পাট ও চিনিশিল্প বন্ধ করা জাতীয় ক্ষতি: আনু মুহাম্মদ

সারাবিশ্বে যখন পরিবেশবান্ধব শিল্প সন্ধান করা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে জবরদস্তি, প্রতারণা, মিথ্যাচার করে বিশাল সম্ভাবনাময় পাট ও চিনিশিল্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সর্বজনকথার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, চিনি আমদানির রাস্তা তৈরি করে চিনিশিল্পের বিনাশ করা হচ্ছে। পাট ও চিনিশিল্প বন্ধ করা জাতীয় ক্ষতি।

সারাবিশ্বে যখন পরিবেশবান্ধব শিল্প সন্ধান করা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে জবরদস্তি, প্রতারণা, মিথ্যাচার করে বিশাল সম্ভাবনাময় পাট ও চিনিশিল্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সর্বজনকথার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, চিনি আমদানির রাস্তা তৈরি করে চিনিশিল্পের বিনাশ করা হচ্ছে। পাট ও চিনিশিল্প বন্ধ করা জাতীয় ক্ষতি।

আজ সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে সর্বজনকথার আয়োজনে পাটকল ও চিনিকল বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

পাটকল ও চিনিকল বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানের প্রতিবেদন ও গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষক ড. মাহা মির্জা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। সম্পূরক বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পাটকল শ্রমিক আবদুল হালিম মিঠু ও চিনিকল শ্রমিক ফেরদৌস ইমাম। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

ড. মাহা মির্জা বলেন, ‘১৯৯৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল দেশের প্রায় ৭৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এর মধ্যে ৩১টি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি কারখানাই আর চালানো সম্ভব হয়নি। বরং এসব ক্ষেত্রে সস্তায় জমি ও যন্ত্রপাতি লুট করা হয়েছে অথবা পরিত্যক্ত জমি দেখিয়ে বিপুল ব্যাংকঋণ নেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বেসরকারিকরণ হলেই শিল্পের সম্প্রসারণ হবে, এই যুক্তির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’

‘শুধু পাটচাষিই নয়, খুলনার পাটকলের সঙ্গে একটি গোটা অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতি জড়িত। আমরা দেখেছি, পাটকলগুলো বন্ধের ফলে শিল্প এলাকার অসংখ্য মুদির দোকান, ভাতের হোটেল, আসবাবের দোকান, কাপড়ের দোকানসহ নানা ধরনের অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজকে হুমকির মুখে। পাটকল বন্ধ হওয়া মানে শুধু পঞ্চাশ হাজার পাট শ্রমিকের চাকরি চলে যাওয়া নয়, বরং একটা গোটা অঞ্চলের স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়া,’ বলেন মাহা মির্জা।

চিনিকল বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘মাড়াই করার জন্য যে আখ পাওয়া যায় তা থেকে চিনি আহরণের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম- ৬ থেকে ৭ শতাংশ। যেখানে ভারতে বা ব্রাজিলে এই হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশ। ফলে ১০০ কেজি আখ থেকে ভারত বা ব্রাজিল যেখানে ১২-১৪ কেজি চিনি উৎপাদন করতে পারে সেখানে বাংলাদেশ করে তার প্রায় অর্ধেক। চিনি আহরণের অতি নিম্নহার শেষ পর্যন্ত প্রতি কেজি চিনি উৎপাদনে বাড়তি খরচ হিসেবে যোগ হচ্ছে। নষ্ট ও পুরাতন যন্ত্র ব্যবহারের কারণে শুধু যে চিনি কম আহরিত হচ্ছে তাই নয়, সেই সাথে প্রতি টন আখ মাড়াইয়ে বিদ্যুতের ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, আখ মাড়াইকালে সময়ের অপচয় ইত্যাদিও অনেক বেশি হচ্ছে যার ফলে চিনির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, ‘মিলগুলোর লোকসান শুধু আর্থিক হিসাব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের স্থানীয় পর্যায়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবদানগুলোকে স্বীকার করা হয়না। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল এবং চিনিকলগুলোর শ্রমিক পরিবারগুলোর জন্যে শিক্ষা, চিকিৎসা, এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা তাদের মানবিক এবং সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। অথচ গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ক্ষেত্রে মোটাদাগে আমরা উল্টো চিত্র দেখি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বছর বছর মিলগুলো যে লোকসান করছে তার পিছনে শ্রমিকের কোনোই দায় নেই। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাব এবং দুর্নীতির কারণেই মূলত লোকসান হচ্ছে। যন্ত্রপাতি কেনা হয় ঋণের টাকায়, সুদ পরিশোধ করা হয়, কিন্তু যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না।’  

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘শ্রম আইনের ৩২ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে যে, পাওনা পরিশোধ না করে কোনোভাবেই শ্রমিককে তার বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। অথচ আমরা দেখছি সরকার নিজেই শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা শ্রমিককে নিরাপত্তা দেয় না, আইনে যতটুকু সুরক্ষার আয়োজন আছে, সেটাকেও সরকার মানে না। যদি চিনিকল বন্ধই করতে হয়, তাহলে রংপুর চিনিকলে ২০১৬ সালে যে তিন জনকে খুন করে আড়াই হাজার মানুষের ঘরবাড়ি পোড়ালেন কেন? রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করতে হবে।’ 

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র ব্যবসা করবে তা নয়, কিন্তু কৌশলগত শিল্প হিসেবে পাটশিল্প বিকাশে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্র ব্যবসা করবে না বলা হচ্ছে একদিকে অন্যদিকে ভারত, রাশিয়া, চীন, জাপান, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল ব্যবসার পথ করে দিতে দেশকে মহাবিপর্য়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পাটশিল্প লোকসানের দায় মন্ত্রী কেন নেবেন না? গামের্ন্টস মালিক, রেন্টাল বিদ্যুৎ মালিকদের প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয় অথচ এক হাজার কোটি টাকা দিলে পাটশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারত।’

পাটকল ও চিনিকলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতদের বিচার, শিল্পের আধুনিকায়ন, বিতরণ ও বিপণন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই দুই শিল্পকে লাভজনক করা সম্ভব বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে চিনিকলের নিজস্ব জমিতে রিফাইনারি স্থাপন করে সারা বছর রিফাইন সুগার উৎপাদন করে চিনিকলগুলোর লোকসান কমিয়ে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের জুলহাসনাইন বাবু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রকাশ দত্ত, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের বীথি ঘোষ, নারীমুক্তি কেন্দ্রের সীমা দত্ত, রাষ্ট্রচিন্তার দিদারুল ভুঁইয়া, ফাইট ফর রাইটস এর নিশান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago