বাগানের কথা বলে ম্রো জুম ভূমি দখলে নিয়ে হস্তান্তর

বাগান করার কথা বলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের জুম ভূমি দখলে নিয়ে একটি সংস্থাকে হস্তান্তরের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠী।
ছবি: সংগৃহীত

বাগান করার কথা বলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের জুম ভূমি দখলে নিয়ে একটি সংস্থাকে হস্তান্তরের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠী।

তারা বলছেন, ২০০৮ সালে জায়গাটিতে ফলের বাগান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দখলে নেন ক্য শৈ হ্লা। পরে সেটি তাদের না জানিয়ে একটি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেন।

অন্যদিকে জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রুর জানিয়েছেন, ‘বাগান করার জন্য না মূলত পর্যটনের জন্যই নাইতং পাহাড়ে খাস জায়গাটি বান্দরবান জেলা পরিষদ নিয়েছিল।’

‘তবে প্রথমে আমরা সেখানে বিভিন্ন ফলজ গাছ লাগিয়ে বাগান করেছিলাম,’ বলেন তিনি।

সম্প্রতি বান্দরবানের নাইতং পাহাড়ে ম্রো ভূমিতে সিকদার গ্রুপ ও সহযোগী একটি কল্যাণ সংস্থার পাঁচ তারা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে পাহাড়িরা।

সিকদার গ্রুপের ওই হোটেল নাইতং পাহাড়ে নির্মাণ হলে প্রত্যক্ষভাবে ম্রোদের চারটি পাড়া এবং পরোক্ষভাবে ৭০-১১৬টি পাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও গভীর উদ্বেগ জানান তারা।

লুলাইন মৌজার বর্তমান হেডম্যান চিংপাশ ম্রো জানান, ‘চেয়ারম্যানের দখলে থাকা ওই জায়গাটি ছিল ডলা ম্রো পাড়ায় বসবাসরত প্রায় বিশটি পরিবারের একমাত্র জুমের জায়গা। জায়গাটি চেয়ারম্যান দখলে নেয়ার পর থেকে ডলা ম্রো পাড়ার বাসিন্দারা পার্শ্ববর্তী অন্য মৌজায় বর্গা জমিতে জুম চাষ করে কষ্টে জীবনধারণ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। বাগান করার কথা বলে আমাদের না জানিয়ে আমাদের জুমের জায়গা অন্য কাউকে হস্তান্তর করে দিয়েছেন।’

চিংপাশ ম্রো বলেন, ‘নাইতং পাহাড়ের জুমের জায়গা একটি সংস্থাকে হস্তান্তর করে ম্রোদের উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন চেয়ারম্যান, আমরা এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাতিল চাই।’

এক যুগ আগে জায়গাটিতে ফলের বাগান করার কথা বলে জুম ভূমিটিতে কিছু ফলের চারা লাগানো হয় বলে জানান জমিটির কেয়ারটেকার মেনডন ম্রো (২৮)। ২০০৮ সালে ডলা পাড়ার কারবারি রুইতন ম্রোর ছেলে মেনডনকে জায়গাটির কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দেয় পাবর্ত্য জেলা পরিষদ।

‘আমার বাবাকে বলা হয়েছিল চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লাকে পাড়ার জুমের জায়গাটি বাগান করার জন্য দেয়া হলে আমাদের সেখানে চাকরি দেয়া হবে। চেয়ারম্যান আমাকে যখন মাস্টার রোলে জায়গাটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেন, আমার বয়স তখন ১৬,’ বলেন মেনডন।

‘প্রথমদিকে চেয়ারম্যান সেখানে কিছু আম, সফেদা এবং বিভিন্ন ফলের চারা লাগিয়েছিলেন’ বলেন মেনডন ম্রো। যিনি এখনও সেখানে কেয়ার টেকারের দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানান।

বাগান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জায়গাটি যখন চেয়ারম্যান নেন তখন লুলাইন মৌজার হেডম্যান ছিলেন কানফর ম্রো। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ক্য শৈ হ্লা কিংবা বান্দরবান জেলা পরিষদকে কোন প্রতিবেদন দিইনি। যদি কোন হেডম্যান প্রতিবেদন তিনি দেখান তা অবৈধ।’

এদিকে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা দাবি করেন, নাইতং পাহাড়ে কখনওই ম্রো জনবসতি ছিল না, এখনও নেই। যদিও একই সংবাদ সম্মেলনেই তিনি বলেন, স্থানীয় ম্রো নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই পরিষদের নামে নাইতং পাহাড়ে ২০ একর ৩য় শ্রেণি পাহাড় ২০১১ সালে বন্দোবস্তির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।

তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য ২০১২ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে পার্বত্য এলাকায় ভূমি বন্দোবস্ত কার্যক্রমে স্থগিতাদেশের শর্তাদি পূরণ না হওয়ায় মন্ত্রণালয় বন্দোবস্ত মামলাটি নিষ্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে জানায়। ফলে জায়গাটি পরিষদের নামে বন্দোবস্ত গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থেকে যায়।

ক্য শৈ হ্লা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় জেলা পরিষদ প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে না পারায় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি একটি সংস্থাকে জমিটি ৪০ বছরের জন্য লিজ দেয়।

লিজকৃত নাইতং পাহাড়ে বর্তমানে কোনো ম্রো জনবসতি নেই এবং পূর্বেও ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। এমনকি জমিটিতে পর্যটন হোটেল হলে ম্রো বসতি ও জুম ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি সঠিক নয় বলেও জানান চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।

এ বিষয়ে জানতে পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা কে বারবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

9h ago