ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতন মামলা স্ত্রীর, পাল্টা অভিযোগ মেয়রের
![Faridganj.jpg Faridganj.jpg](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/faridganj.jpg?itok=BtOXnj9r×tamp=1606059355)
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে চার দিন আগে মামলা দায়ের করেছিলেন তার প্রথম স্ত্রী সোনিয়া আক্তার।
সেই মামলাকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে আজ রোববার বিকালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাহফুজুল হক। গত আট বছর ধরে স্ত্রীর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার বলে উল্টো অভিযোগ করেন তিনি।
মাহফুজুল হক জানান, ২০১০ সালে তিনি প্রেম করে সোনিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েকদিন পর জানতে পারেন সোনিয়ার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল এবং একটি কন্যা সন্তান আছে। এসব জেনেও তিনি সোনিয়ার সঙ্গে সংসার করেন। এরইমধ্যে তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু তিনি সোনিয়ার সঙ্গে কখনও সুখী ছিলেন না। স্ত্রী সোনিয়ার অর্থলোভ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণে তিনি সর্বদা অশান্তিতে ছিলেন। প্রায়শই সামান্য কারণে তিনি সন্তানদের সামনে স্ত্রীর মারমুখী আচরণের শিকার হতেন।
মেয়রের দাবি, তিনি পুরুষ নির্যাতনের শিকার। যা কাউকে বলার মতো নয়।
তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের কথা কাউকে বলতেও পারতাম না। তবে মাঝে মধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে সোনিয়ার মা-বাবা কিংবা আত্মীয়স্বজনকে বলতাম। এ নিয়েও আমার ও আমার মা-বাবার ওপর চড়াও হতো সোনিয়া, অনেক গালিগালাজ করতো। প্রায়ই সবাইকে রেখে সে ঘর থেকে বের হয়ে চলে যেতো। এভাবে আট বছরে অনেক বার সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তবে সন্তানদের দিকে তাকিয়ে আমি তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতাম। সর্বশেষ ৯ মাস আগে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে তার বাবা তাকে মারধর করে। পরে সেখান থেকেও বের হয়ে এলে আমি তার এক চাচার বাসায় তার থাকার ব্যবস্থা করে দেই। পরে বাধ্য হয়ে আমি তার মৌখিক অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করি। কিন্তু এরপরও সোনিয়াকে ছাড়িনি। গত ১৭ নভেম্বর মেয়ের চিকিৎসার কথা বলে সে আদালতে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা দায়ের করে।’
মাহফুজুল হকের অভিযোগ, সামনে পৌরসভা নির্বাচন। কারও প্ররোচনায় পড়ে স্ত্রী সোনিয়া তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, ‘মামলার পুরো বিবরণ পড়লে যে কেউ নিশ্চিত হবে যে, এটি সাজানো মামলা। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসন তথা সরকারের কাছে এই মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চাই।’
জানা গেছে, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন মাহফুজুল হক। বর্তমানে তিনি ফরিদগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সোনিয়া।
মামলায় সোনিয়া উল্লেখ করেন, ২০১০ সালে মো. মাহফুজুল হকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সোনিয়ার বাবা মাহফুজুলকে স্বর্ণালংকার ও ঘরের সব আসবাবপত্র উপহার দেন। পরবর্তীতে ব্যবসার কথা বলে মাহফুজুল সোনিয়ার বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং সোনিয়ার এক বোন জামাইয়ের কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা ধার নেন। পরে সোনিয়া জানতে পারেন মাহফুজুল মাদকসেবী এবং পরকীয়ায় আসক্ত। প্রায়ই মাদক সেবন করে এসে মাহফুজুল তাকে মারধর করতেন।
বর্তমানে তাদের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। শুধু সন্তানদের মায়ায় এতো নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করে আসছিলেন সোনিয়া। কিন্তু মাহফুজুল আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তাকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে যান। এর মধ্যেই কুমিল্লার আলো নামের এক নারীর সঙ্গে মাহফুজুল পরকীয়ায় জড়িয়ে গেলে সোনিয়া আপত্তি জানান। কিন্তু এতে সোনিয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে কুমিল্লার ওই নারীকে বিয়ে করেন মাহফুজুল।
সোনিয়া বলেন, ‘আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২/৪ দিন পরপরই আমার বাবার কাছে আরও যৌতুক দাবি করতো মাহফুজুল। যৌতুক না দিতে পারায় আমার ওপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। মাহফুজুলের বাবা এই নির্যাতন দেখেও না দেখার ভান করেন, তিনি নীরবে মাহফুজুলের পরকীয়া সমর্থন করে যান। বর্তমানে আমি প্রায় আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এমন অবস্থায়ও মাহফুজুলের নির্যাতন থেমে থাকেনি। তাকে আরও পাঁচ লাখ টাকা না দিলে ঘরে থাকতে দেবে না এবং আলোকে নিয়ে সংসার করবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়।’
‘এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে মাহফুজুল আমাকে হত্যার জন্য গলা চেপে ধরে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মেরে আমাকে অচেতন করে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কোনো উপায় না দেখে আমি ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গেলে তারা আমাকে চাঁদপুর আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে সুবিচারের আশায় গত ১৭ নভেম্বর আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করি’, বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের একজন আইনজীবী বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৪ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
Comments