টিলা কেটে সরকারি স্কুলের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে

টিলা কাটার কাজ চলছে। ছবি: স্টার

পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ইসাছড়া গ্রামের অভ্যন্তরের টিলা কাটা হচ্ছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই টিলা কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

কুলাউড়া থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কমর্ধা ইউনিয়নের ইসাছড়া গ্রামের মাঠের এক পাশে উঁচু টিলার উপরে ইসাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঠিক তার নিচেই টিলা কাটার কাজ চলছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন টিলাটির কাছে রয়েছে। টিলাটি কেটে ওই অংশে নির্মিত হবে একটি পাকা দালান।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে টিলা কাটতে দেখা যায়। সেখানে একজন শ্রমিক এক্সভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে পাশের জায়গায় ফেলছিলেন।

টিলা কাটার কাজ চলছে। ছবি: স্টার

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সভেটরের চালক মো. আব্দুল রহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সহ-ঠিকাদার আব্দুল করিম টিলা কাটার জন্য আমাকে নিযুক্ত করেছেন। নতুন দালান তোলার প্রয়োজনেই টিলা কাটা হচ্ছে।’

টিলা কাটার অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি জানেন না বলে জানান।

সহ-ঠিকাদার আব্দুল করিম টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের পশ্চিম পাশে ৩০ ফুট দূরত্বে টিলাটি সামান্য কাটা হচ্ছে। শুধু এক পাশেই। অন্য পাশগুলোতে কাটা হয়নি। নতুন চারতলা ভবনের দুইতলা পর্যন্ত করা হবে। নতুন স্কেচ ম্যাপ অনুযায়ী টিলাটি সামান্য কাটা হয়েছে। এই কাজের ঠিকাদার জামাল উদ্দীন ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারসহ সবার উপস্থিতিতেই স্কেচ ম্যাপ অনুযায়ী কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে সয়েল টেস্টও করা হয়েছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি সহ-ঠিকাদার আব্দুল করিম।

টিলা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে ঠিকাদার মো. জামাল উদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার কোনো সাইটে টিলা কাটার কাজ হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০ অনুযায়ী, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। তবে, “অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে” অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যেতে পারে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় থেকে ইসাছড়ায় টিলা কাটার কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

টিলা কাটার কাজ চলছে। ছবি: স্টার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি নিজেই দেখেছি টিলাটি কাটা হচ্ছে। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত টিলা কাটার কাজ চলে। যেভাবে টিলা কাটার কাজ চলছে, মনে হলো যেকোনো সময় পাহাড় ধস হতে পারে। টিলাটি কাটায় বিদ্যালয়ের সামনের অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিতে যেকোনো সময় ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ রকম টিলা কাটার ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি।’

হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ও মৌলভীবাজার বাপার সংগঠক আ স ম সালেহ সোহেল জানান, টিলা কাটার কাজ চলছে এবং তারাও সেটি দেখেছেন। আজ সকাল থেকে আবার টিলা কাটার কাজ চলছে বলে তাদের কাছে খবর আছে। কিন্তু, টিলা কাটার কাজ বন্ধ করতে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানান তারা।

টিলা কেটে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হবে, এমন কাজ উচিত নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শরীফুল হক ও কুলাউড়া প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. মামুনুর রহমানও।

এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইসাছড়া টিলা কাটার খবর আমার জানা নেই। সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on interim government

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

8h ago