দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি: মহামারিতেও উৎপাদন-বিক্রিতে শীর্ষে
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) পাথর উৎপাদন ও বিক্রি সমানভাবে অব্যাহত রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে মহামারি আঘাত হানার পর থেকে উৎপাদিত পাথর ২২৫ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই কোম্পানিটি। এই সময়ে কোম্পানিটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তিন কোটি টাকা কর প্রদান করেছে।
খনিটি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত পেট্রোবাংলার একটি কোম্পানি। উত্তর কোরিয়ার একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির অধীনে ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদন শুরু করার পর থেকে এই খনিটি প্রথমবারের মতো লাভ করেছে গত বছর। এমজিএমসিএল ২০১৩ সালে জার্মানিয়া ট্রেস কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) সঙ্গে খনির উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য ছয় বছর মেয়াদি চুক্তি সই করে। যা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়।
ওই চুক্তি করার পর জিটিসি ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উৎপাদন শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানি পরবর্তী ছয় বছরে ৯২ হাজার টন পাথর উত্পাদন করার কথা ছিল। কিন্তু, কোম্পানিটি মাত্র ৩৭ হাজার টন পাথর উৎপাদন করে। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে এমজিএমসিএল ও জিটিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
এমজিএমসিএল ও জিটিসির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্য পেট্রোবাংলা সাত সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে। কমিটি তদন্তের পর দেওয়া প্রতিবেদনে উভয় কোম্পানিকেই দায়ী করে। একইসঙ্গে তাদের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য উভয় কোম্পানির জন্য একটি ধারাবাহিক নির্দেশিকা প্রদান করে।
গত বছরের নভেম্বরে পার্বতীপুর উপজেলায় বরপুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার এবিএম কামরুজ্জামান এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দেওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জিটিসির সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা আরও এক বছর বাড়ানো হয়। যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই। চুক্তি অনুযায়ী, কোম্পানিটিকে ১১ দশমিক ১০ লাখ টন কঠিন পাথর উত্পাদন করতে হবে এবং দুটি স্টপ উন্নয়ন করতে হবে।
জিটিসির অধীনে আট শ স্থানীয় খনিশ্রমিক ও ৭০ জন রাশিয়ান খনিশ্রমিক কাজ করেন। করোনা মহামারির কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে খনিটির উৎপাদন স্থগিত করা হয়। যে কারণে ১২ আগস্ট পর্যন্ত কোনো কঠিন পাথর উৎপাদন করা হয়নি। পরবর্তীতে এমজিএমসিএল ও জিটিসি উভয় কোম্পানির কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং খনি শ্রমিকদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হলে তাদের মধ্যে ২০ জনের করোনা শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
সবশেষে গত ১৩ আগস্ট থেকে তারা উৎপাদন পুনরায় শুরু করেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান এমজিএমসিএলের এমডি এবিএম কামরুজ্জামান। ‘গত ১৩ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জিটিসি সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন পাথর উৎপাদন করেছে। দৈনিক উৎপাদনের হার প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন’, বলেন এমডি।
এমডি আরও বলেন, ‘দৈনিক পাথর বিক্রি প্রায় একই রকম। আমাদের কোম্পানিটি এই করোনা কালেও ২২৫ কোটি টাকার উৎপাদিত পাথর বিক্রি করেছে। মূলত এপ্রিল থেকে পাথর বিক্রি বেড়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি প্রায় নয় লাখ টন পাথর বিক্রি করেছে।’
এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘দেশের কিছু মেগা প্রকল্প এমজিএমসিএলের পাথর ব্যবহার করছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু সেতুর রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য এমজিএমসিএলের কঠিন পাথর ব্যবহার করা হবে বা হচ্ছে।’
রাষ্ট্রপরিচালিত বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে এমজিএমসিএলের পাথর ব্যবহারের জন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবিএম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। আমাদের কোম্পানি সহজেই ১০ লাখ টনের বেশি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।’
এমডি জানান, বর্তমানে প্রত্যেক কর্মকর্তা এবং খনিশ্রমিকের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু আছে।
জিটিসির জেনারেল ম্যানেজার জাবেদ সিদ্দিকী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি বিভিন্ন কারণে চুক্তিতে উল্লিখিত পাথর উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু, মহামারিকালীন উৎপাদন চালিয়ে রাখা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।’
‘এ বছরের ১৩ আগস্ট উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো খনি শ্রমিক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়নি। তারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টন পাথর উৎপাদন করছেন’, যোগ করেন তিনি।
Comments