মহামারিতে অন্যরকম বড়দিন উদযাপন

বছর ঘুরে আবার এসেছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন। বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও দিনটি উদযাপন করছেন।
মহামারি করোনার কারণে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রানি জপমালা চার্চে সীমিত পরিসরে বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি। ছবি: প্রবীর দাশ

বছর ঘুরে আবার এসেছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস বা বড়দিন। বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও দিনটি উদযাপন করছেন।

তবে, এ বছর বিশ্বজুড়ে চলমান করোনাভাইরাস মহামারি এবং এখনো ভ্যাকসিন না আসায় গির্জাগুলোতে কিছুটা অনাড়ম্বরভাবে বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে।

মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রাখা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মতো সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে জোর দিয়েছেন গির্জার যাজকরা। সুরক্ষা বিধি মেনেই উৎসবের আনন্দ ও রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বড়দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো গির্জা। ধর্মযাজক ও আর্চবিশপ অফিস জানায়, এ বছর ভবনগুলোর সাজসজ্জা কিছুটা অনাড়ম্বর হবে।

ঢাকার কয়েকটি গির্জা ঘুরে দেখা গেছে, ভবনগুলোর সাজসজ্জা অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। ভেতরের প্রার্থনা হলগুলো নানা রঙের বাতি, বেলুন ও বিভিন্ন ধরনের ক্রিসমাস আর্ট দিয়ে সাজানো হলেও বাইরের উঠোনগুলো তেমনটা সাজানো হয়নি।

বাংলাদেশে ক্যাথলিক ও ব্যাপ্টিস্টসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় সাত লাখ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আছেন। খ্রিষ্টীয় নেতাদের মতে, এদের মধ্যে ক্যাথলিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ ক্যাথলিক আছেন। তারা তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে থাকেন।

রাজধানীর কাকরাইলের আর্চবিশপ হাউস এলাকায় ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রালে সাধারণত প্রতি বছর বড়দিনে প্রায় চার শ মানুষ আসেন।

ক্রিশ্চিয়ান কমিউনিকেশন সেন্টারের আহ্বায়ক ফাদার বুলবুল অগাস্টিন রিবেরু জানান, এ বছর দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে প্রায় দুই শ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই গির্জায় গতকাল রাত সাড়ে ৮টা, রাত ১০টা ও আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফাদার বুলবুল অগাস্টিন রিবেরু বলেন, ‘এ বছর আমরা জাঁকজমকভাবে বড়দিন উদযাপন করছি না। সাজসজ্জা সীমিত, কিন্তু সম্পূর্ণ উদযাপনই আমরা সুরক্ষা বিধি মেনে করব।’

বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতা আর্চবিশপ বিজয় ডি’ক্রুজ বলেন, ‘এ বছর আমরা “নো মাস্ক নো এন্ট্রি” নিশ্চিত করছি। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করছি। অপ্রয়োজনীয় সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সবাই যাতে পুরো আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করেন ও যিশুর আশীর্বাদ পান, এটিই আমাদের প্রার্থনা।’

১৯৮৬ সালে বারিধারায় প্রতিষ্ঠিত ক্যাথলিক গির্জায় প্রতি বছর বড়দিনে সাধারণত প্রায় পাঁচ শ মানুষ প্রার্থনা করেন।

যাজক ফাদার সাগর লুইস রোজারিও বলেন, ‘এ বছর মহামারি কারণে আমরা গির্জায় তিন শ জন দর্শনার্থী প্রত্যাশা করছি।’

গির্জাটিতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা, রাত ৯টা এবং আজ সকাল সাড়ে ৭টা ও সকাল ১০টায় বড়দিনের প্রার্থনা হয়েছে।

ফাদার সাগর লুইস রোজারিও বলেন, ‘প্রার্থনা কক্ষের ভেতরে দূরত্ব রেখে আমরা চেয়ারগুলো সাজিয়েছি। সাধারণত, ভিড়ের কারণে আমরা বসার জন্য কারপেট রাখি। তবে, মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা আরও সতর্ক হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গির্জা সাজিয়েছি, তবে খুব বেশি জাঁকজমকভাবে না। ভবনগুলো সাজানোর চেয়ে আমাদের হৃদয়কে সাজানো বেশি প্রয়োজন।’

১৬৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার সবচেয়ে বড় গির্জা ফার্মগেটের হলি রোজারিতে প্রায় এক হাজার আট শ মানুষ বড়দিনের প্রার্থনা করতে আসেন। গির্জার ফাদার জানান, এ বছর তারা এক হাজার এক শ জন আসবেন বলে আশা করছেন।

গির্জার অন্যতম পুরোহিত ফাদার রিপন ডি’রোজারিও বলেন, ‘আমরা বেলুন ও রঙিন কাগজপত্রের মতো সাধারণ উপকরণ দিয়ে গির্জা সাজিয়েছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আলোকসজ্জা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কঠিন সময় পার করছি। আর্থিক সংকটের কারণে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন। তাই, আমরা এখন খুব বেশি জাঁকজমক দেখাতে পারি না। তবে, যিশুর আশীর্বাদে এটি একেবারেই সাদামাটা উদযাপন হবে না; আমরা হৃদয় থেকে বড়দিন উদযাপন করব।’

এই গির্জায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টা, রাত ১০টা এবং আজ সকাল ৭টা ও ৯টায় বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৯৩ সালে ঢাকার কালাচানপুরে প্রতিষ্ঠিত গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশনের যাজক পনুয়েল রিচিল মারাক বলেন, ‘আমি এবং আমরা সবাই গ্রামে যাচ্ছি। আমরা ঘরে ফিরে নিজস্ব উপায়ে বড়দিন উদযাপন করব।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago