ট্রাম্প যা করছেন, যা করতে পারেন এবং পরিণতি: আলী রীয়াজের বিশ্লেষণ
ভোট গণনার মাঝপথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করলেন। সুস্পষ্ট ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর কখনো বলছেন, আমিই বিজয়ী হয়েছি। কখনো বলছেন, আমিই বিজয়ী হব। পরাজয় মানবেন না, বিজয়ী বাইডেনকে মেনে নিবেন না। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএসএ) একটু দেরিতে হলে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিশ্চিত হয়ে গেছে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুর ১২টার পরে তিনি আর প্রেসিডেন্ট থাকছেন না। ট্রাম্প তারপরেও পরাজয় স্বীকার করেননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন আচরণ নিয়ে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যম সরগরম। প্রত্যক্ষভাবে মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।
প্রফেসর আলী রীয়াজের পর্যালোচনা, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণে গোঁয়ার্তুমি ছাড়া আর কোনো ভিত্তি দেখছি না। তিনি অঙ্গরাজ্যগুলোর আদালতে গেছেন। এ পর্যন্ত আইনি যত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেষ্টা করেছেন, তার অধিকাংশই অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ট্রাম্পের পক্ষের লোকজনদের মামলা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। তার মানে হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়ে এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চেষ্টা, সেই চেষ্টায় তিনি সফল হননি। জিএসএ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার পর, ট্রাম্পের জন্য আর কোনো সুযোগ আছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
সফল না হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরছেন না। তার মতের সঙ্গে না মেলায় উচ্চপদস্থ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের পদচ্যুত করছেন। বিষয়টির ব্যাখ্যায় ড. রীয়াজ বলছিলেন, ‘প্রশ্ন আসছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং রাজনীতিবিদ ট্রাম্প এখন কী কী করতে পারেন? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে নির্বাহী আদেশ দিয়ে অনেক কিছু করতে পারেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের মধ্যেও জড়িয়ে দিতে পারেন। পেন্টাগন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের তিনি পদচ্যুত করতে পারেন। ইতোমধ্যে তিনি তা শুরু করেছেন। আশঙ্কা করছি আরও করবেন। এদের চাকরিচ্যুত করার ফলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে পড়বে। নতুন রাষ্ট্রপতি বাইডেন শুরুতে প্রশাসন পরিচালনায় সমস্যায় পড়বেন।’
‘পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আরও হয়ত নিবেন। তাতে বাইডেন প্রশাসন বিপদে পড়বে। ওপেন স্কাই ট্রিটি বা চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই চুক্তিটি ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাইডেনকে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হবে। এই চুক্তি আবার করতে হলে সিনেট ও হাউজের সম্মতি লাগবে। কংগ্রেস প্রত্যাহারের পক্ষে ছিল না। প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশে আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করতে পারেন, কিন্তু নির্বাহী আদেশে চুক্তিতে ফেরা যায় না। ট্রাম্প ধরে নিচ্ছেন সিনেট রিপাবলিকানদের হাতে থাকবে, সে কারণে বাইডেনকে পুনরায় এসব চুক্তিতে ফিরতে সমস্যায় পড়তে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের যে অঙ্গীকার বাইডেন করেছেন, তা করতে পারবেন না। পদে পদে বাইডেনের জন্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যাবেন ট্রাম্প।’
‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বা যুদ্ধাবস্থাও যদি তৈরি করা হয়, তবে বাইডেন তার প্রতিশ্রুত নিউক্লিয়ার চুক্তিতে ফিরতে পরবেন না। ইরাক বা আফগানিস্তান থেকে অপরিকল্পিতভাবে সৈন্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগেও বাইডেন বিপদে পড়বেন। আইএস, তালেবান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতার মুখোমুখি হবেন বাইডেন। ট্রাম্প সামনের দিনগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মূলত বাইডেনকে বিপদে ফেলার জন্য।
আমি খুব অবাক হব না, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানে আক্রমণ করে। ট্রাম্প সেটা সম্প্রতি বিবেচনাও করেছিলেন। মনে রাখতে হবে, জর্জ ডব্লিউ বুশ ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার আগে ইসরাইল ও ইসরাইলি লবি ইরান আক্রমণের চাপ দিয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। জর্জ বুশ সেটা শোনেননি। ইসরাইল ও ইসরাইলি লবির সেই চাপ এখনও সক্রিয়। ফলে ইরানে আক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তা করতে পারেন বাইডেনকে বিপদে ফেলার জন্য’, যোগ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
ট্রাম্পের আচরণ বা কার্যক্রম অনেকের কাছে পাগলামীপূর্ণ মনে হলেও ড. রীয়াজ তা মনে করেন না, ‘সবকিছু পাগলামি মনে করার কারণ নেই। ট্রাম্প যা করছেন, ভাবনা-চিন্তা করেই করছেন। রাজনীতিবিদ ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চাইছেন। তিনি যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন অতীতে কোনো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এই পরিমাণ ভোট পাননি। দলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় তিনি এটা ব্যবহার করতে চাইছেন, চাইবেন। তা করতে পারলে, দুই বছর পরে হাউজের নির্বাচনের সময় তিনি তার কট্টর সমর্থকদের মনোনয়ন দিতে পারবেন। এতে হাউজে তার একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে। এটা ট্রাম্পের প্রথম লক্ষ্য। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি বা তার পছন্দের কাউকে প্রার্থী করতে চাইছেন।’
‘তৃতীয়ত তিনি রিপাবলিকান দলকে আরও দক্ষিণপন্থী, আরও উগ্র, আরও কট্টরপন্থার দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন। রিপাবলিকান পার্টির কেউ এখন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছেন না। কারণ তারা জানেন এখন দলের পক্ষে মানুষের যে সমর্থন তা ট্রাম্পের কারণে। কাজগুলো ট্রাম্প অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে করছেন। তিনি দেখাতে চাচ্ছেন যে, তিনি আপোষহীন। তিনি কোনো প্রতিকূল অবস্থাতেই মনোবল হারান না। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে পারেন। দেখাতে চাচ্ছেন, অন্য যেকোনো রাজনৈতিক নেতার চেয়ে তিনি ভিন্ন। পরাজয়ের মুখেও তিনি সাহস দেখাতে পারেন’, দলে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি এসব করছেন বলে মনে করেন প্রফেসর রীয়াজ।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে থেকে যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আইনি পথে সফল হতে পারছেন না, তা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বেশ কিছু বিকল্প কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার চেষ্টা ছিল আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করা। ড. রীয়াজের বিশ্লেষণ, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমানে বিকল্প ছিল, সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভা যদি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফল পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়। প্রতিটি কাউন্টি থেকে ভোট গণনা ও সার্টিফাই হয়ে আসে। ইলেকটোরাল কলেজ ভোট সার্টিফাই করেন অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল বোর্ড। তারপর গভর্নর সার্টিফাই করে ফেডারেল গভর্নমেন্ট ও ন্যাশনাল আর্কাইভে পাঠান। ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের আগে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের রাজধানীতে উপস্থিত হয়ে ইলেকটররা ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন।
এই সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে ঠেকানোর বা দেরি করিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছিলেন। মিশিগান, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে তিনি এই চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারছিলেন না। যেমন ট্রাম্প মিসিগানের আইনসভার সদস্যদের হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসলেন। কিন্তু তারা ফেরার সময় বলে গেলেন, আইন অনুযায়ী তারা চলবেন। এতে ট্রাম্পের প্রত্যাশা পূরণ হলো না।’
‘যদি এই প্রক্রিয়াতে সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া যেত, তবে আইনসভা সদস্যরা বলতে পারতেন যেহেতু নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে সেহেতু ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আমরা নির্ধারণ করে দেব। সেটাও সব রাজ্যে সম্ভব ছিল না। কারণ গত বছর সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনা অনুযায়ী অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য ইলেকটরাল কলেজ ভোট বিষয়ক আইন করেছে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া দলের পক্ষেই যাবে ইলেকটোরাল ভোট। এখনও দু-একটি রাজ্য এমন আইন করেনি। শুধু তারাই হয়ত ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পরিবর্তন করতে পারতেন। ইলেকটোরাল ভোট নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে প্রতিনিধি সভায় অঙ্গরাজ্যের ভোটের বিষয়টি সামনে আসতো। সেক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের একটি করে ভোট আছে। অঙ্গরাজ্যের ভোটের হিসেবে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। তাহলে বেশি ভোট পেয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী হতে পারতেন। এগুলো সবই কাগজ-কলমের কথা। যার কোনো বাস্তব ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না’, বলছিলেন প্রফেসর রীয়াজ।
নির্বাচনের আগেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, ফল নির্ধারিত হবে আদালতে। পরাজয়ের পর তিনি আদালতে গেলেন, পরাজিত হলেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাবেন এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এ বিষয়ে প্রফেসর রীয়াজের বক্তব্য, ‘সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ নেই। ট্রাম্পের মামলাগুলো রাজ্যের আদালতে পরাজিত বা খারিজ হয়ে গেছে। রাজ্যের অধিকাংশ সুপ্রিম কোর্ট মামলা গ্রহণই করেনি। তার সুযোগ ছিল এখন ফেডারেল কোর্টে যাওয়ার। সেখানে যদি মামলা গ্রহণ করা না হয় বা গ্রহণ করা হয় বা শুনানি ও রায় হয়, তারপর তিনি যেতে পারবেন সুপ্রিম কোর্টের কাছে আপিল করতে। কিন্তু যে বিবেচনায় মামলাগুলো খারিজ হয়ে গেল, সেই বিবেচনায় সুপ্রিম কোর্ট এসব মামলা গ্রহণ করবেন, তা বলার কারণ নেই। গ্রহণ করলেও রায়ে ব্যতিক্রম কিছু আসার সম্ভাবনা দেখছি না। সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, তারা আইনের বাইরে যাবেন বা যেতে পারবেন না। যেসব আদালত থেকে মামলা খারিজ হয়ে গেল বা পরাজিত হলেন, সেসব অনেক আদালতের বিচারক রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের সময়ে ১৮০ জন বিচারক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের অনেকেই মামলা গ্রহণই করেননি। পরাজয় বা খারিজের কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব অভিযোগ করছেন, এখন পর্যন্ত তার পক্ষে কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি।’ এই সব চেষ্টা সফল হয়নি বলেই শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন।
সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরাজিত বা পদচ্যুত রাষ্ট্র প্রধানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা জেলে যান। এবারের মার্কিন নির্বাচনে বহু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা আছে। প্রেসিডেন্ট থাকার আইনি সুবিধায় মামলাগুলো থেমে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আছে তিনি যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্ট না থাকলে তার মামলাগুলো সচল হবে কি না, মার্কিন রাজনীতিতে এখন যা আলোচনার বিষয়।
ড. রীয়াজ বলছিলেন, ‘এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে, ট্রাম্প নিজে নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কি না? যেহেতু এমন কোনো ঘটনা কখনও ঘটেনি, আইনেও সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তিনি অন্য যে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন। ‘যে কেউ’র মধ্যে কি তিনি নিজে পড়েন? আমরা জানি না, আইনে কিছু বলা নেই। এ ক্ষেত্রে যদি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয় এবং সুপ্রিম কোর্ট যদি বলেন যে, তিনি নিজে নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন, তবে তিনি ফেডারেল ক্রাইম থেকে রক্ষা পাবেন। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও তার ফেডারেল পর্যায়ের ক্রাইম ক্ষমা করে দিতে পারেন। ট্রাম্প ১৯ জানুয়ারি পদত্যাগ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে তাকে ক্ষমা করতে পারেন।’
‘কিন্তু ট্রাম্প রাজ্য পর্যায়ের ক্রাইম থেকে রক্ষা পাবেন না। কারণ ফেডারেল গভর্নমেন্ট কোনো স্টেটকে আইন বা মামলা বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অধিকাংশ মামলা স্টেট অব নিউইয়র্কে। এর মধ্যে ট্যাক্স প্রতারণার মামলা আছে, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলা আছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইচ্ছে করলেও স্টেটের মামলা থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবেন না। সেই ক্ষমতা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নেই’, যোগ করেন ড. আলী রীয়াজ।
শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নয়, তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। প্রফেসর রীয়াজ বলছিলেন, ‘ফেডারেল গভর্নমেন্ট তাদের বিরুদ্ধে মামলা নাও করতে পারে। ট্রাম্পের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রে আইনি বা নীতি বহির্ভূত যে অভিযোগগুলো আছে, অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার যে বিষয়গুলো আছে, ফেডারেল গভর্নমেন্ট যদি মামলা নাও করে, স্টেট মামলা করতে পারে। ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জ্যারেড কুশনারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, যেমন ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে কনসালটেন্সি হিসেবে সাত লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ হস্তান্তর হয়েছে কোনো রাজ্যে। কাগজপত্রে যদি দেখা যায় যে মানি লন্ডারিংয়ের চেষ্টা হয়েছে, তবে স্টেট অব নিউইয়র্ক মামলা করতে পারে।’
আমেরিকার ইতিহাসে এমন নজীর নেই উল্লেখ করে ড. রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একটি নজিরবিহীন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে পরিবারের লোকজনদের নিয়োগ দিয়েছেন, ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে যেভাবে অযোগ্য আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এমনটা অতীতে কখনও হয়নি। আইনের শাসন আছে, এটা প্রমাণ করার জন্য হলেও মামলা করা জরুরি। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য তা হুমকি হিসেবে দেখা দিবে। যা ভালো উদাহরণ হবে না।'
Comments