চুয়াডাঙ্গায় ব্যাংক ডাকাতি

উপেক্ষিত নিরাপত্তা, অরক্ষিত কোটি টাকার লেনদেন

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উথলীতে গত ১৫ নভেম্বর দিনের বেলায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক থেকে নয় লাখ টাকা লুটের ঘটনায় কারা জড়িত তার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। আলোচিত এই ব্যাংক ডাকাতির পর প্রশ্ন উঠেছে উপজেলার ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও এর নিরাপত্তা নিয়ে।
chuadanga.jpg
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উথলীতে গত ১৫ নভেম্বর দিনের বেলায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক থেকে নয় লাখ টাকা লুটের ঘটনায় কারা জড়িত তার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। আলোচিত এই ব্যাংক ডাকাতির পর প্রশ্ন উঠেছে উপজেলার ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও এর নিরাপত্তা নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন জোরদার না। আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা যে সুরক্ষিত উপায়ে হওয়ার কথা এখানে তা একেবারেই নেই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। নিরাপত্তাকর্মীদেরও বেশিরভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় অস্ত্র।

পুলিশ বলছে, উথলীর ব্যাংক লুটের ঘটনায় তাদের এগুতে হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে, পদে পদে বাধার সন্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।

এলাকাটিতে কৃষি-ব্যবসার উন্নয়ন হওয়ায় ব্যাংকিং কার্যক্রমও বেশি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট লোকজন আসেন। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য মাধ্যমে লেনদেন করেন। এ ছাড়া, কৃষকরা কৃষি ঋণ নেন।

জীবননগর উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১২টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এ ছাড়া, ১৩টি এজেন্ট ব্যাংক এবং দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু আছে।

এর মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাসহ চারটি এজেন্ট ব্যাংক, উথলী গ্রামে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক, রায়পুর বাজারে একটি এজেন্ট ব্যাংক, হাসাদাহ বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাসহ দুটি এজেন্ট ব্যাংক এবং জীবননগর পৌর শহরে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাসহ তিনটি এজেন্ট ব্যাংক রয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে দুই শতাধিক মোবাইল ব্যাংকিং ইউনিট কার্যক্রম চালু রয়েছে। রয়েছে একাধিক ক্ষুদ্র ঋণ বাস্তবায়নকারী এনজিও।

উপজেলার আটটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখাসহ ১২টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র দুটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের শাখায় এবং চারটি বেসরকারি ব্যাংক শাখায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) আছে।

কোথাও কোথাও ব্যাংকের শাখাগুলোতে নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও বেশিরভাগই নিরস্ত্র। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরীও নেই।

বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পল্লী সেবা সংস্থার শাখা ব্যবস্থাপক এরাদুল হক জানান, ‘তার শাখা থেকে প্রায় ১০ কোটি ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছেন যার অধিকাংশ গ্রাহক কৃষক। তার শাখায় প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা কিস্তি আদায় হয়। দিন শেষে এই অর্থ তারা বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে এনজিওর জোনাল ও হেড অফিসে রির্পোট করেন। তিনি জানান পুরো কার্যক্রমের কোথাও নিরাপত্তার বিষয়টি প্রধান্য পায় না।’

উথলী বাজারের ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের স্বত্বাধিকারী সাইফুল হোসেন বলেন, ‘এজেন্ট শাখা নেওয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না, তাই লাগানো হয়নি।’

সম্প্রতি ডাকাতির শিকার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের উথলী শাখার ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অনেকবার বললেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আনেননি।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মুনিম জানান, ‘এসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সম্ভব হলে বাসাবাড়িতেও নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা লাগানো উচিত।’

চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্যাংক ডাকাতির পরে বিষয়গুলো সামনে এসেছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

8h ago