাকে করে সেগুলো খালাস করা হয়।

তার একটি ট্রাকে বন্দর থেকে শাহীন হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি চালকের সঙ্গে কথা বলে ১৪ বেল কাপড় লোড দেয়। চালক লালন মিয়া কাপড় আমদানির কাগজ চাইলে শাহীন তাকে তাৎক্ষণিকভাবে কাগজ দিতে ব্যর্থ হয়।

এর মধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাপড়ের চালানটি আটক করে চালকের কাছে কাগজ চায়। চালক লালন কাগজ দেখাতে না পারায় এবং শাহীনকে খুঁজে না পাওয়ায় গোয়েন্দা দল বৈধ ও অবৈধ পণ্যসহ ট্রাকটি জব্দ করে।

অন্যদিকে, গত ১৮ নভেম্বর বিআরবি ক্যাবলসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারকের ছয়টি চালানের আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে একটি ভারতীয় ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসে। পাঁচটি চালানের পণ্য বন্দরের ৯ নম্বর শেডে আনলোড হয়।

পাওয়ারম্যান বাংলাদেশ লিমিটেডের পাঁচটি বক্সের অপর চালানটি বন্দরের ৪০ নম্বর শেডে আনলোডের জন্য যাওয়ার সময় বিজিবি ট্রাকটিকে থামায়। পরে, কাস্টমস ও বিজিবি যৌথভাবে ট্রাকটি তল্লাশি করে চালকের কেবিনের ভেতরে ক্রিম, চকলেট, মদ, জিরা, কিসমিস পায়। সেগুলোর বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয় ট্রাকের চালক। পরে, পাওয়ারম্যান লিমিটেডের বৈধ পণ্যসহ ট্রাকটি জব্দ করা হয়।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ্যালটেক এলুমিনিয়াম’র সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান ট্রিম ট্রেডের মালিক জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘সরকারকে ৪৮ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে কেন আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’

‘বন্দর একটি বৈধ বন্ডেড এরিয়া। এখানে কীভাবে চোরাচালান সিন্ডিকেট গড়ে উঠলো’, প্রশ্ন করেন তিনি।

জরুরি ভিত্তিতে বন্দরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ বহিরাগত লোকজনকে আটক করার দাবি জানান তিনি।

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে বৈধভাবে আমদানি করা পণ্যের ট্রাকে ড্রাইভারের কেবিনে চোরাই পণ্য পাওয়া যায়। এজন্য বৈধ পণ্যও আটক করা হচ্ছে।

‘কেন প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হবে, আমরা এর প্রতিকার চাই। বন্দরের ভেতর প্রতিটি শেডে অবৈধ বহিরাগত লোকজন আছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে’, বলেন তিনি।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে বৈধ আমদানিকারকরা প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জরুরি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা তদন্ত করা হবে।

তিনি আরও জানান, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমস’র পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

3h ago