শেষ বলের স্নায়ুচাপে ছক্কা মেরে নায়ক শামসুর
শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান। প্রথম বল থেকে এলো না কোন রান। আল-আমিনের পরের বলে চার মেরে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরের তিন বলে আসে আরও ৩ রান। শেষ বলে ২ রানের দরকার ছক্কায় উড়িয়ে খ্যাপাটে দৌড় দিলেন শামসুর রহমান শুভ। কুয়াশার ধোঁয়াশা পেরিয়ে ছুটলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। সতীর্থরাও আবছা ছায়ার মতো এগিয়ে এসে মাথায় তুললেন তাকে।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে রোমাঞ্চ জমিয়ে খুলনাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। খুলনার করা ১৫৭ রান পেরিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরে শামসুর খেললেন ৩০ বলে ৪৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস।
দিনের প্রথম ম্যাচে রান উৎসবের পর দ্বিতীয় ম্যাচে মিলল টানটান উত্তেজনা। শেষ তিন ওভারে ম্যাচ জিততে চট্টগ্রামের দরকার ছিল ৩৭ রান। মোসাদ্দেক হোসেন, জিয়াউর রহমানরা ফিরে যাওয়ার পর ভরসা করার মতো ছিলেন কেবল শামসুর। তার জন্য একা কাজটা হতো কঠিন। যোগ্য সঙ্গ দিতে তাই হাজির নাহিদুল ইসলাম। হাসান মাহমুদের ১৮তম ওভারের প্রথম চার বলে চারটি সিঙ্গেল। শেষ দুই বলে দারুণ মুন্সিয়ানায় দুই বাউন্ডারি বের করে আসর জমিয়ে ফেলা শুরু শামসুরের।
শিশিরে সিক্ত মাঠে বাকি দুই ওভারের একটি স্পিন দিয়ে করাতেই হতো মাহমুদউল্লাহকে। ব্যাটিংয়ের হিরো শুভাগত প্রথম বলেই করে ফেলেছিলেন বাজিমাত। কিন্তু তার বলে অধিনায়ক নিজেই ছাড়লেন নাহিদের ক্যাচ। ওভারের শেষ বলে নাহিদ আউট হলেও দুই ছক্কায় ১৬ রান উঠিয়ে ফেলেন তিনি। এরপরই আল-আমিনের ওই শেষ ওভার এবং শামসুরের নাটকীয় ঝলক।
মাশরাফি মর্তুজার ফেরার ম্যাচে বাড়তি আকর্ষণ যোগ হওয়ায় সবার আলাদা নজর ছিল এই ম্যাচে। তাতে শুভাগত-শামসুররাই দুই দলের সেরা পারফর্মার।
১৫৮ রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। টুর্নামেন্টে দুরন্ত ছন্দে থাকা লিটন দাস এবার ব্যর্থ। সাকিবকে অনসাইডে তুলে মারতে গিয়ে পুরো ব্যাটে সংযোগ করতে পারেননি বল। অনেকখানি দৌঁড়ে দারুণ ক্যাচ নেন রিশাদ হোসেন।
প্রথম দুই ওভারে দারুণ বল করলেন লম্বা সময় পর ফেরা মাশরাফি। কম গতিতে বল করলেও সিমে হিট করলেন, ছোট স্যুয়িং বের করে আনলেন। তাকে মারা হয়ে যায় বেশ কঠিন।
কিছুটা চাপে পড়ে যাওয়া চট্টগ্রামকে সাহস যোগান তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। জীবনে প্রথমবার মাশরাফি-সাকিবকে মোকাবেলা করতে গিয়ে কাঁপন ধরেনি তার। মাশরাফিকে এক চার মারার পর সাকিবের এক ওভারে দুই চার এক ছয়ে তুলে নেন ১৪ রান।
অবশ্য টিকতে পারেননি এরপর বেশি। শুভাগতকে তুলে মারতে গিয়ে শেষ হয় তার ১৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস। মোহাম্মদ মিঠুন নেমে পরিস্থিতি নিয়ে আসেন নিজের দিকে। ধুঁকতে থাকা সৌম্য সরকারকে একপাশে রেখে রান বাড়ান তিনি।
থিতু হতে সময় নেওয়া সৌম্য মিঠুনের সঙ্গে পান ৩৩ রানের জুটি। ম্যাচও অনেকটা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছিল। তেড়ে মারার চাপ ছিল না বেশি। সাকিবের ফিরতি স্পেলে বাজে শটে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ যায় তার। মিঠুন ছিলেন ভরসা হয়ে। হাসান মাহমুদের ভেতরে ঢোকা দারুণ এক বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ২৩ রানে তিনি ফিরে গেলে ম্যাচে ব্যাকফুটে চলে যায় চট্টগ্রাম।
মাশরাফি নিজের শেষ ওভারে প্লেড অন করে দেন মোসাদ্দেককে। ফেরার ম্যাচে বেশ ভালোই করলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। ৪ ওভার বল করে ২৮ রান দিয়ে পেলেন ১ উইকেট।
ক্রমশ ম্যাচ চলে যাচ্ছিল চট্টগ্রামের নাগালের বাইরে। ঘন কুয়াশায় হচ্ছিল দেখতে সমস্যা। শেষ ৪ ওভারে ৪৪ রানের দরকার দাঁড়ায় তাদের। অভিজ্ঞ শামসুর রহমান শুভ এক প্রান্তে টিকলেন, রান আনলেন। জিয়াউর রহমান আউট হওয়ার পর নাহিদুল ইসলাম নেমে খেললেন দারুণ এক ক্যামিও। ১৯তম ওভারে শিশিরের সুবিধা নিয়ে অফ স্পিনার শুভাগতকে পিটিয়ে ম্যাচ নিয়ে আসেন নাগালে।
শেষ ওভারে শামসুরের উপর পড়ে পুরো ভার। মোস্তাফিজকে নিয়ে ভীষণ চাপে দলকে তীরে নিয়ে আসেন তিনি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ধুঁকতে থাকে খুলনাও। ব্যাটিং অর্ডারে উলটপালট হয় আবারও। ওপেনার জহুরুরল ইসলাম আর মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। দুজনে থিতু হয়ে ইতি টানেন। সাকিব, ইমরুলরা হন ফের ব্যর্থ। আরিফুল হক, শামীম পাটোয়ারির কাছ থেকে আসেনি শেষের ঝড়। চরম বিপদে নয় নম্বরে নেমে দারুণ ব্যাট করেন শুভাগত হোম। তার ১৪ বলে ৩২ রানের ঝড়েই দেড়শো ছাড়িয়ে যায় খুলনা। ওই রান নিয়ে জয়ের একদম কাছ থেকে ফিরতে হয় তাদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জেমকন খুলনা: ২০ ওভারে ১৫৭/৯ (জহুরুল ২৬, জাকির ১৫, সাকিব ১৫ , মাশরাফি ১, ইমরুল ২৪, মাহমুদউল্লাহ ২৬ , আরিফুল ৬, শামীম ৫ , শুভাগত ৩২*, হাসান ০, আল-আমিন ০* ; নাহিদুল ০/২১ , রাকিবুল ০/২৩, শরিফুল ৩/৩৪ , মোসাদ্দেক ১/২৩, মোস্তাফিজ ২/৩৬)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ২০ ওভারে ১৬২/৭ (লিটন ৪, সৌম্য ১৯ , জয় ২৪, মিঠুন ২৩, শামসুর ৪৫, মোসাদ্দেক ১২, জিয়াউর ৬, নাহিদুল ১৮ ; মাশরাফি ১/২৮, সাকিব ২/৩০, শুভাগত ২/৩৪, আল-আমিন ১/৩৮, হাসান ১/৩০ )
Comments