‘মাছ ধরা উৎসব’ ঝুঁকিতে দেশীয় প্রজাতির মাছ

কোন অনুমতি ছাড়াই মৌলভাবাজারের মনু নদীতে চলছে তিন দিনের মাছ ধরা উৎসব মাছ হাট। স্থানীয়ভাবে উৎসবটি ‘হাট উৎসব’ নামে পরিচিত। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এভাবে হাজার হাজার মানুষ একসাথে মাছ শিকার করলে দেশীয় মাছ হারাবে তাদের আবাসস্থল ও প্রজনন ব্যবস্থা।
মৌলভাবাজারের মনু নদীতে গত ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর হয়ে গেল তিন দিনের মাছ ধরা উৎসব ‘মাছ হাট’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে অবাধে মাছ শিকারে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। ছবি: স্টার

কোন অনুমতি ছাড়াই মৌলভাবাজারের মনু নদীতে চলছে তিন দিনের মাছ ধরা উৎসব মাছ হাট। স্থানীয়ভাবে উৎসবটি ‘হাট উৎসব’ নামে পরিচিত। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এভাবে হাজার হাজার মানুষ একসাথে মাছ শিকার করলে দেশীয় মাছ হারাবে তাদের আবাসস্থল ও প্রজনন ব্যবস্থা।

অভিযোগ আছে এ বিষয়ে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মৎস্য কর্মকর্তা।

কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর হাজিপুর ইউনিয়নের মাহতাবপুরে গত ১২ ডিসেম্বর মাছ ধরা শুরু হয়। নানা এলাকার বাসিন্দারা জাল নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। নদীর বিভিন্ন বাঁকে যেখানে গভীরতা রয়েছে সেসব স্থানে মাছ ধরা উৎসব চলে।

সৌখিন ও পেশাদার শিকারিরা পলো, কুচা, ঝাকি জাল, প্লেন জাল, টানা জাল নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে আসেন। কেউ নৌকায়, কেউ কলাগাছের ভেলায় চেপে, আবার কেউ নদীতে নেমে মাছ ধরা শুরু করেন। এ দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোক জড়ো হন। মাছ ধরা দেখার পাশাপাশি মাছ কিনেও নিয়ে যান অনেকে।

প্রথম দিন মনু রেল সেতুর পূর্ব স্থান থেকে মাছ ধরা শুরু হয়। দ্বিতীয় দিন সুজাপুর ছৈদল বাজার ডহরে মাছ ধরা হয়। হাজীপুর শরীফপুর পৃথিমপাশা সীমানার ধলিয়া বেলেরতল ডহরে মাছ ধরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তিন দিনের মাছ ধরা উৎসব। আইড়, ঘাঘট, বোয়াল, রুই, কালাবাউশ, বাছা, বাঁশপাতাসহ নানা জাতের দেশীয় মাছ ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল মোহাইমীন মিল্টন জানান, হাজার হাজার মানুষ দেদারছে মাছ ধরল। এতে দেশীয় মাছ হারালো আবাস। এসব উৎসবের কথা বলে একদিন হারিয়ে যাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ। পরে জাদুঘর ছাড়া এসব মাছ আর দেখা যাবে না।

ছবি: স্টার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের অবহেলার কারণে এসব হচ্ছে। এর দায় মৎস্য অধিদপ্তরকে নিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম বলেন, অনুমতি নেওয়া হয়নি মাছ উৎসবের জন্য। যেদিন মাছ ধরা শুরু হয়েছে, সেদিনই আমাকে এক লোক ফোন করে বিষয়টি জানায়। আমরা যদি অ্যাকশনে যাই, তাহলে বড় রকমের দুর্ঘটনা হতে পারে। এজন্য এই বিষয়ে কোন রকম উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে পরবর্তীতে এমন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, ১৯৭২ সালে জনবল দিয়ে এখনো চলেছে মৎস্য অধিদপ্তর। যার কারণে জনবল সংকট তীব্র রূপ নিয়েছে। জনবল সংকটের কারণে আমরা সাথে সাথে কোন উদ্যোগ নিতে পারি না।

তিনি বলেন, এভাবে মাছ আহরণ করা ঠিক না। আগামীতে যেন আর না হয় সে বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago