মুক্তিযুদ্ধের জন্য একদিন: ৫০ কিলোমিটার পদযাত্রা
২০১৮ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক নীরব কর্মসূচি পালন করেন সিলেট শহরের একদল সাইক্লিস্ট ‘সাইকেল ট্রাভেলার্স অফ সিলেট’। তারা সাইকেলে নয়, বরং শহীদদের সম্মান জানিয়ে পদযাত্রার উদ্যোগ নেন। স্বাধীনতার ৪৮তম বছর উপলক্ষে তারা পায়ে হাঁটেন ৪৮ কিলোমিটার। এর ধারাবাহিকতায় পরের বছর ২০১৯ সালে তারা পালন করেন ৪৯ কিলোমিটার পদযাত্রা। আর এবার বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ শুক্রবার এই পদযাত্রিকেরা হাঁটছেন ৫০ কিলোমিটার।
ভোর ৬টায় নগরীর রিকাবীবাজার পয়েন্ট থেকে শুরু করে প্রথমেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন নগরীর পাঠানটুলা এলাকার তারাপুরে স্টার চা বাগানের বধ্যভূমির শহীদদের। সেখান থেকে মালনীছড়া চা বাগান বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পরে তারা টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত এক সম্মুখ সমরক্ষেত্রে শহীদদের কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানান।
এখন তারা হাঁটছেন সিলেট নগরীর উপকণ্ঠের লালমাটিয়া বধ্যভূমির পথে। সেখানে শ্রদ্ধা জানিয়ে সিলেট নগরীর চৌহাট্টার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এসে শেষ হবে ৫০ কিলোমিটারের এ পদযাত্রা।
২০১৮ সালে তারা হেঁটেছিলেন সিলেট-তামাবিল সড়কে, যে রাস্তায় মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে শরণার্থীরা হেঁটেছিলেন ভারতের পথে। সেই পদযাত্রায় তারা গিয়েছিলেন খাদিমনগর বধ্যভূমি, হরিপুরের চিকনাগুল বধ্যভূমি এবং পদযাত্রা সমাপ্ত হয় জৈন্তাপুর উপজেলার শহীদ মিনারে।
গতবছর তারা নগরীর শাহী ঈদগাহ আবহাওয়া অফিসের বধ্যভূমি, লালমাটিয়া বধ্যভূমি হয়ে বালাগঞ্জ উপজেলার আদিত্যপুর বধ্যভূমিতে গিয়ে ৪৯ কিলোমিটার সমাপ্ত করেন।
এবারের পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা হলেন- কাজি সাহি, নুরুল ইসলাম, মোর্শেদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মুহসীন, তৌফিকুল ইসলাম, সজীব হৃদয় আহমদ, মোহেব বিন এমদাদ, পার্থ দে ও তমিস্রা তিথি।
পদযাত্রায় সঙ্গে থাকতে সাইকেল নিয়ে যাত্রা করছেন সাইক্লিস্ট সৈয়দ তাওহীদুল ইসলাম তাহিদ, কাজী সুহেল তানভীর, নাজমুল হুদা জুনেদ ও আসলাম মাহমুদ। এছাড়াও, আরও কয়েকজন ৫০ কিলোমিটারের কিছু অংশে পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
এই পদযাত্রার সমন্বয়ক কাজি সাহি বলেন, ‘২০১৮ সালের একটা সাইকেল রাইডের সময় কথা প্রসঙ্গে এ উদ্যোগের চিন্তা হয়। তারপর পরিকল্পনা, বধ্যভূমির খোঁজ ও রুটপ্লান তৈরি করে সে বছরই আমরা প্রথম পদযাত্রা করি।’
তিনি বলেন, ‘বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখি যে স্থানীয়রা বেশিরভাগই সেখানে একটি বধ্যভূমি আছে জানলেও এর পেছনের আসল সত্যটা জানে না। আর তাই আমাদের এ উদ্যোগ বধ্যভূমি সম্পর্কে স্থানীয়সহ দেশের মানুষকে আরও বেশি করে এ নিষ্ঠুর সত্য জানানোর উদ্যোগ।’
কাজি সাহি আরও বলেন, ‘বিজয়ের ৫০ বছর পর আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছেন আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলোও ধূসর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, ইতিহাসের এই সাক্ষীগুলো যাতে না হারিয়ে যায়, সেজন্য আমাদের এই প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
এ দলের প্রধান কাজি সাহি এ বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতের বঙ্গবন্ধুর সম্মানে গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ১০০ কিলোমিটার পদযাত্রা করে।
এ পদযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ঢাকার পথে ৯৯ কিলোমিটার হেঁটে পরে বাসে করে ঢাকা এসে শেষ এক কিলোমিটার হেটে ধানমন্ডি ৩২ এ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি।
Comments