‘ঘামে ভেজা জামাটা শুকিয়ে তারপর ঢুকতাম, আমার কষ্টটা যেন বুঝতে না পারেন!’

‘তোমার কোনো দোষ নেই’ আ্যালবামের নেপথ্যে কাজ করা ১৬ জনকে সম্মান জানানো হয়। ছবি: স্টার

‘মালিবাগ থেকে কলাবাগান যাব। মেসে ভাড়া থাকি, কোনো ভালো বাহনে যাওয়ার মতো টাকা ছিল না কাছে। হেঁটে হেঁটে কলাবাগান যেতাম সুরকার, সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদের বাসায়। রোদে ঘেমে যেতাম, ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। তার বাসায় ঢোকার আগে ঘামে ভেজা জামাটা শুকিয়ে তারপর ঢুকতাম। আমার কষ্টটা যেন বুঝতে না পারেন সেই কারণে।’

কথাগুলো বলতে বলতে ২৫ বছর আগের দিনগুলোতে ফিরে গেলেন কণ্ঠশিল্পী মনির খান। এই ২৫ বছরের যাত্রায় ৪৩টা একক অ্যালবাম, ৩০০ এর বেশি মিশ্র আ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। তিন বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার তার কণ্ঠ কেঁপে কেঁপে উঠছিল!

মনির খানের গাওয়া প্রথম অ্যালবামের নাম ‘তোমার কোনো দোষ নেই’। এটি প্রকাশের ২৫ বছর হয়ে গেছে। অ্যালবামটি প্রকাশের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সর্বমোট ১২টা গান ছিল অ্যালবামটি জুড়ে। ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ গানটি সবচেয়ে বেশি শ্রোতাপ্রিয়তার পায়।

সে বছর আলোচনার শীর্ষে চলে আসে গানটি। মনির খান সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক করেন ১৯৯৯ সালে ‘সংসারের সুখ দুঃখ’ ছবিতে সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। এই গানটিও লেখেন মিল্টন খন্দকার।

‘তোমার কোনো দোষ নেই’ আ্যালবামের ২৫ বছরের যাত্রার সময় স্মরণ করার জন্য রাজধানীর কচিকাঁচার মেলা প্রাঙ্গণে সম্প্রতি হয়ে গেল মনির খান ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ আ্যালবামের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন মনির খানের সংগীত পিতা মিল্টন খন্দকার। আরও ছিলেন খ্যাতিমান তবলা শিল্পী মিলন ভট্টাচার্য, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ, গীতিকবি মো. ইউনুস আলী মোল্লা, মো. জহরুল হক, কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরীসহ অনেকেই।

মনির খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার প্রকাশিত প্রথম আ্যালবাম “তোমার কোনো দোষ নেই” তৈরির সময় অডিও আর্ট রেকর্ডিং স্টুডিওর যারা আমাকে ভালোবেসে স্টুডিওতে পানি, চা এনে দিয়েছেন, স্টুডিওর মাইক্রোফোন ঠিকভাবে এগিয়ে দিয়েছেন, ভাত এনে দিয়েছেন, পাশাপাশি বিউটি কর্নারের যারা অডিও ক্যাসেট নিয়ে বিভিন্ন দোকানে গেছেন, বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছেন, নেপথ্যের সেই ১৬ জন মানুষকে সম্মান জানাতে পেরে আমার ভালো লাগছে।’

মনির খান আরও বলেন, ‘যখন রাতের আঁধারে হারমোনিয়াম আর হ্যারিকেন নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হয় তখন শ্রদ্ধেয় ইউনুস আলী মোল্লার বাসায় উঠেছিলাম। সেই রাতে তার বাসায় ভাত খাওয়ার কথা, আশ্রয় পাওয়ার কথা আজীবন ভুলব না। অনেক শিখেছি তার কাছ থেকে।’

‘অঞ্জনা’ খ্যাত মনির খান বলেন, ‘এটা ১৯৯২ সালের কথা, গ্রাম থেকে বাবার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলাম ক্যাসেট করার জন্য। মিল্টন খন্দকারের কথায় আব্বার কাছ থেকে আনা সেই টাকা ফেরত দিয়ে এসেছি। সেই টাকা আব্বাকে ফেরত দিয়ে এসে তাকে নিশ্চিত করার পরেই তিনি আমার গান করেন। সেই মানুষটিকে আমার সংগীত পিতা বলব না তো কাকে বলবো!’

সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘দেশের সব এক নম্বর মানুষ মনির খানের আ্যলবামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অ্যালবাম ভালো না হয়ে কী উপায় আছে? তার বিনয় তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’

অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী বলেন, ‘মনির খান আমার মালিবাগের বাসায় তার গানের ক্যাসেট পাঠিয়েছিল। গান শুনে বলেছিলাম একদিন অনেক বড় হবি। বাকীটা দেখতেই পাচ্ছেন। মনির খান ২৫ বছরে যেসব জায়গায় ঘুরে এসেছে, সেসব জায়গায় এখনকার অনেক শিল্পীকে পাওয়াই যাবে না।’

Comments

The Daily Star  | English

Stocks fall on poor performance of large companies

Indexes of the stock market in Bangladesh declined yesterday on rising the day before, largely due to the poor performance of Islami Bank Bangladesh along with the large-cap and blue-chip shares amid sales pressures..Large-cap refers to shares which account for large amounts in market capi

1h ago