সিলেটে আসছেন মামুনুল, এলাকায় উত্তেজনা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকিদাতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হকের সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক। ছবি: সংগৃহীত

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকিদাতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হকের সিলেট আগমনকে কেন্দ্র করে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিতর্কিত এই হেফাজত নেতা আগামী ২৫ ডিসেম্বর উপজেলার জামিয়া দ্বীনিয়া আসআদুল উলুম রামধা মাদ্রাসার ৭১তম বার্ষিক জলসায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা দেওয়ার পর এ নিয়ে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার আবেদন আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।

এছাড়াও, গত সেপ্টেম্বরে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমাদ শফীর বিরুদ্ধে আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভে উসকানি ও মহাসচিব পদ ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

গত ১৭ ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমিরের মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে মামলার আবেদন করেছেন আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

উভয় ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য গত শনিবার মাদ্রাসার সুরা আমেলার সদস্যরা বৈঠকে বসে। সেখানে মামুনুল হকের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব উঠলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে আসার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

আলীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি মাদ্রাসার সুরা আমেলার সদস্য, তবে সর্বশেষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। মামুনুল হককে মাদ্রাসার মাহফিলে নিয়ে আসার বিষয়ে আমরা দলীয় একটি বৈঠকে আলোচনা করেছি, সেখানে আমরা নীতিগতভাবে সমালোচিত এই নেতাকে এলাকায় না আনার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, যদি প্রশাসনের অনুমোদন থাকে, তাহলে মামুনুল হকের আসতে আপত্তি থাকবে না। এখন যদি প্রশাসন অনুমতি দেয়, তবে আমাদের কিছু বলার থাকবে না।’

এদিকে মামুনুল হক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনার সময় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

মাদ্রাসার মুহতামিম ইউসুফ খাদিমানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই মাহফিলের জন্য দুই বছর আগে ওনার সম্মতি নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ওনার (মামুনুল হক) সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা জানিয়ে বলেছেন যে স্থানীয় প্রশাসন থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেলে তবে তিনি আসবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রশাসনের কাছে অনুমতির জন্য যাব। অনুমতি পেলে মাওলানা মামুনুল আসবেন না হলে আসবেন না।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি একটি মাহফিলের আয়োজন করে। যাতে চরমোনাই পীর সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।

কিন্তু, চরমোনাই পীরের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ কর্মীরা মাহফিলের একটি ব্যানারে আগুন দিয়ে মাহফিল প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। সেদিনই প্রশাসন ওই মাহফিলের অনুমতি বাতিল করে।

আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মাহফিলের দাওয়াত দিলে বিষয়টি জানতে পারি। আগামী সোমবার মাদ্রাসার মজলিসে সুরার বৈঠক আছে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব, যাতে কোনো অবস্থায় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়।’

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তারা এখনো আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা জানিয়েছেন মাদ্রাসার মাহফিলে মামুনুল হক যাতে না আসেন, সেটা তারা দেখছেন। আর অনুমতি ছাড়া যদি মামুনুল হক আসেন, তাহলে সেটা আইনগতভাবে আমরা প্রতিহত করব।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago