মহামারিকালের টেক হিরোরা

পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে পঞ্চম দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ডে। সকল প্রতিকূলতা ভেদ করে যারা করোনাভাইরাস মহামারির মতো দুর্দশার মাঝেও আইসিটি খাতকে আরও শক্তিশালী করেছেন এবং বিশ্ববাজারে পদচিহ্ন প্রতিষ্ঠা করেছেন, এই পুরস্কারের মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করা হয়েছে।

পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে পঞ্চম দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ডে। সকল প্রতিকূলতা ভেদ করে যারা করোনাভাইরাস মহামারির মতো দুর্দশার মাঝেও আইসিটি খাতকে আরও শক্তিশালী করেছেন এবং বিশ্ববাজারে পদচিহ্ন প্রতিষ্ঠা করেছেন, এই পুরস্কারের মাধ্যমে তাদের সম্মানিত করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) আয়োজনে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে এই সম্মানজনক পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং ভিইওএন গ্রুপের সহ-প্রধান নির্বাহী সের্গি হেরেরো।

পঞ্চম দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ীরা হলেন— সিন্দাবাদ ডটকম, ড্রিম৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড, সাউথটেক লিমিটেড, কথা অ্যাপস অ্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেড, সিগমাইন্ড ডট এআই, সিএসএল সফটওয়্যার রিসোর্স লিমিটেডের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রাউলি এবং লিডস করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুল আজিজ।

ডিজিটাল কমার্স ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের প্রথম বিজনেস-টু-বিজনেস ই-কমার্স ওয়েবসাইট সিন্দাবাদ ডটকম পুরস্কার জিতে নিয়েছে। অনন্ত গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৫০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এবং ৩০০ জনেরও বেশি উদ্যোক্তাকে সেবা দিচ্ছে।

আইসিটি সলিউশন প্রভাইডার— ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট ফোকাস ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছে ড্রিম৭১ বাংলাদেশ লিমিটেড। দেশের বাজার ছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানটি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নাইজেরিয়া এবং কেনিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে সফটওয়্যার সমস্যার সমাধান দিচ্ছে।

আইসিটি সলিউশন প্রভাইডার— লোকাল মার্কেট ফোকাস ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতে নিয়েছে সাউথটেক লিমিটেড। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ২৪০ এরও বেশি নিয়মিত গ্রাহক এবং চার হাজার ৮৯০টিরও বেশি সফল কাজের অভিজ্ঞতা।

আইসিটি স্টার্টআপ বিভাগের পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে প্রথম বাংলাদেশি সামাজিক এবং জীবনধারা-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের কথা অ্যাপস অ্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেড।

আইসিটি স্টার্টআপ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে সিগমাইন্ড ডট এআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন যেকোনো সাধারণ ক্যামেরার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের ফেস রিকগনিশন টেকনোলজি সঠিকভাবে বিস্তৃত কাজ করতে সক্ষম।

আইসিটি বিজনেস পারসন হিসেবে রফিকুল ইসলাম রাউলিকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ, রি ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়ার্কফ্লো বেইজড অ্যাপ্লিকেশন আর্কিটেকচার এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির নকশা বিশেষজ্ঞ রফিকুল ইসলাম ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেসিসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাত প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখায় শেখ আবদুল আজিজকে প্রদান করা হয়েছে আইসিটি পাইওনিয়ার পুরষ্কার। তিনি ১৯৯২ সালে লিডস করপোরেশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ হাজার সাবেক কর্মী এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন।

পঞ্চম দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি অ্যাওয়ার্ডের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এবং ভিইওএন গ্রুপের সহ-প্রধান নির্বাহী সের্গি হেরেরো।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গেম-চেঞ্জার বলে অভিহিত করেন।

তিনি জানান, বেসরকারি খাতে তরুণ আইটি পেশাদারদের নিখুঁত ভূমিকার কারণেই দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক উন্নত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখন অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ও বিভিন্ন সেবা নিতে পারছেন।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইটি ব্যবহার করে দরপত্র পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে সরকার ই-টেন্ডার চালু করেছে।’

তরুণ প্রজন্ম এবং অভিজ্ঞ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরও এগিয়ে নিতে এক হয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পঞ্চম বারের মতো আইসিটি পুরষ্কার প্রদানের জন্য ডেইলি স্টার এবং অন্যান্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সের্গি হেরেরো বলেন, বাংলাদেশের যে প্রতিভা রয়েছে তার স্বীকৃতি দেওয়া খুব জরুরি ছিল। ‘বিশ্বাস করুন, আমি আমার জীবনের ১২ বছর সিলিকন ভ্যালিতে কাটিয়েছি এবং আমি আপনাদের বলতে পারি যে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘সঠিক সরঞ্জাম এবং সুযোগ-সুবিধা আমাদের সরবরাহ করতে হবে, যেন বাংলাদেশের মতো দেশে প্রত্যেকেই তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়।’

‘প্রতিটি সংকটই একটি সুযোগ।’ আলবার্ট আইনস্টাইনের এই উক্তি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য অনেক দেশের মতো আমরা বাংলাদেশেও এটা দেখাতে পেরেছি যে সংকটকে কীভাবে সুযোগে পরিণত করা সম্ভব। হ্যাঁ, এই মহামারি সবচেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। এটি আমাদের পরিবার, সমাজ, শিল্প এবং সরকার পর্যায়ে পর্যন্ত আঘাত করেছে। তবুও, আমাদের জনগণ, সরকারি নীতিমালা এবং উদ্যোক্তাদের অবস্থানের কারণে সবাই মিলে এই সংকটকে সুযোগে পরিণত করতে পেরেছি।’

অনেক বেশি দাম দিতে হলেও অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একটি দেশ কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, তার মাধ্যমেই সে পরিচিত ও প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছে। আমরা একটি দুর্দান্ত কাজ করছি।’

এই পুরস্কারগুলো স্বীকৃতি, অনুপ্রেরণা ও উত্সাহ দেওয়ার জন্য প্রদান করা হচ্ছে জানিয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘স্বীকৃতি, অনুপ্রেরণা ও উত্সাহের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একটি বিনয়ী প্রচেষ্টা এই পুরস্কার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই খাতে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাই। কারণ অর্থ ছাড়া পরিকল্পনা খুব বেশি এগোতে পারে না।’

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী সেলিম আরএফ হুসেন বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক সময়। সম্ভবত, করোনা মহামারির একমাত্র ইতিবাচক দিক হলো— ডিজিটাল বাংলাদেশ এজেন্ডাটি বাস্তবায়নে একটি দুর্দান্ত উত্সাহ এবং গতি এনে দেওয়া।’

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা, সামাজিক জীবন এমনকি পারিবারিক জীবনে ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে সবাই।’

খবরের কাগজ ও আইসিটি খাতকে এখন আইসিটি খাতের সর্বোত্তম অনুশীলনের মাধ্যমে কীভাবে উপকৃত করা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করা উচিত বলে যোগ করেন তিনি।

বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘করোনা মহামারি রাতারাতি জীবন বদলে দিয়েছে, জীবন কেড়ে নিচ্ছে, ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং আয় কমে গেছে। তবে, বিশ্ব বেঁচে গেছে আইসিটি খাতের কারণে। প্রতিটি খাতে আইসিটির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিয়েছে করোনা মহামারিটি। নতুন স্বাভাবিক জীবনধারায় এই খাতের জন্য অনেক নতুন সুযোগ উন্মুক্ত হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago