করোনা পরীক্ষায় নতুন সংকট

গতকাল সোমবার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য দাঁড়ানো লাইনে কোনো দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। ছবি: রাশেদ সুমন/আনিসুর রহমান

শীতের আগমনের সঙ্গে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। আর এ সময়েই কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ব্যবহৃত কয়েকটি আরটি-পিসিআর মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় প্রতিদিনের করোনা পরীক্ষার সংখ্যা এমনিতেই কম। তার মধ্যে এ ধরনের ঘটনা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের ১৭২টি হাসপাতালে ১৭৭টি আরটি-পিসিআর মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটি নষ্ট ছিল। কর্মকর্তাদের দাবি, এসব মেশিনে যে সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হতো, তা অন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ফলে, মেশিন বন্ধ থাকার কোনো প্রভাব করোনা পরীক্ষায় পড়েনি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান আকবর হোসেন জানান, গত ৩ ডিসেম্বর থেকে তিন দিন বন্ধ ছিল সেখানকার আরটি-পিসিআর মেশিনটি।

মেশিনটি ঠিক করা হয়েছে এবং আজ মঙ্গলবার থেকে আবার পরীক্ষা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো বরিশাল বিভাগে এটিই একমাত্র আরটি-পিসিআর মেশিন। এটি যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন পুরো বিভাগের পরীক্ষাই জটিলতার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের আরেকটি মেশিন প্রয়োজন।’

আরেকটি উদাহরণ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। জেলার একমাত্র আরটি-পিসিআর মেশিন রয়েছে এখানে। তবে, ইদানিং মেশিনটি ত্রুটিযুক্ত ও ভুল ফলাফল দিচ্ছে। কুমিল্লার সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ৩০ নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকার পর গতকাল সেখানে আবার শুরু হয়েছে পরীক্ষা।

গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের গেটে একটি নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘অনিবার্য কারণে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কোভিড-১৯ টেস্ট বন্ধ থাকবে।’

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে টানানো নোটিশ। ছবি: রাশেদ সুমন/আনিসুর রহমান

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক কর্মী জানান, সেখানকার আরটি-পিসিআর মেশিনটি কাজ করছে না। প্রতিদিন মেশিনে ১৮০ থেকে ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হতো বলেও জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেশিনগুলো মাঝে মাঝে কাজ করে না। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো মেরামতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। একটি আরটি-পিসিআর মেশিন মেরামত করতে দুই থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে।’

‘আরটি-পিসিআর মেশিন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। তা নাহলে ভুল ফলাফল দিতে শুরু করে’, যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানান, বরিশালের আরটি-পিসিআর মেশিনটি ইতোমধ্যে ঠিক করা হয়েছে। বাকিগুলোও খুব শিগগির মেরামত করা হবে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত আরটি-পিসিআর মেশিনগুলো দিনে একবার চালানোর কথা। কিন্তু, দেশে করোনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা এগুলো বহুগুণ ব্যবহার করছি। কাজেই মেশিনগুলোর কিছু সমস্যা হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তারপরও আমরা এগুলো চালিয়ে যাচ্ছি। পরীক্ষার চাহিদা মেটাতে অন্যান্য ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বে-নাজির আহমেদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিনের পরীক্ষার সংখ্যা কম। আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা দরকার। সংখ্যা এত কম থাকার মধ্যেই যদি আরটি-পিসিআর মেশিনগুলো কাজ না করে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। পরীক্ষার জন্য সবাই এগিয়ে আসছে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোগীদের পরীক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Shammo murder: DMP chief pledges to end probe within a week

Says case to be sent to a special tribunal after investigation

9m ago