লিটনের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে চট্টগ্রামের জয়
টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাসের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস আর সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেনের ঝড়ে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পেয়েছিল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। লক্ষ্য তাড়ায় মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর শুরুও করেছিল তেড়েফুঁড়ে। আনিসুল ইসলাম ইমনের ফিফটির পর শেষদিকে ফরহাদ রেজা ও রনি তালুকদারের ক্যামিও ইনিংসে টানটান উত্তেজনা ছড়ায় ম্যাচে। সেই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে অপরাজিত রইল চট্টগ্রাম।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে চট্টগ্রাম। জবাবে পুরো ওভার খেলে রাজশাহী থামে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানে। ফলে ১ রানের নাটকীয় জয় পায় মোহাম্মদ মিঠুনের চট্টগ্রাম।
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা চট্টগ্রামের এটি টানা চতুর্থ জয়। অন্যদিকে, চার ম্যাচে রাজশাহীর এটি দ্বিতীয় হার। শেষ ওভারে ১৪ রানের সমীকরণ অল্পের জন্য মেলাতে পারেনি তারা।
জবাব দিতে নেমে কাঙ্ক্ষিত সূচনা পায় রাজশাহী। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামকে ২ ছক্কা হাঁকান শান্ত। শরিফুল ইসলামের পরের ওভারে ৩ চার মারেন আনিসুল ইসলাম ইমন। তাতে পঞ্চম ওভারে দলটির স্কোর পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ।
রাজশাহীর ৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটির ইতি টানেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন শান্ত। তিনি করেন ১৪ বলে ২৫ রান।
ছন্দ পেয়ে যাওয়া ইমন দ্বিতীয় উইকেটে সঙ্গী হিসেবে পান মোহাম্মদ আশরাফুলকে। তারা দুজনে যোগ করেন ৪৪ রান। তবে কমে আসে রানের গতি। আশরাফুল ১৯ বলে ২০ রান করে বাজে শটে আউট হন।
দ্রুত আরেক উইকেট হারায় রাজশাহী। ফিফটি পাওয়ার পর ইমন ফেরেন জিয়াউর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে। তার ৪৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ১ ছয়।
মিডল অর্ডারে ফজলে মাহমুদ ও শেখ মেহেদী হাসান ভালো একটি জুটি গড়লেও ফেরেন যুগপৎ। তারা যোগ করেন ২২ বলে ৩৭ রান। শরিফুলের বলে শেখ মেহেদী হন এলবিডব্লিউ। তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলের ঝড়ো ২৫ রান। মাহমুদকে বিদায় করেন মোস্তাফিজ।
শেষ ২ ওভারে রাজশাহীর দরকার দাঁড়ায় ২৭ রান। ১৯তম ওভারে ফরহাদ রেজা চার-ছয় হাঁকিয়ে জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। কিন্তু উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি।
শেষ ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজ বিদায় করেন নুরুল হাসান সোহানকে। পরের দুটি বল ডট। এরপর চতুর্থ বলে ছয় ও পঞ্চম বলে চার মেরে লড়াই জমিয়ে তোলেন রনি তালুকদার। তবে শেষ বলে ৪ রান দরকার হলেও তিনি নিতে পারেন ১২ রান।
চট্টগ্রামের হয়ে মোস্তাফিজ ৩৭ রানে নেন ৩ উইকেট। শরিফুল ২ উইকেট দখল করেন ৪১ রানে।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে চলমান বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংস গড়ে চট্টগ্রাম। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ওপেনার লিটন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৮ রান করেন ৫৩ বলে। আসরের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও এটি। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ৯ চার ও ১ ছক্কা মারেন তিনি।
শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন সৌম্য ও লিটন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে চট্টগ্রামের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৪ রান। সীমানায় একবার জীবন পাওয়া সৌম্য ফেরেন অষ্টম ওভারে। মুকিদুল ইসলামকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি। তাতে ভাঙে ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি। সৌম্য ২৫ বলে ৩৪ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
এরপর কিছুটা ছন্দপতন। মিঠুন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শামসুর রহমান সাজঘরে ফেরেন দ্রুত। ফলে একশো পার হওয়ার আগে ৩ উইকেট খুইয়ে ফেলে চট্টগ্রাম।
ম্যাচসেরা লিটনের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে সরে যায় চাপ। তিনি হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুখোমুখি হওয়া ৩৫তম ডেলিভারিতে। বাহারি সব শট খেলতে থাকা লিটন এক প্রান্তে ছন্দে থাকায় উইকেটে গিয়ে হাত খুলে মারার সুযোগ হয় মোসাদ্দেকের। তা হাতছাড়া করেননি তিনি।
চতুর্থ উইকেটে লিটন ও মোসাদ্দেক যোগ করেন ৪৪ বলে ৭২ রান। সাজঘরে ফেরার আগে ৪২ রান করেন মোসাদ্দেক। তার ২৮ বলের ইনিংসে ছিল সমান ২টি করে চার ও ছক্কা।
ইনিংসের শেষ ওভারে মোসাদ্দেকের পর সৈকত আলীকে ফেরানো মুকিদুল রাজশাহীর সবচেয়ে সফল বোলার। এই পেসার ৪ ওভারে ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট।
Comments