বরগুনার হৃদয় হত্যাকাণ্ড

একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার দাবিতে আদালতে ঘুরছেন মা-বাবা

Borguna_Hridoy_26Nov20.jpg
বৃহস্পতিবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বরগুনা জেলা জজ আদালত চত্বরে ব্যানার হাতে দাঁড়ান হৃদয়ের স্বজনরা। ছবি: স্টার

ঈদুল ফিতরের দিন বিকালে বরগুনার গোলবুনিয়া এলাকায় পায়রা নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হৃদয় নামে এক কিশোরকে বেদম পিটিয়ে আহত করা হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ।

একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে ফিরোজা বেগম ও দেলোয়ার হোসেন দিনের পর দিন ঘুরছেন আদালত চত্বরে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বরগুনা জেলা জজ আদালত চত্বরে ব্যানার হাতে দাঁড়ান হৃদয়ের স্বজনরা।

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি গোলবুনিয়া এলাকায়। হৃদয়ের হত্যাকারী হেলাল মৃধার বাবার সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হেলালের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ২৫ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন বিকালে আমার ছেলেকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারপরও পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারছে না। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? কেন তারা আমার ছেলেকে হত্যা করল? আমি এর বিচার চাই।’

টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী হৃদয় মারা যাওয়ার পরে তার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায়। হৃদয় কারিগরি বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.০০ গ্রেড পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেলোয়ার হোসেন পেশায় রিকশাচালক। ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়াতে তারা বরগুনার চরকলোনি এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।

হৃদয়ের বন্ধু মিঠুন রায় জানায়, তারা সাত বন্ধু ঈদের দিন বিকালে পায়রা নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে হৃদয়ের এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়। পাশ থেকে কয়েক জন বাজে মন্তব্য করছিল। এর প্রতিবাদ করার কিছুক্ষণ পরেই ১০ থেকে ১৫ জনের সংঘবদ্ধ দল লাঠি নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা করে। বাধা দিতে গিয়ে আমরাও হামলা শিকার হয়েছি। এক পর্যায়ে হৃদয় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরগুনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে হৃদয়ের মৃত্যু হয়।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গোলবুনিয়ায় তরুণ-তরুণীরা বেড়াতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনীতিকের আত্মীয় ও তার সঙ্গীরা তাদের হেনস্থা করতো। সেই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটে।’

তদন্ত কার্যক্রমে ধীর গতির বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। শিগগির আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। এজাহারভুক্ত ২০ আসামির মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে নয় জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আদালতের আদেশের তাদের হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Portfolios of 7 advisers redistributed in major shakeup

Sk Bashir Uddin gets commerce, textile ministries; Farooki gets cultural affairs ministry

2h ago