দেশে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে: টিআইবি

দেশে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি বলছে, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের দৃশ্যমান অদক্ষতা, অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্পদ ও ক্ষমতার যোগসাজশসহ চলমান করোনা সংকটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যথাসময়ে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।

নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী ষোল দিনের কর্মসূচির প্রাক্কালে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ায় কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা মহামারি স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনে খুন হয়েছেন ২৩৫ জন নারী। একইসঙ্গে ধর্ষণের মতো পাশবিক অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের অভাবে ক্রমান্বয়ে তা মহামারির মতোই ছড়িয়ে পড়ছে।’

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০ বলবত থাকার পরও এসব আইনে দায়ের হওয়া মামলায় খুব কমই দোষীদের সাজা হয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি ৯টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের একটির হিসেবে প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৬০টি ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে মাত্র ১ শতাংশ তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানা যায়। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। যা আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক একটি চিত্র।’

বর্তমানে প্রায় ১৫ শত মামলা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করার মাধ্যমে বিচারহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারণ ভুক্তভোগী যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে থানা-পুলিশের কাছে যেতেই অনভ্যস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হয়, সেখানে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করা তাদের কল্পনারও অতীত বিধায় অনেকেই আইনের এই মারপ্যাঁচ ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। দুঃখজনকভাবে এক ধরনের ধারণার জন্ম হয়েছে যে, সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করতে পারলে নতুন কোনো ঘটনার ডামাডোলে মানুষ এক সময় ভুলে যাবে এবং শাস্তি এড়ানো সম্ভব হবে।’

২০২৫ সালের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সরকারের জাতীয় পরিকল্পনার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশের প্রাক্কালে আলোচিত নারী নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের অনেক ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তনু হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, ফেনীর সোনাগাজীর ঘটনা, সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার পেছনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অদক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতা, প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয়ের যে অশুভ আঁতাত দেশবাসী লক্ষ্য করেছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। ঢাকার কুর্মিটোলার ঘটনায় বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হলেও বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ঘটনা “জন পরিসর” আলোচনা থেকে হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে একটি বীভৎস ঘটনা আরেকটি বীভৎস ঘটনার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির বাতাবরণে প্রকৃত অর্থে দুর্বৃত্তরাই উৎসাহ পাচ্ছে।’

এমন বাস্তবতায় সরকারের ‘সংশ্লিষ্ট সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পাশাপাশি জনগণকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে, পাল্টাতে হবে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি’ বলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

সবাইকে সম্পৃক্ত করে নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে সার্বজনীন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকেও সব ধরনের সুরক্ষা ও সহায়তা প্রদান করতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago