শান্তর তাণ্ডবের জবাবে পারভেজের বিস্ফোরণ, রান তাড়ার রেকর্ড

parvez hossain emon
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম ইনিংস দেখেই যারা ম্যাচের ফলের একটা ছবি দাঁড় করিয়ে ফেলেছিলেন। নিশ্চিতভাবে তাদের এবার হতবাক হওয়ার পালা। নাজমুল হোসেন শান্তর উত্তাল করা সেঞ্চুরিতে ২২০ রানের চূড়ায় উঠেছিল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। সেই রানও মামুলি হয়ে গেল তরুণ পারভেজ হোসেন ইমনের বিস্ফোরণে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়ে দলকে জিতিয়েছেন তিনি।

দলের জিততে দরকার ছিল ৪, সেঞ্চুরি পেতে পারভেজেরও ৪। কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েই উল্লাসে মাতলেন যুব বিশ্বকাপজয়ী তরুণ। মাত্র ৪২ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছে ছাপিয়ে গেলেন তামিম ইকবালকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বিপিএলে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটি ছিল তামিমের। 

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলল চার-ছয়ের বৃষ্টি। রাজশাহীর ২২০ রান   ১১ বল বাকি  রেখেই তাড়া করে ফেলল ফরচুন বরিশাল। ম্যাচ জিতল  ৮ উইকেটে। তলানীতে থাকা দলটি দারুণ এই জয়ে প্লে অফে যাওয়ার আশাও টিকিয়ে রাখল। এর আগে চলতি বছরের বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ঢাকা প্লাটুনের ২০৫ রান শান্ত ঝড়ো সেঞ্চুরিতে পেরিয়ে জিতেছিল খুলনা টাইগার্স। সেই রেকর্ড পড়ে গেছে বেশ পেছনে।

মাত্র ৪২   বলে  ৯ চার , ৭ ছক্কায় বাঁহাতি পারভেজ অপরাজিত থাকেন ১০০ রানে।  মাত্র সপ্তম টি-টোয়েন্টিতে পান প্রথম সেঞ্চুরি। ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডব লীলার দিনে এদিন  দুই দল মিলিয়ে এদিন এলো ৪৪১ রান । ছক্কাই হলো ২৮টি।  উইকেটে ছিল মরা ঘাস। বল ব্যাটে আসছিল বেশ ভালো গতিতে। এমন পরিস্থিতিতে বোলাররা ছিলেন ভীষণ অসহায়। ১৬ বলে ২৬ করে তার সঙ্গে মাঠ ছেড়েছেন আফিফ। 

২২১ রানের পর্বত পেরুনোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম দুই ওভার একদম সাদামাটা যায় বরিশালের। থিতু হতে কয়েকটি বল খেলে ফেলেন তামিম আর সাইফ হাসান। তবে সাইফই শুরু করেন আগ্রাসন। তার ব্যাটে কাঙ্ক্ষিত শুরু চলে আসে।

২টি করে চার-ছক্কায় পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর পর বিদায় সাইফের। তার ১৪ বলে ২৭ রানের ইনিংস শেষ হয় মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে। এরপর যেন শুরু হয় আসল খেলা। ফজলে মাহমুদ রাব্বির বাউন্ডারি লাইনে তামিমের ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর খুনে হয়ে উঠে তার সঙ্গে পারভেজ হোসেন ইমনের জুটি। মাত্র ৫৩ বলে চলে আসে ১১৭ রানের জুটি

জুটিতে বেশি আগ্রাসী ছিল পারভেজের ব্যাটই। এই বাঁহাতি পুল, ড্রাইভে, ফ্লিকে মাত করে রাখেন। স্লোয়ার বলগুলো পিক করেছেন দারুণ মুন্সিয়ানায়। জোরের উপর একের পর এক  বল আছড়ে ফেলেন বাউন্ডারির ওপারে।  ৩৭ বলে ৫৩ করে তামিম রান আউট হলেও পারভেজ ছিলেন অবিচল। আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকি কাজ সেরেছেন তিনি। কব্জির কাজে তাক লাগিয়েছেন, জায়গা বের করে বারবার হয়েছেন খুনে। তার অমন জ্বলে উঠার দিনে আড়ালেই পড়ে গেছে কি হয়ে গেছে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে।

অথচ টস হেরে আগে ব্যাটিং পেয়ে স্বস্তিতেই ছিলেন শান্তরা। আনিসুল ইসলামকে নিয়ে ওপেন করতে গিয়েই ৭৪ বলে এনে ফেলেছিলেন ১৩১ রানের জুটি। ৩৯ বলে ৬৯ করে আনিসুলের বিদায়ের পর শান্ত খেলে গেছেন একা। ৫৫ বলে ১১ ছক্কায় করেন ১০৯ রান। এক ইনিংসে তামিমের সমান ১১ ছক্কা মেরে রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি। ২২০ রানের বিশাল পূঁজি আসার পর মনে হচ্ছিল ম্যাচটা পুরোপুরি মুঠোয় রাজশাহীর। ব্যাটিং স্বর্গে তা বরং পরে হয়ে যায় ছেলেখেলা।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী:   ২০ ওভারে ২২০/৭  (শান্ত ১০৯  , আনিসুল ৬৯,  রনি ১৮ , শেখ মেহেদী ০, সোহান ১২, সাইফুদ্দিন ৪ , ফরহাদ ০, ফজলে ৬*, মুকিদুল ০* ; তাসকিন ০/৪৯, মিরাজ ০/৩৫, সুমন ২/৪৩ , রাহি ০/১১, কামরুল ৪/৪৯, আফিফ ০/৩২  )

ফরচুন বরিশাল:  ১৮.১ ওভারে ২২১/২ ( সাইফ ২৭, তামিম ৫৩, পারভেজ  ১০০* আফিফ ২৬*  ; সাইফুদ্দিন ১/৪০,  শেখ মেহেদী ০/৪০, ইবাদত ০/৩৯, মুকিদুল ০/২৬, ফরহাদ ০/৪৭, আরাফাত ০/১১, আনিসুল ০/১৫ )

ফল: ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন ইমন। 

 

 

Comments