‘আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অমানবিক’

আবাসিক হল বন্ধ রেখেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে দাবি করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থী সুরাইয়া রহমান।
অপরাজেয় বাংলা। স্টার ফাইল ছবি

আবাসিক হল বন্ধ রেখেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে অমানবিক বলে দাবি করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থী সুরাইয়া রহমান।

২০১৬-১৭ সেশনের আবাসিক শিক্ষার্থী সুরাইয়া রহমান বলেন, ‘আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অমানবিক। এখানে অনেক ধরনের অসুবিধা আছে। সশরীরে পরীক্ষা দিতে হলে যারা আবাসিক শিক্ষার্থী তারা কোথায় থাকবে? নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা শুনতে পাচ্ছি সকাল-বিকাল দুটি করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। শীতকালে খুব দ্রুত সন্ধ্যা হয়। সেক্ষেত্রে যাতায়াত নিয়েও অনেককে অসুবিধায় পড়তে হবে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে হল খুলে দেওয়া উচিৎ।’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হবে। সেশনজট নিরসনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন অনেক জেলা থেকে শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকিও আছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

করোনা পরিস্থিতিতে হল খুলে দিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, সব বর্ষের জন্য নয়, কেবল শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী যাদের পরীক্ষা দিতে হবে তাদের জন্য হল খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব অনেকখানিই মেনে চলা সম্ভব।

বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী ইজাব বলেন, ‘আমার বাবা কিছুদিন আগেই করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। ঢাকায় আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। এ অবস্থায় পরীক্ষা দিতে হলে আমাকে কোনো মেস বা হোটেলে উঠতে হবে। আমার পরিবারের যে আর্থিক অবস্থা তাতে মেস বা হোটেল ভাড়া করে থাকাটা বেশ চাপের। যেহেতু শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার কথা হচ্ছে, তাই পরীক্ষার্থীদের জন্য যতদিন পরীক্ষা চলছে হল খুলে দেওয়া উচিৎ। প্রয়োজনে এক রুমে এক বা দুইজনই থাকবে। তখন স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলা সম্ভব।’

রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আনিকা বুশরা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরবে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আত্মীয়-স্বজনদের বাসায়ও বয়স্ক ব্যক্তি আছেন, করোনার ঝুঁকিতে আছেন এমন সদস্য আছেন। এ অবস্থায় তারা আমাদের থাকতে দিতে চাইবেন কেন?’

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা ও ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়ানোর দাবি জানায় একদল শিক্ষার্থী।

কর্তৃপক্ষ বলছে, চাকরির বাজারে ঢোকার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন এসেছে।

আনিকা বুশরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেবল বিসিএস বা চাকরির বাজারকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ না। পড়ালেখার মান নিশ্চিত না করে, তড়িঘড়ি সিলেবাস কমিয়ে কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা নেওয়া হলে আমরা যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চাই, গবেষণা করতে চাই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কর্তৃপক্ষের উচিৎ সব শিক্ষার্থীর কথা মাথায় রাখা।’

একই কথা জানান কবি জসিম উদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আসিফ করিম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে আমরা যারা গ্রামে থাকি তারা বড় সমস্যায় পড়ব। হল না খুললে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব না। আর যদি আবাসিক হল না খুলেই সশরীরে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তবে, কর্তৃপক্ষকেই বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি একরকম এড়িয়েই যাচ্ছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, হল খোলা হবে না। কিন্তু, কেন খোলা হবে না সেটা তারা বলছেন না। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ইনকোর্স, মিডটার্ম কিংবা টিউটোরিয়াল পরীক্ষা অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বা মৌখিকভাবে নেওয়া হবে। এদিকে, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সমস্যাও এখনো সমাধান করা হয়নি। আমাদের শিক্ষকরা বলেছেন, ক্যাম্পাস খুললে পরীক্ষার আগে রিভিউ ক্লাস নেওয়া হবে। এটার প্রয়োজনও আছে। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস না হলে বঞ্চিত হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা এখন সুখবর পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত একটি পরিকল্পনা কমিটি গঠন করে সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে সমন্বয় করা। কবে নাগাদ ভ্যাকসিন আসতে পারে, ভ্যাকসিন আসার পরে কী হবে এ বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যেই আলোচনা করতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে ক্যাম্পাস কীভাবে খোলা যায় এ বিষয়গুলো নিয়ে এখনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিৎ।’

আবাসিক হল না খুলে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।

আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যা জানানো হয়েছে সেটিই কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধা আমরা বিবেচনা করছি। এ নিয়ে যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। সেটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

২৬ তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরুর উল্লেখ থাকলেও কত তারিখের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি জানতে চাইলে উপাচার্য আখতারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেবে।’

পরীক্ষার বিষয়ে বিভাগগুলো কী ভাবছে জানতে চাওয়া হলে দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভাগগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আশা করছি, এই সপ্তাহের মধ্যেই নির্দেশনা আসবে। তখন আমরা বিভাগ থেকে এ  বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

Comments

The Daily Star  | English
Yunus meets Malaysian PM Anwar Ibrahim

Anwar Ibrahim to consider issue of Bangladeshi workers

Malaysian Prime Minister Anwar Ibrahim today promised to consider the issue of 18,000 Bangladeshi workers who missed a deadline to enter Malaysia saying that they need workers, but not "modern slaves"

2h ago