পাবনা মেডিকেল কলেজ শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির নামে হলো না!

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে সেদিন যারা মাথা নত না করে নিজেদের জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন তাদেরই একজন পাবনার কৃতিসন্তান শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি।
Dr Fazle Rabbi
শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে সেদিন যারা মাথা নত না করে নিজেদের জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলেন তাদেরই একজন পাবনার কৃতিসন্তান শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি।

আজ সোমবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পুরো জাতি যখন শ্রদ্ধাবনত চিত্তে জাতির বীর সেনানীদের স্মরণ করছে তখন শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির জন্মভূমি পাবনায় তার স্মৃতি ধরে রাখার মতো তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।

বইয়ে বা বিভিন্ন সংবাদ-সাময়িকী ও টেলিভিশনের পর্দায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবিগুলো যখন দেখানো হয় তখন পাবনার নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই তিনি অপিরিচিত থেকে যান।

পাবনার সচেতন মহল তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বার বার দাবি জানিয়ে আসলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি ১৯৩২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবনা শহরের ছাতিয়ানিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বর সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ঢাকায় যান। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ‘স্বর্ণ পদক’ পেয়ে এমবিবিএস পাশ করেন।

এরপর ডা. ফজলে রাব্বি উচ্চশিক্ষার জন্যে ইংল্যান্ডে যান। সেখান থেকে তিনি ১৯৬২ সালে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করে বিলেতের মাটিতেই চিকিৎসা পেশা শুরু করেন।

অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বিদেশের মাটিতে চিকিৎসা সেবায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তবে সেটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ডা. ফজলে রাব্বি মনেপ্রাণে ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি ফিরে এসেছিলেন দেশের মাটিতে।

১৯৬৩ সালে ডা. রাব্বি দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিনামূল্যে গরিব রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে যখন মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন ডা. ফজলে রাব্বি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছিলেন। তাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয় দিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ডা. ফজলে রাব্বির এ ভূমিকা পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়নি। তাই তারা তাদের দোসরদের সঙ্গে নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর রাতে তাকে ধরে নিয়ে যায়। নির্মম নির্যাতন করে অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাকে হত্যা করা হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির এ অবদান জাতি কখনই ভুলবে না। তবে জাতির এ বীর সন্তানকে তার নিজ জন্মভূমির মানুষ যেন ভুলতে বসেছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বির স্মৃতি ধরে রাখতে পাবনা জেলায় এখনো সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

‘শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি স্মৃতি পরিষদ’ নামে ২০০৮ সালে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন জেলার সচেতন নাগরিকরা। পরিষদের উদ্যোগে পাবনা মেডিকেল কলেজকে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির নামে করার জন্য বার বার দাবি জানানো হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

পাবনার স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠক ও প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুল মতিন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘ডা. ফজলে রাব্বির নামে পাবনা মেডিকেল কলেজের নামকরণ করার দাবিতে আমরা ২০০৮ সাল থেকে পাবনার সচেতন মহলকে সঙ্গে নিয়ে সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছি। দাবির পক্ষে পাবনাবাসীর স্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচিও করা হয়েছে। সরকারের কাছে বার বার এ দাবি জানানো হলেও সেই দাবি অপূর্ণই রয়ে গেছে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক রবিউল ইসলাম রবি ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘ইতিহাসের পাতায় ডা. ফজলে রাব্বির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। কেউ সে নাম মুছে ফেলতে পারবে না। তবে সংরক্ষণের অভাবে ডা. ফজলে রাব্বির জন্মভূমি পাবনার নতুন প্রজন্ম তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না।’

ডা. ফজলে রাব্বির পরিবারের সদস্য এডভোকেট ফজলে শাহারান বিপু ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘ডা. ফজলে রাব্বির পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ব অনুভব করি। তিনি আমাদের গৌরব। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা মহান এ মানুষটির স্মৃতি নিজ এলাকার মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই— ডা. ফজলে রাব্বির জন্মভূমিতে তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া হোক যাতে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা তার স্মৃতিকে তুলে ধরতে পারি।’

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeds

Intensified Israeli airstrikes on Gaza yesterday killed dozens on the eve of the first anniversary of its offensive in the besieged territory that has killed nearly 42,000 Palestinians and left the enclave in ruins.

5h ago