শিরোপার মঞ্চে লড়াইটা যেন সিনিয়র-জুনিয়রের

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনাল খেলবে খুলনা-চট্টগ্রাম।
Mahmudullah & Mohammad Mithun
ছবি: বিসিবি

একদল অভিজ্ঞতায় ঠাসা। এ ধরণের টুর্নামেন্টের ফাইনাল যাদের কাছে অনেকটা ডাল-ভাত। আরেক দল অপেক্ষাকৃত তরুণদের। দুই দলের ফাইনালে আসার পথ আবার বিপরীত ধর্মী।অভিজ্ঞতায় ভরপুর জেমকন খুলনা টুর্নামেন্টে এগুচ্ছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তবে অভিজ্ঞতার মুন্সিয়ানায় সবার আগে ফাইনালে উঠে তারাই। অন্যদিকে দুই সুযোগে ফাইনালে পা রাখলেও পুরো টুর্নামেন্টে টি-টোয়েন্টির ধরনে সবচেয়ে চনমনে ছিল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনাল খেলবে দুদল।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে খুলনাকে ফাইনালে দেখছিলেন বেশিরভাগই। হট ফেভারিট তকমা সাঁটা ছিল তাদের। যে দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান আর পরে মাশরাফি মর্তুজা একসঙ্গে খেলেন তাদের জন্য তা খুব স্বাভাবিকও।

Mashrafe Mortaza & Mahmudullah
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তবে নামের ভারের চেয়ে বেশ পলকা ছিল খুলনার পারফরম্যান্সের গ্রাফ। লিগ পর্বে অন্তত তিন ম্যাচ তারা হারতে হারতে জিতেছে। একটু এদিক ওদিক হলেই হয়ত তলানিতেই থাকতে হত তাদের।

ব্যাটিংয়ে কোয়ালিফায়ারের আগ পর্যন্ত একদম চেনা যায়নি মাহমুদউল্লাহ-সাকিবদের। মাহমুদউল্লাহ কিছু রান করলেও লম্বা সময় পর ফেরা সাকিব ব্যাটিংয়ের তালই পাচ্ছিলেন না। ইমরুল কায়েসের পারফরম্যান্স ছিল উঠানামার মাঝে। এনামুল হক বিজয় তো একাদশেই জায়গা হারিয়ে বসে আছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার জহুরুল ইসলাম অমি অবশ্য দলটিতে রেখেছেন ভারসাম্য।

তরুণ শামীম পাটোয়ারি ক্ষিপ্র ফিল্ডিং আর ঝড়ো ব্যাটিং দিয়ে এরমধ্যে মনকাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে ফেলেছেন। অভিজ্ঞ শুভাগত হোম শুরুর দিকে জায়গা না পেলেও পরে একাদশে ঠাঁই পেয়ে লিগ পর্বে দুই ম্যাচে হয়ে যান নায়ক। আরিফুল হক চার ছক্কা মেরে জিতিয়েছিলেন এক ম্যাচ। বড় পারফর্মাররা নীরব থাকলেও রিজার্ভ বেঞ্চের জোরে পা হড়কাতে গিয়েও আটকে যায় খুলনা।

টুর্নামেন্টের মাঝপথে যুক্ত হওয়া মাশরাফি ৩৮ পেরুনো বয়সেও জুতসই বোলিং করছেন। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৫ উইকেট নিয়ে দলকে ফাইনালে তোলে তিনিই নায়ক। ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ সাকিব প্রায় সব ম্যাচেই বল হাতে রেখেছেন অবদান। খুলনার দুর্ভাগ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই তারকাকে পাচ্ছে না তারা।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য সাকিব ছাড়াও অভিজ্ঞতার জোরে নিজেদের দিকেই পাল্লা রাখছেন ভারি,  ‘এটা সত্যি কিন্তু যেকোনো  টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অনেক আনন্দের। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে না  এটা একটা দলের জন্যও অনেক বড় একটা অর্জন, সেটা যেই ফরম্যাটেই হোক। যেহেতু আমাদের দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় বেশি আছে তো আমি আশা করি আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারব। যদি আমরা আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি ফলাফল আমাদের দিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।’

টি-টোয়েন্টির আদর্শ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে দল বানালেও এরকম দাপুটে ও ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলবে চট্টগ্রাম, এমনটা হয়ত ধারণার বাইরে ছিল । কিন্তু দলটি মূলত এমন ক্রিকেট খেলেছে তাদের টপ অর্ডার আর পেসারদের নৈপুণ্যে।

Soumya Sarkar
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টুর্নামেন্টের সেরা ওপেনিং জুটি তাদেরই। লিটন দাস-সৌম্য সরকার মিলে প্রতি ম্যাচেই দলকে পাইয়ে দিচ্ছিন দারুণ শুরু। পঞ্চাশের বেশি তিনটি, একশোর বেশি একটি জুটি এসেছে তাদের। আরেকটি দুটি ছিল পঞ্চাশের কাছাকাছি। ৩৭০ রান করে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল লিটন। ২৮০ রান করে ছয়ে আছেন সৌম্য। 

একদিন একজন থাকছেন আগ্রাসী, আরেকজন প্রান্ত বদলে দিচ্ছেন সঙ্গ। নান্দনিকতায় মুগ্ধ করার পাশাপাশি দাপটও দেখা যাচ্ছে তাদের। ফাইনালেও এই জুটির দিকে তাকিয়ে থাকবে তাদের দল।

বোলিংয়েও সেরা তারকা চট্টগ্রামের।    ২১  উইকেট নিয়ে অনেক এগিয়ে থেকে আসরের সেরা মোস্তাফিজুর রহমান। শরিফুল ইসলাম ১৪ উইকেট নিয়ে মেলাচ্ছেন তাল। প্রতিপক্ষের উপর শুরুতেই চড়াও হতে দেখা যাচ্ছে তাদের। তরুণ স্পিনার রাকিবুল হাসানকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা আনা যাচ্ছে। নাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স পাচ্ছে তারা। এই অফ স্পিনার রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি এনে দিচ্ছেন ব্রেক থ্রো। শেষ দিকে ব্যাটিংয়েও পটু তিনি ।

তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় দেখাচ্ছেন তার উপর আস্থা রাখা যায়। মিডল অর্ডার নিয়ে কিছুটা ভুগেছিল তারা। কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানালেন মোহাম্মদ মিঠুন, শামসুর রহমানরা কাজের সময় সার্ভিস দিতে প্রস্তুত, ‘মিডল অর্ডার খুব ভালো আছে। তাদের উপর আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী। যখন তাদের দরকার হবে, তখন তারা তা ডেলিভার করবে।’

তবে অভিজ্ঞতার কথা বলে খুলনাকে এগিয়ে রেখে নিজেদের উপর চাপ সরিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘আমি মনে করি টি-টোয়েন্টি হচ্ছে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের খেলা। মাঠের ভেতরে যাদের যত ভালো মাথা থাকবে, তারাই ম্যাচ জিতবে। সেদিক দিয়ে খুলনা অনেক এগিয়ে আছে। কারণ তাদের অনেকগুলো বড় বড় ক্রিকেটার আছে। আমাদের ছেলেদের হয়তো ঐ অভিজ্ঞতা নাই, খুব বেশি ফাইনাল ম্যাচও তারা খেলেনি।  পুরা টুর্নামেন্টে আমাদের একটা ধারাবাহিকতা ছিল, এ ম্যাচটাও সেভাবে খেলতে পারলে আমাদের একটা ভালো এডভান্টেজ থাকবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

7m ago