কৃষক বিদ্রোহ: পাঞ্জাব-হরিয়ানার ক্রীড়াবিদদের ‘সমর্থন’ ও কৃষিবিজ্ঞানীর পুরস্কার প্রত্যাখ্যান
ভারতের সিংঘু সীমান্তে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভরত কৃষকদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদরা। কৃষকদের সহায়তায় দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে তাদের প্রায় দুই হাজার জোড়া জামা-কাপড় ধুয়ে দিচ্ছেন ক্রীড়াবিদরা। একইসঙ্গে কৃষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সরকারের পক্ষ থেকে দিতে চাওয়া পুরস্কার নেবেন না বলে জানিয়েছেন পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী ভারিন্দারপাল সিং।
আজ বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিংঘু সীমান্তের কাছে হরিয়ানার সনেপাতে দুইটি ওয়াশিং মেশিনসহ লন্ড্রি স্থাপন করে কৃষকদের জামা-কাপড় ধুয়ে দিচ্ছেন সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদরা। দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করে তারা কৃষকদের দুই হাজার জোড়া কাপড় ধুয়ে দিচ্ছেন। একইসঙ্গে কৃষকদেকে তেল, সাবান, টুথপেস্ট, মশার কয়েল, কম্বল, শাল ও খাবারসহ প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসও দিচ্ছেন তারা।
তরুণ কাবাডি খেলোয়াড় নিমাত সিং বলেন, ‘আন্দোলনরত কৃষকরা যাতে ভালোভাবে থাকতে পরে, সেই লক্ষ্যে আমরা এই ধরনের সেবা দিচ্ছি।’ পাঞ্জাবের ফাগওয়ারা শহরের কাবাডির কোচ প্রভজোত সিং জানান, গত পাঁচ দিন যাবৎ তারা এই সেবা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী ভারিন্দারপাল সিং। কৃষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
প্ল্যান্ট নিউট্রিশন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘এফএআই গোল্ডেন জুবিলি অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানী ভারিন্দারপাল সিং। গত ৭ ডিসেম্বর দিল্লিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভারিন্দারপালের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেটি নিতে অস্বীকৃতি জানান। ভারিন্দারপাল বলেন, ‘দেশের কৃষকরা যখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, এমন পরিস্থিতিতে আমার বিবেক আমাকে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করতে সমর্থন করে না।’ নিজের গবেষণা কাজের মাধ্যমে সর্বদা কৃষকদের সহায়তা করে যাবেন বলেও জানান এই কৃষিবিজ্ঞানী।
ভারতের কৃষিখাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন তিনটি কৃষি বিল রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর এতে সই করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ফলে বিলটি আইনে রূপান্তরিত হয়েছে। এরপরই এই আইনের বিরোধিতায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির রাজপথে। অর্থাৎ গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নতুন কৃষি আইনের বিরোধিতা করছেন কৃষকরা।
এর মধ্যে বিগত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন জোরদার করেছেন কৃষকরা। টানা ১৫ দিনের মতো দিল্লির সঙ্গে হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ অন্য রাজ্যগুলোর সংযোগপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা।
সর্বশেষ গতকাল আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে ষষ্ঠ দফা বৈঠকে আইনটি সংশোধনের জন্য লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বৈঠকেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। সরকারের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত কৃষকরা। একইসঙ্গে তারা বিতর্কিত কৃষি আইনের প্রতিবাদে আগামী ১৪ ডিসেম্বর ভারতব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেন।
এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এ পর্যন্ত অন্তত তিন জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
কৃষক বিদ্রোহের পেছনে পাকিস্তান ও চীনের ভূমিকা আছে: রাওসাহেব দানভে
কৃষক বিদ্রোহ: কেজরিওয়াল গৃহবন্দি, স্বীকার করছে না দিল্লি পুলিশ
কৃষক বিদ্রোহ: গুজরাটে ১৪৪ ধারা জারি
কৃষক বিদ্রোহ: ‘আমাদের মঞ্চে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে অনুমতি দেওয়া হবে না’
কৃষক বিদ্রোহ: প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সমর্থন
কৃষক বিদ্রোহ: অনড় অবস্থান, ভারতজুড়ে ধর্মঘটের প্রস্তুতি
ভারতে কৃষক বিদ্রোহ: ‘আমরা খাবার এনেছি’ সরকারি খাবার ফিরিয়ে দিলেন
পুলিশি বাধা সত্ত্বেও ‘দিল্লি চলো’ কর্মসূচিতে কয়েক হাজার কৃষক
Comments