ব্রহ্মপুত্রের বুকে খণ্ড খণ্ড বাঁশের সাঁকো

স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে তৈরি করা হচ্ছে খণ্ড খণ্ড বাঁশের সাঁকো। চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য ১০-১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোগুলো তৈরি করা হচ্ছে। নদের মূল চ্যানেল ছাড়া কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। চরগুলোতে ছোট ছোট চ্যানেলে সামান্য পানি প্রবাহ রয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমড় পানি।
বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে তৈরি করা হচ্ছে খণ্ড খণ্ড বাঁশের সাঁকো। চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য ১০-১৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোগুলো তৈরি করা হচ্ছে। নদের মূল চ্যানেল ছাড়া কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। চরগুলোতে ছোট ছোট চ্যানেলে সামান্য পানি প্রবাহ রয়েছে। কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমড় পানি।

কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে চর কোদালকাটি এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক আমিনুর রহমান (৫০) স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব খণ্ড খণ্ড বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন। বাঁশ আর দড়ির যোগান দিচ্ছেন চরের বাসিন্দারা।

আমিনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গেল এক সপ্তাহে তিনি কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার আটটি চরে আটটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। আরও ১০-১২টি সাঁকো তৈরির প্রস্তুতি রয়েছে। পানি কম থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। তাই চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে তিনি এসব বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন বলে জানান।

‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকোগুলো তৈরি করছি। চরবাসী আমাদের বাঁশ ও দড়ি দিয়ে সহযোগিতা করছেন। এমনকি আমরা নিজেরাও চাঁদা তুলে সেই অর্থ এসব সাঁকো তৈরির কাজে লাগাচ্ছি’, জানালেন আমিনুর রহমান।

প্রত্যেকটি বাঁশের সাঁকো তৈরিতে ৩০-৪০টি বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। দড়ি লাগছে পাঁচ থেকে ছয় কেজি। সাঁকো তৈরিতে গুনার ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি বাঁশের সাঁকো তৈরিতে সময় লাগছে দুই দিন। প্রত্যেক দিন ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এসব সাঁকো তৈরিতে কাজ করছেন।

বাঁশের সাঁকো তৈরিতে কাজ করছেন স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

ব্রহ্মপুত্রের বুকে দুর্গম চর কোদালকাটির কৃষক আবদার হোসেন (৬৭) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চরে ব্রহ্মপুত্রের শাখা চ্যানেলগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমড় পানি। নৌকা চলাচল করতে না পারায় আমাদেরকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব শাখা চ্যানেলে বাঁশের সাঁকো তৈরি হওয়ায় আমরা সহজে এক চর থেকে অন্য চরে যাতায়াত করতে পারছি।’

একই চরের কৃষক আতিয়ার রহমান (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমিনুর মাস্টার একজন ভালো মানুষ। তিনি উদ্যোগ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে খণ্ড খণ্ড বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিচ্ছেন। এসব সাঁকোর কারণে আমাদের চলাচলে দুর্ভোগ কমেছে।’

চিলমারী নৌ-ঘাটের নৌকারমাঝি সালাম মিয়া (৪৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নদের মূল চ্যানেল দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। কিন্তু, বিভিন্ন চরে নদের শাখা চ্যানেলগুলোতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় নৌকা চালানো যাচ্ছে না। নদের মূল চ্যানেলটিতেও পানি কমতে শুরু করেছে। আসছে জানুয়ারির শেষের দিকে মূল চ্যানেল দিয়েও নৌকা চালাতে আমাদের বাধাগ্রস্ত হতে হবে বলে আশঙ্কা করছি।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমে যাওয়ায় নদের বুকে বিভিন্ন চরে শাখা চ্যানেলগুলোতে কোমর থেকে হাঁটু পানি রয়েছে। এসব চ্যানেলের পানি অতিক্রম করে চলাচল করতে চরবাসীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই নিজেদের অর্থায়নে ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থিক সহায়তায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে তারা চলাচল করছেন। এসব বাঁশের সাঁকো অস্থায়ী। চরে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো তৈরির কোনো সুযোগ নেই।’

Comments

The Daily Star  | English
Dhakeshwari Temple Yunus speech

Want to build a Bangladesh where everyone's rights are ensured: Yunus

Seeking law enforcement's support during celebration a 'collective failure', he added

1h ago