৬ চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ: চাষিরা দিশেহারা
লোকসান কমাতে দেশের ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের আখমাড়াই বন্ধ করেছে সরকার। আর বন্ধ ঘোষণা হওয়া চিনিকল এলাকার কৃষকরা আবাদ করা খেতের বিশাল আখের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা। বন্ধ ঘোষণা হওয়া মিল এলাকার আবাদকৃত জমির আখ পার্শ্ববর্তী চালু মিলে সরবরাহ করার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও আশাবাদী হতে পারছেন না কৃষকরা।
পাবনা চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর পাবনা চিনিকল এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৭২ হাজার মেট্রিক টন আখ। আখ কেটে চিনিকলে সরবরাহ করে যে সময় কৃষকরা অর্থ উপার্জন করবে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে পাবনা চিনিকলের আখমাড়াই বন্ধ ঘোষণা করায় কৃষকদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় পাবনা চিনিকল, কুষ্টিয়া চিনিকল, পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর চিনিকল, সেতাবগঞ্জ চিনিকল ও রংপুর চিনিকলের আখমাড়াই চলতি বছর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ২ ডিসেম্বর পাবনা চিনিকলে এ নির্দেশনা আসার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পাবনা চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষিদের মধ্যে।
পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাড়াই বন্ধ হলেও কৃষকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাবনা চিনিকল এলাকার আবাদকৃত জমির ৭২ হাজার মেট্রিক টন আখ পার্শ্ববর্তী নাটোরের গোপালপুর চিনিকলে (নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল) সরবরাহ করা হবে।’
প্রতিদিন ৭০০ মেট্রিক টন করে আখ পাবনা চিনিকল এলাকা থেকে সরবরাহ করা হবে বলে জানান এমডি।
আখ চাষিরা জানান, গোপালপুর চিনিকলের আখমাড়াই শুরু হয়েছে ১১ ডিসেম্বর থেকে। তবে, এখনো পাবনা চিনিকল এলাকা থেকে আখের সরবরাহ শুরু করা হয়নি।
সরেজমিনে পাবনা চিনিকল জোনের বিভিন্ন আখের জমি ঘুরে দেখা গেছে, আখমাড়াইয়ের ভরা মৌসুমে পাবনা চিনিকল এলাকার জমির আখ জমিতেই পড়ে রয়েছে। চিনিকলের ক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে, ক্রয় কেন্দ্রে আখের সরবরাহ নেই।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সারা গোপালপুর গ্রামের আখচাষি রমজান আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আখ আবাদ করেছি। ফলন ভালো হলেও উৎপাদিত আখ নিয়ে এখন কী করব, তা ভেবে উঠতে পারছি না।’
‘পাঁচ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করতে ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা ছিল মিলে আখ সরবরাহ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আসবে। দেনা পরিশোধ করার পরও লাভের আশা ছিল। কিন্তু, মাড়াই বন্ধ ঘোষণা হওয়ার পর আমি খরচের টাকা তোলা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। সময়মতো আখ সরবরাহ করতে না পারলে উৎপাদন খরচও পাওয়া যাবে না’, বলেন তিনি।
পাবনা চিনিকলের আখচাষি ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আখে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যায়। এ সময় চিনি আহরণের পরিমাণও বেশি হয়। কিন্তু, এ বছর পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে জমি থেকে আখ সরবরাহ শেষ হবে না। নির্দিষ্ট সময়ে আখমাড়াই করা না হলে আবাদকৃত জমির আখ দিয়ে খড়ি বানানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।’
কৃষকদের স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ে কৃষকদের কাছ থেকে আখ কেনার আহ্বান জানান তিনি।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকার জমিতে এ বছর এক দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন আখের আবাদ হয়েছে। এদিকে পাবনা চিনিকল এলাকার আরও প্রায় ৭২ হাজার মেট্রিক টন আখ এখানে সরবরাহ করার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের আবাদকৃত জমির ৪০ হাজার মেট্রিক টন আখ রাজশাহী চিনিকলে সরবরাহ করা হবে।’
এ বছর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে পাবনা চিনিকলের আখসহ প্রায় দুই দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন আখমাড়াই করা হবে। এজন্য ১৩৪ দিন মিল চালু থাকবে বলে জানান তিনি। মিল চালু থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত আখ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলেও জানান তিনি।
তবে, আখ থেকে চিনি আহরণের জন্য আখমাড়াই মার্চের মধ্যে শেষ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। মার্চের মাঝামাঝি থেকে আখ থেকে চিনি আহরণের পরিমাণ কমে যাবে। ফলে মিল বেশিদিন চালু থাকলেও আশানুরূপ চিনি উৎপাদন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েই গেছে। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে এ বছর প্রায় ১৬ দশমিক ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান এমডি হুমায়ুন কবির।
Comments