এখনো অভুক্ত মানুষ, নিশ্চিত হয়নি খাদ্য নিরাপত্তা

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে এক সরকারি জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোর আট শতাংশ এখনও ঘুমাতে যায় ক্ষুধার্ত পেটে।
রাজধানীর মুগদা এলাকায় কাঁধে বয়ে রাস্তায় পান-সিগারেট বিক্রি করছে নাইম। সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। করোনা মহামারির শুরু থেকেই স্কুল বন্ধ। তাই রিকশাচালক বাবা আর গৃহপরিচারিকা মাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সকাল থেকেই কাজে নামে নাইম। সে জানায়, প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে এই টাকা তুলে দেয় বাবার হাতে। ১৯ ডিসেম্বর ২০২০। ছবি: আনিসুর রহমান
  • শহরের আট শতাংশ দরিদ্র পরিবার না খেয়ে ঘুমাতে যায়
  • শহরের ১২ শতাংশ দরিদ্র পরিবারে খাবার নেই
  • শহরের ২১ শতাংশেরও বেশি দরিদ্র পরিবারে পর্যাপ্ত খাবার নেই
  • সারাদিনে একবেলাও খেতে পায়নি প্রায় তিন শতাংশ শহুরে দরিদ্র পরিবার
  • সাত শতাংশ পরিবার কম পরিমাণে খাবার খাচ্ছে
  • ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কোটি ৩৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৫১ লাখ টন খাদ্যশস্য

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে এক সরকারি জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোর আট শতাংশ এখনও ঘুমাতে যায় ক্ষুধার্ত পেটে।

এই ধরনের জরিপ এটিই প্রথম। এতে আরও দেখা যায়, প্রায় ১২ শতাংশ দরিদ্র শহুরে পরিবারে খাবার নেই।

দ্য আরবান স্যোসিওইকোনোমিক অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে (ইউএসএএস) ২০১৯ নামের এই জরিপটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গত বছরের ৮ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জরিপটি চলে।

গত নভেম্বরে প্রকাশিত জরিপটিতে জানানো হয়েছে, এমন ২১ শতাংশেরও বেশি পরিবারে পর্যাপ্ত খাবার নেই এবং ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতারা জানিয়েছেন তারা তাদের পছন্দের খাবার খেতে পারেননি।

এই জরিপটি পরিচালনা করার হয়েছে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে। সারা দেশের সিটি করপোরেশন এলাকার দুই হাজার ১৫০টি পরিবারের কাছ থেকে এসব তথ্য নেওয়া হয়েছে। মহামারির প্রভাব পড়ার আগেই এমন পরিসংখ্যান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ তৈরি করেছে। কেননা, করোনাভাইরাস মোকাবিলার কারণে আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে এই পরিস্থিতি নিশ্চিতভাবেই আরও খারাপ হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী ৬৬ দিনের লকডাউনের সময় অনেক স্বল্প আয়ের মানুষের আয় অনেক বেশি কমে গেছে, কাজ হারিয়েছেন অনেকে। তাদের ঘরে খাবারের কোনো মজুদও নেই। গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালিত ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ খাদ্য উত্পাদনের গতি অব্যাহত রাখতে পেরেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ তিন কোটি ৫১ লাখ টন খাদ্যশস্য উত্পাদন করেছে। যেখানে গত অর্থবছরে খাদ্যশস্যের চাহিদা ছিল দুই কোটি ৩৬ লাখ টন।

শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রমাণ উত্থাপন এবং জানতে বিবিএস এই জরিপ চালায়।

জরিপে দেখা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অন্যান্য শহর অঞ্চলে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাওয়া যাওয়া মানুষের হার যেখানে চার দশমিক ৮৪ শতাংশ, সেখানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহরাঞ্চলে এই হার নয় দশমিক ২৩ শতাংশ।

জরিপে সারাদিনে একবেলাও খেতে পারেনি এমন পরিবার পাওয়া যায় প্রায় তিন শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই হার তিন দশমিক ১৭ শতাংশ।

এতে আরও দেখা যায়, সাত শতাংশ পরিবার কম পরিমাণে খাবার গ্রহণ করছে, প্রায় ১৫ শতাংশ পরিবার অপছন্দের খাবার খাচ্ছে এবং ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ পরিবার খাবারের পরিমাণই কমিয়ে দিয়েছে।

এই জরিপের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, জরিপে করোনা মহামারির আগের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ দেশে আঘাত হানার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে।

তিনি বলেন, 'মহামারি যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। কারণ বেকারত্বের হার বেড়েছে এবং মানুষের আয় কমেছে।'

গত অক্টোবরে প্রকাশিত বিবিএসের আরও একটি জরিপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে যে সম্প্রতি একটি জরিপ অনুযায়ী, মহামারির আগে মানুষ যে কাজ করত সে অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে শুরু করেছে।'

মন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা আরও সম্প্রসারণ এবং অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যা আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে Food security still not for all

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago