চীনের সঙ্গে ব্যবসা: এফবিআইয়ের তদন্তে বাইডেনপুত্র হান্টার
গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই তদন্ত চলছিল। তা চলছিল গোপনে। এখন তা প্রকাশ্যে এসেছে।
চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করার কারণে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেনের দ্বিতীয় ছেলে রবার্ট হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের আইআরএস ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ও এফবিআই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, তদন্তকারীরা হান্টার বাইডেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অন্য দেশ মূলত চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তির সময় অর্থ পাচারসহ কয়েকটি আর্থিক অনিয়মের বিষয় পরীক্ষা করে দেখছেন।
তবে, এর সঙ্গে জো বাইডেন জড়িত নন বলেও সিএনএন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে দেশটির বিচার বিভাগের নিয়ম মেনেই এতদিন তদন্তের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল।
সিএনএন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে গতকাল বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করে হান্টার বাইডেন এক বার্তায় বলেছেন, ‘আমি গত মঙ্গলবার বিষয়টি প্রথম জেনেছি। সেদিনই ডেলাওয়ার এটর্নি অফিস থেকে আমার আইনজীবীকে জানানো হয়েছে যে তারা আমার ট্যাক্সের কাগজপত্র যাচাই করছেন।’
বার্তায় তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হলে দেখা যাবে যে আমি আইন মেনে ও যথাযথভাবে কাজ করেছি।’
প্রতিবেদন মতে, ২০১৮ সালের শুরুতে এই তদন্ত শুরু হয়। গত অক্টোবরে সিনক্ল্যায়র ব্রডকাস্ট গ্রুপ সংবাদ প্রতিবেদনে বলেছিল, হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে এফবিআই। সিএনএন বিষয়টির খোঁজ নিতে গিয়ে ‘চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি’র বিষয়টি জানাতে পারে।
ছেলের বিরদ্ধে এই তদন্ত বাইডেনকে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা’র প্রতীজ্ঞাকে পরীক্ষায় ফেলবে বলেও সিএনএন প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
রহস্যময় ল্যাপটপ
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত এটর্নি রুডি জুলিয়ানি বারবার একটি ল্যাপটপকে ঘিরে প্রকাশিত সংবাদের কথা বলে আসছিলেন। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, সেই ল্যাপটপটিতে হান্টার বাইডেনের ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি বাণিজ্য বিষয়ক তথ্যও রয়েছে।
কম্পিউটার মেরামত করেন এমন এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এফবিআই ২০১৯ সালের শেষের দিকে সেই ল্যাপটপটি জব্দ করে। অথচ, এফবিআই ও প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন এরকম কোনো তদন্তের অস্তিত্বই নেই।
এরপর থেকেই এটি এক নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে।
প্রসঙ্গ চীন
তদন্তকারীরা চীনের সঙ্গে হান্টার বাইডেনের ব্যবসায়িক চুক্তির ওপর জোর দিচ্ছেন। এসব বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের কিছু কিছু গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেট সদস্যদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উঠে এসেছিল।
২০১৭ সালে জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার পর হান্টার বাইডেন সিইএফসি চায়না এনার্জির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেন। রিপাবলিকানদের দেওয়া তথ্য মতে, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল।
তবে তদন্তের অন্যতম বিষয় হচ্ছে, সিইএফসির প্রতিষ্ঠাতা ইয়ে জিয়ানমিংয়ের কাছ থেকে ২ দশমিক ৮ ক্যারেটের হীরা উপহার নেওয়া।
২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনকে হান্টার বলেছিলেন যে তিনি হীরাটি নেওয়ার সময় অস্বস্তি বোধ করেছিলেন।
চীনের সংবাদমাধ্যমে ইয়ে জিয়ানমিংয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সরকার তাকে আটক করে।
হান্টারের সাবেক স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের সময় বলেছিলেন, সেই হীরার দাম ৮০ হাজার ডলার। কিন্তু, হান্টার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এর দাম ১০ হাজার ডলার।
নতুন প্রেসিডেন্টের জন্যে চ্যালেঞ্জ
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন সিএনএন’কে এক সাক্ষাৎকারে স্বাধীন বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার অনুরোধ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তাদেরকে (বিচার বিভাগকে) বলব না তাদের কী করতে হবে আর কী করতে হবে না।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এটি আমার বিচার বিভাগ নয়, এটি জনগণের বিচার বিভাগ।’
রিপাবলিকাররা মনে করছেন, হান্টারের এই ঘটনা বাইডেনের চীন-নীতি তৈরিতে প্রভাব ফেলবে।
সব মিলিয়ে হান্টার বাইডেনের ঘটনাকে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
Comments