১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করবে সরকার।
এমন সময়ে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলো যখন প্রধানতম এ খাদ্যশস্যটির মূল্য পাইকারি ও খুচরা, উভয় বাজারেই বাড়ছে এবং এর মজুদ কমে সাত লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের এই সময়ে চালের মজুদ ছিল চলতি বছরের প্রায় দ্বিগুণ।
খাদ্যসচিব নাজমানারা খানম গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘দেশে চাহিদার বিপরীতে চালের তেমন ঘাটতি নেই। কিন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে সরকারি পর্যায়ে নেওয়া পরিকল্পনায় আমরা চালের আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, পরিস্থিতি বিবেচনায় হয়তো সরকারকে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে খাবার বিতরণ করতে হতে পারে।’
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে ভারতীয় একটি কোম্পানির কাছ থেকে ৫০ হাজার টন চাল কেনার প্রস্তাবনা অনুমোদন পাওয়ার পর খাদ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল দ্য ডেইলি স্টার। তিনি বলছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে আমাদের ১০ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় আমরা আরও বেশি আমদানি করব। এ ছাড়াও, আমাদের কৃষকরা বিক্রি করতে ইচ্ছুক হলে আমরা তাদের কাছ থেকেও ধান সংগ্রহ করব।’
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পিকে অ্যাগ্রি লিংক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ৩৩ দশমিক ৭২ টাকা কেজি দরে এই চাল সরবরাহ করবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ কেবল চার হাজার টন চাল আমদানি করেছিল।
চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুই দিন আগেই গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সেই চিঠিতে চালের বাজার স্থির রাখতে বেসরকারি খাতের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করার অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে চাল আমদানিকারকদের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। তবে, কম শুল্কে চাল আমদানি করতে হলে আমদানিকারকদেরকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
খাদ্যসচিব বলেছেন, ‘শিগগিরই এনবিআর এই বিষয়ে একটি পরিপত্র দেবে এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো আমদানিকারকই কম শুল্কে চাল আমদানি করতে পারবে না।’
বেসরকারি খাতকে কী পরিমাণ চাল আমদানি করার অনুমোদন দেওয়া হবে, জানতে চাইলে খাদ্যসচিব বলেন, ‘এমন কোনো নির্ধারিত সীমা নেই। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসা এবং কৃষকরা যাতে তাদের পণ্যে ন্যায্যমূল্য পায়, সেই অনুযায়ী বেসরকারি খাতকে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে।’
তবে, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক চলতি সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার বেসরকারি খাতকে ছয় লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমোদন দেবে না।
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়ার আগে কমিটি আরও এক লাখ টন চাল আমদানির প্রস্তাবনার অনুমোদন দিয়েছিল। অন্যদিকে সরকার থেকে সরকার উদ্যোগের আওতায় ভারত থেকে আরও দেড় লাখ টন চাল সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ।
দেশের খুচরা ও পাইকারি, উভয় বাজারে চালের দাম বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৪৬ টাকা। যা গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের তুলনায় ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, মিহি ও মাঝারি ধরনের চালের দামও গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের তুলনায় ২০ ও ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমাণ ছিল সাত দশমিক ৩৯ লাখ টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে পাঁচ দশমিক ৩৭ লাখ টন এবং গম দুই দশমিক শূন্য দুই লাখ টন।
চলমান পরিস্থিতির পেছনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া এবং মহামারি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে।
Comments