নারায়ণগঞ্জে শিশুর ওপর ব্যস্ত রেলক্রসিংয়ের ভার

Narayanganj_Crossing_25Dec2.jpg
দুই হাতে রশি টেনে রেলক্রসিংয়ের ব্যারিয়ার ফেলছে ১২ বছর বয়সী শিশু শান্তা। ছবি: স্টার

দুই হাতে রশি টেনে রেলক্রসিংয়ের ব্যারিয়ার ফেলছে ১২ বছর বয়সী শিশু শান্তা। হাতের ইশারায় ব্যস্ত সড়কের যানবাহন থামাচ্ছে একাই। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইসদাইর বাজার রেলক্রসিংয়ের প্রতিদিনের দৃশ্য এটি। সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত শান্তাকে ক্রসিংয়ের পাশে দেখা যায়।

পশ্চিম পাশে বাজার, পূর্ব পাশে ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, একটি পোশাক কারখানা, দোকান এবং আবাসিক এলাকা থাকায় সব সময় ভিড় লেগেই থাকে ক্রসিংয়ে। রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ না নেওয়ায় বাজার কমিটি ও ইসদাইর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা বন্ধন গেট কিপার নিয়োগ দেয়।

বন্ধনের সভাপতি ও ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রায় ১৬ বছর আগে আমাদের বিদ্যালয়ের দুই শিশু শিক্ষার্থী ক্রসিং পার হওয়ায় সময় ট্রেনে কাটা পড়ে। তখন আমরা রেলওয়ের কাছে গেট কিপার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ জানায়, এটা তাদের তালিকা ভুক্ত ক্রসিং না, যে কারণে গেট কিপার দেওয়া সম্ভব না। ক্রসিংটি ঝুঁকিপূর্ণ যাওয়ায় আমরা শান্তার বাবা আলমাছ মিয়াকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। চার বছর পরে আলমাছ মিয়া ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তার স্ত্রী নাসিমা বেগমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী চার হাজার টাকা বেতনে গেট কিপার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। আমি ১২ বছর ধরে আছি, বেতন বেড়ে আট হাজার টাকা হয়েছে। বড় মেয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করতো, দুজনের আয়ে সংসার চলে যেত। করোনার শুরুতে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন ঘরে এক ছেলে আর এক মেয়ে। আট হাজার টাকায় সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে আমি পিঠা বিক্রি করি আর শান্তা ক্রসিংয়ের দায়িত্ব পালন করে। দুই মাস হলো শান্তা এই কাজ করছে।’

ইসদাইর বাজার কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা নাসিমা বেগমকে চাকরি দিয়েছি। ক্রসিংয়ের পাশেই তিনি পিঠা বিক্রি করেন। মেয়েটি তার মাকে সহযোগিতা করে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ না হওয়ায় কেউ আপত্তি করেনি।’

চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার খাজা মুহাম্মদ সুজন বলেন, ‘ওই রেলক্রসিংটি পিডব্লিউডি-এর অধীনে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মোজ্জামেল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটি অবৈধ ক্রসিং। ডাবল লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। ক্রসিংয়ে পরিবর্তন আসবে। নতুন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে যে নারী দায়িত্ব পালন করছেন তাকেই নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Police vehicle torched in Gopalganj

The vehicle was set on fire allegedly by activists of the banned Bangladesh Chhatra League (BCL) in Gopalganj's Ulpur area

27m ago