বাইডেন প্রশাসনের অধীনেই ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী সৌদি আরব
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের পর সৌদি আরবও ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে কি না, এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন চলছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপন বৈঠকের খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সৌদি উপদেষ্টা ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত) ‘মূলত মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের কারণে ইসরায়েল সম্পর্কিত একটি চুক্তি থেকে সরে এসেছেন।’
সৌদি সহযোগীদের বরাতে জার্নাল জানায়, যেহেতু ‘ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই এই মুহূর্তে বিদায়ী ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় যুবরাজ এই ধরনের কোনো চুক্তি করতে আগ্রহী নন।’
রিয়াদের এক কূটনীতিকের বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্সও একই পূর্বাভাস দিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ চুক্তি অন্যান্য ইস্যু, বিশেষত সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলো বাইডেন প্রশাসনের নজর থেকে দূরে রাখবে।
গত ২২ নভেম্বর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সৌদি যুবরাজ সালমানের গোপন বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মার্কিন চাপের ফলেই এই বৈঠক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠক বাইডেন প্রশাসনের জন্য বার্তা দিচ্ছে যে, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক উন্নত করার ক্ষেত্র এখন প্রস্তুত। অন্যদিকে, বৈঠকটি ইরানের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক জোট গড়ে তোলার বিষয়ে তেহরানকেও একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের আগেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইস্যুতে সৌদি নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে অসম্মতি জানিয়েছেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যবসা করতে ও ওই অঞ্চলে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জোট গড়ে তুলতে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে চান যুবরাজ সালমান।
গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে উড়োজাহাজ চলাচলের জন্য নিজেদের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল সৌদি আরব।
এদিকে, সৌদি সফর শেষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও ফক্স নিউজকে জানান, ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’র আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আরও আরব প্রতিবেশী দেশের সাধারণীকরণ চুক্তি হবে বলে আশা করেন তিনি।
পম্পেও বলেন, ‘আমি আরও সাধারণীকরণের ঘোষণা দেওয়ার আশা করি। সেটা পরবর্তী ৩০ দিন বা ৬০ দিন বা ছয় মাসের মধ্যে আসবে কি না, তা বলা মুশকিল। তবে, সফরের লক্ষ্য খুব স্পষ্ট এবং এটি আমেরিকান নীতিমালার দিক থেকে যৌক্তিক।’
‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’র অধীনে ইসরায়েল ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে সাধারণীকরণ চুক্তি সই করেছে। সুদানও ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার আগে সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে একটি চুক্তি হতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তির পরে, আমিরাতের কাছে উন্নত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দেয় আমেরিকা। সৌদি আরবও উন্নত মার্কিন অস্ত্র-শস্ত্রের জন্য একটি চুক্তিতে আগ্রহী। এটি বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে অর্জন করা সহজ হতে পারে। তাই বাইডেন ক্ষমতায় আসার আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন:
Comments