স্মিথ-ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া
লক্ষ্যটা ছিল বিশাল। জিততে হলে নিজেদের রান চেজের নতুন রেকর্ডই করতে হতো ভারতকে। আর শেখর ধাওয়ান ও হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটে লড়াইটাও জমিয়ে দিয়েছিল তারা। তবে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি দলটি। নিজেদের মটিতে ক্রিকেট ফেরার দিনে জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভ স্মিথের জোড়া সেঞ্চুরিতে ভারত কে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অজিরা।
শুক্রবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতকে ৬৬ রানে হারিয়েছে ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৮ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এদিন প্রথমবারের মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পায় সমর্থকরা। যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঢুকতে পেরেছেন ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক দর্শক। তবে এর মধ্যেই আবার নিরাপত্তা বলয় ভেঙে মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়েন দুই প্রতিবাদী দর্শক। অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লা প্রকল্পের বিরোধিতায় কিছু কথা লেখা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রায় পিচের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তারা। পরে স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যান।
ম্যাচের শুরুতে সদ্য প্রয়াত ডিন জোন্সসহ ফিল হিউজের স্মরণে এক মিনিট পর নীরবতা পালন করা হয়। আর নিজেদের আদিবাসিদের সম্মান জানাতে বিশেষ জার্সি পরে খেলে অস্ট্রেলিয়া। ভারতও ১৯৯২ বিশ্বকাপ জার্সি পরে মাঠে নামে।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ফিঞ্চ। ডেভিড ওয়ার্নারকে নিয়ে ইনিংসের সূচনাটাও দারুণ করেন তিনি। তাদের ওপেনিং জুটিতেই আসে ১৫৬ রান। এরপর ওয়ার্নার আউট হলে সাবেক অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন ফিঞ্চ। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রান যোগ করেন তারা। এরপর শেষ দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ঝড়। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৩৭৪ রানের রেকর্ড সংগ্রহ করে দলটি। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ২ উইকেটে ৩৫৯ রান করেছিল তারা।
দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অধিনায়ক ফিঞ্চ। ঝড়ো এক সেঞ্চুরি তুলেছেন স্মিথও। ১২৪ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন ফিঞ্চ। মাত্র ৬২ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান স্মিথ। ১০৫ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চার ও ৪টি ছক্কা। ওপেনার ওয়ার্নার ৭৬ বলে করেন ৬৯ রান। পাঁচে নেমে টর্নেডো ব্যাটিং করেন ম্যাক্সওয়েল। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৯ বলে ৪৫ রানে আউট হন তিনি। শেষ ১০ ওভারে স্মিথ-ম্যাক্সওয়েলের দাপটে ১১০ রান তোলে দলটি।
ভারতের পাঁচ বোলারের মধ্যে ওভারপ্রতি ছয়ের নিচে রান দিতে পারেন কেবল মোহাম্মদ শামি। তিনি ৫৯ রানে নেন ৩ উইকেট। আর অস্ট্রেলিয়ার রান উৎসবের ম্যাচে বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ওয়ানডেতে ভারতীয় স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ডে নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। ১০ ওভারে ১ উইকেট নিতে তিনি দিয়েছেন ৮৯ রান। গত বছর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৮৮ রান দিয়েছিলেন তিনি।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে নিয়ে ভারতের শুরুটা ভালোই করেন ধাওয়ান। ৫৩ রানের জুটি গড়েন তারা। কিন্তু এরপর স্কোরবোর্ডে ৪৮ রান যোগ করতে ৪টি উইকেট হারায় তারা। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ২১ রান করতে পারেন। ছন্দে থাকা লোকেশ রাহুলের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান। তবে পঞ্চম উইকেটে ধাওয়ানকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ভারতকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। এ দুইজন স্কোরবোর্ডে ১২৮ রান যোগ করেন।
কিন্তু এরপরই রুদ্ররূপ ধারণ করেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। এ দুই ব্যাটসম্যানকেই বিদায় করেন তিনি। এরপর তুলে নেন রবিন্দ্র জাদেজাকেও। এরপর আর লড়াইয়ে ফিরতে পারেনি ভারত।
শেষ পর্যন্ত ৫৪ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান জাম্পা। ৩টি উইকেট পান জস হ্যাজলউড। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯০ রান আসে পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে। ৭৬ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ৮৬ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন ধাওয়ান। ১০টি চারের সাহায্যে এ রান করেছিলেন তিনি। সাইনি অপরাজিত থাকেন ২৯ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৭৪/৬ (ওয়ার্নার ৬৯, ফিঞ্চ ১১৪, স্মিথ ১০৫, স্টয়নিস ০, ম্যাক্সওয়েল ৪৫, লাবুশেন ২, কারি ১৭, কামিন্স ১; শামি ৩/৫৯, বুমরাহ ১/৭৩, সাইনি ১/৮৩, চাহাল ১/৮৯, জাদেজা ০/৬৩)।
ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৮/৮ (আগরওয়াল ২২, ধাওয়ান ৭৪, কোহলি ২১, আইয়ার ২, রাহুল ১২, পান্ডিয়া ৯০, জাদেজা ২৫, সাইনি ২৯*, শামি ১৩, বুমরাহ ০*; স্টার্ক ১/৬৫, হ্যাজলউড ৩/৫৫, কামিন্স ০/৫২, জাম্পা ৪/৫৪, স্টয়নিস ০/২৫, ম্যাক্সওয়েল ০/৫৫)।
ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)।
Comments