টি-টোয়েন্টির ‘স্পেশালাইজড’ দল বানাতে উৎসাহ পাচ্ছেন নির্বাচকরা
টি-টোয়েন্টির র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ বরাবরই নিচের দিকের দল। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ছাড়া কারো বিপক্ষেই ফেভারিট হয়ে নামার অবস্থা থাকে না। এই সংস্করণে দুর্দশা থেকে উত্তরণে নতুন রক্তের সঞ্চালন তাই নানা সময়ে এসেছে আলোচনায়। কিন্তু পাইপলাইন দেখাতে পারেনি আশার আলো। এবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সিনিয়রদের ছাপিয়ে তরুণদের আলোয় আসা সেই আশার পালেই দিচ্ছে হাওয়া। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন জানালেন, টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা দল বানাতে ব্যাপক উৎসাহ পাচ্ছেন তারা।
পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্টে লিগ পর্বের ২০ ম্যাচ শেষে প্রভাব বিস্তারকারী পারফরম্যান্স দিয়ে তরুণরাই এগিয়ে। প্রতিভার প্রমাণ রাখলেও ধারাবাহিকতা নিয়ে যাদের অনেক বদনাম সেই লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্তরা দিচ্ছেন ধারাবাহিকতার আর আস্থার ছবি।
দেশের ক্রিকেটে দ্রুততম টি-টোয়েন্টির সেঞ্চুরির করে নিজের আগমন বার্তা দিয়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক ভূমিকায়। ছক্কার রাজা হিসেবে নজর নিজের দিকে নিয়েছেন শান্ত। এমনকি আকবর আলী, তৌহিদ হৃদয়রা দেখিয়েছেন তাদের ছক্কা মারার সামর্থ্য। শামীম পাটোয়ারির মতো ইউটিলিটি খেলোয়াড় নজর কাড়ছেন। শুভাগত হোমের মতো পুরনো কেউ কেউ ফের দ্যুতি ছড়িয়েছেন।
হাবিবুল জানান, একসঙ্গে এতজন ভালো করায় বেশ সহজ হয়ে গেছে তাদের পরিকল্পনা, ‘খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। যারা আমাদের প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় আছে তারা তো ছিলই। তার বাইরেও দরকার ছিল। এই ধরনের টুর্নামেন্টে তাদের দিকেই নজরটা থাকে বেশি। এরা কেমন করে, এরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ, তাই না? দেখে খুব ভালো লাগল। আমরা তো চেষ্টা করছি টি-টোয়েন্টির জন্য একটা স্পেশালাইজড দল বানাতে। সেটা করতে হলে আমাদের এরকম পারফর্মার লাগতই। এক কথায় বলব এটা বাংলাদেশের আগামীর জন্য বেশ ভালো।’
সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকে সিনিয়রদের মধ্যে আছেন কেবল তামিম ইকবাল। তবে এই পাঁচজনের মধ্যে তার স্ট্রাইকরেটই সবচেয়ে কম, বাকিদের তুলনায় শুরুতে ধুঁকতেও দেখা গেছে তাকে। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০৬ রান করা লিটন কেবল রানে নয়, বরাবরের মতই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন নান্দনিকতায়। শান্ত যেমন ছিলেন দাপুটে। সৌম্য- নাঈমরা শুরুতেই খেলার ভাষা তৈরি করে দেওয়ার কাজটা করেছেন দারুণভাবে।
টুর্নামেন্টে তিনজন বাঁহাতি ওপেনার পেয়েছেন সেঞ্চুরি। তরুণ পারভেজকে আলাদা রাখলে সিনিয়র তারকাদের পরেই যাদের নাম আসে তাদের মধ্যে চারজন ওপেনার খেলেছেন দারুণ। মিডল অর্ডারে নজর কেড়েছেন ইয়াসির আলি রাব্বি। হাবিবুল আগামীর পরিকল্পনায় যা যোগাবে বাড়তি জ্বালানি, ‘খুবই ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক। টি-টোয়েন্টির টুর্নামেন্ট, অথচ আমাদের তিনজন সেঞ্চুরি করে ফেলল। এটা কিন্তু সাধারণত দেখা যায় না। এই ফরম্যাটে আমরা পিছিয়ে থাকি একটু হলেও। সেখানে তিনটা সেঞ্চুরি হয়েছে, অনেক রান করেছে সবাই। নির্বাচক হিসেবে আমি বেশ খুশি।’
করোনা স্থবিরতার পর টানা খেলার সূচি আছে বাংলাদেশের। আগামী এক বছরেই সব সংস্করণ মিলিয়ে খেলতে হতে পারে অর্ধশত ম্যাচ। পর পর দুই বছর দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপ। প্রচুর খেলোয়াড়ের ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা দেখে তাই ভীষণ স্বস্তিতে হাবিবুল, ‘আমাদের আগামীতে অনেক খেলা আছে। টি-টোয়েন্টি বলেন কিংবা অন্য সংস্করণে আমাদের অনেক খেলোয়াড় লাগবে। সব ঠিকঠাক হয়ে গেলে কিন্তু প্রচুর খেলা আছে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে প্রচুর খেলোয়াড়ও লাগবে। মূল কয়েকজনের বাইরে অন্য খেলোয়াড় কেমন করে এটা দেখার জন্য আদর্শ জায়গা ছিল।’
Comments