স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অরক্ষিত পদুয়া গণকবর

একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হাজারো মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোদ্ধারা নিরুপায় হয়ে ধর্মীয় আচার মেনে-না মেনে ঝোপ-ঝাড়, খাল-বিলসহ বিভিন্ন স্থানে সমাহিত করেছিলেন। এমন ঘটনা সারা দেশেই ঘটেছে। যারা দেশ ও দশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের গণকবর কোথাও কোথাও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি।
Padua massgrave
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের পদুয়ায় অরক্ষিত গণকবর। ছবি: স্টার

একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হাজারো মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোদ্ধারা নিরুপায় হয়ে ধর্মীয় আচার মেনে-না মেনে ঝোপ-ঝাড়, খাল-বিলসহ বিভিন্ন স্থানে সমাহিত করেছিলেন। এমন ঘটনা সারা দেশেই ঘটেছে। যারা দেশ ও দশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের গণকবর কোথাও কোথাও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষণ করা হয়নি।

এমনি একটি গণকবর রয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামে। গ্রামবাসীরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর অরক্ষিত বা অবহেলিত থাকা দেশবাসীর জন্য লজ্জাজনক।

পদুয়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানকার রাস্তার পাশের গণকবরটিতে ঝোপ ও আবর্জনার স্তুপ। সেখানে যে কারো কবর থাকতে পারে তা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত ইমনকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বাজারে গিয়ে কথা বলি এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে।

তারা ডেইলি স্টরকে জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একদল মুক্তিযোদ্ধা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় আলকরা ইউনিয়নের পদুয়ায় হানাদার বাহিনীর সামনে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন হানাদাররা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে কতজন শহীদ হয়েছিলেন সে সংখ্যা নিরুপণ করা যায়নি। তারা কোন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তাও জানা যায়নি।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, পদুয়ার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির ও আবদুল হক সেদিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দিয়েছিলেন। আবদুল হক মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। সেদিন তার সঙ্গে ছোটভাই সুরুজ মিয়াও ছিলেন। তিনি বর্তমান সোনালী ব্যাংকে চাকরি করছেন।

সুরুজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘গোলাগুলির সময় আমি সেখানে ছিলাম না। হানাদাররা চলে যাওয়ার পর ভাইসহ আমরা আরও বেশ কয়েকজন মিলে তিন-চারজন মুক্তিযাদ্ধাকে পদুয়া রাস্তার মাথা থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে পুকুর পাড়ে এক সঙ্গে কবর দিই।

ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার পেয়ার আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘আমি তখন ভারতে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। সেদিন তিন জন শহীদ হওয়ার কথা শুনেছিলাম। তাদের বাড়ি সম্ভবত নোয়াখালীর দিকে। তারা ডাকাতিয়া নদী হয়ে পদুয়ার রাস্তাটি ব্যবহার করেছিলেন। হয়তো যাতায়াতের সময় হানাদারদের টার্গেটে পড়ে গিয়েছিলেন।’

‘মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর সম্পর্কে পরে জেনেছিলাম’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, ‘এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে জানিয়েছি।’

ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীদের অনেকে বলেছেন, এটা খুবই দুঃখের যে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আনুষ্ঠানিকভাবে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা হচ্ছে না।

তারা জানিয়েছেন,পদুয়া সফিয়া রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাবু অনিল চন্দ্র দেবনাথের দায়িত্বকালে প্রতিবছর বিভিন্ন দিবসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণকবরের ঝোপ পরিস্কার করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। তবে এখন তা আর হচ্ছে না।

পদুয়াবাসীর দাবি, গণকবরটি সংস্কার করে সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।

ইমরান মাহফুজ, কবি গবেষক

Comments

The Daily Star  | English
electoral irregularities

EC allows 29 more local observers to monitor polls

The Election Commission today allowed 29 more local observers to monitor the upcoming national election

11m ago