চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০ সেরে ১ মণ

গত মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে যশোরের এমএস সেলিম মেশিনারি নামে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

গত মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে যশোরের এমএস সেলিম মেশিনারি নামে এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

নথি অনুযায়ী তার আমদানিকৃত পণ্যের ওজন ২০ টন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা কায়িক পরীক্ষা করে এই চালানটিতে ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য সঠিক রয়েছে মর্মে প্রত্যয়ন করেন।

এই পরীক্ষার প্রতিবেদনে অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ যায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে। ফলে পুনরায় পরীক্ষা করে ঐ চালানে পণ্য পাওয়া যায় প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪১ টন।

প্রথম প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চালানটি খালাস দিলে সরকার প্রায় ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হত।

পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন দাখিলের অপরাধে প্রথম পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানকারী কর্মকর্তাকে গত অক্টোবরের শুরুর দিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কাস্টমস কর্মকর্তার ব্যক্তিগত লাভের আশায় অসাধু আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টদের একটি অংশের সঙ্গে জোট বেঁধে দুর্নীতি করার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এটি নয়।

২০১৮ সাল থেকে অদ্যাবধি খোদ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ তদন্তে ৫৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্তা পেয়েছে যারা রাজস্ব ফাঁকিতে আমদানিকারকদের সহায়তা করেছেন।

নথি অনুযায়ী, তাদের ছয় জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে, ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে ২৩ জনকে এবং বাকি ১৩ জনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুধুমাত্র কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কাস্টম হাউসে দুর্নীতি রোধ করা যেতে পারে। শৃঙ্খলা আনতে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলি সমাধান নয় বলেই মনে করেন তারা।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ৪৮ কর্মকর্তাকে বদলি করেছে যারা আমদানিকারকদের শুল্ক ফাঁকি দিতে সাহায্য করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তারা অনিয়মর সঙ্গে জড়িত থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্নীতি সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। শুল্ক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া এই অনিয়ম হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ কর্মকর্তা এই অনিয়মের সুবিধাভোগী। তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে?’

সম্প্রতি যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম জানান, আগে অসাধু কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকজন অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা এই ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তাদের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ছয় জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি এবং ৫০ জনেরও বেশি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

একজন ডেপুটি কমিশনার এবং দুজন সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে এই তিন বিসিএস কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ওই কর্মকর্তাদের একটি গুরুত্বহীন বিভাগে বদলি করা হয়েছে।’

দেশের আমদানি এবং রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশ পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব পণ্য থেকে সরকারের নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে দেশের সর্ববৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।

চলতি অর্থবছরে এখান থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ১৮ শতাংশ।

মে মাসে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ায় এনবিআর এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করে।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ৪২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যা এনবিআরের মোট সংগ্রহ দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকার প্রায় ২০ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago