‘এ্যাটে কোনা হামার বসতভিটা আছিল’

এক বিঘা জমিতে কিছুটা পলি জমায় সেখানে ধান রোপন করেছন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর এলাকার কৃষক শাহাব উদ্দিন। ছবি: স্টার

‘এ্যাটে কোনা হামার বসতভিটা আছিল। এ্যালা হামরা খাসের জমিত থাকোং। এ্যালা হামার প্যাটের ভাতও জোটেনা ঠিকমতোন,’ এভাবে কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন ব্রহ্মপুত্র নদের চরের কৃষক শাহাব উদ্দিন (৬৬)।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর এলাকার এই কৃষক আড়ষ্ট কণ্ঠে আরও বললেন, ‘হামার ম্যালা মাটি আছিল। আবাদ আছিল। বাড়িত ভাতের এ্যাকনাও কষ্ট আছিল না। হামার বাস্তুভিটা, চাষের জমি এ্যালা বালু দিয়া ঢাকি গ্যাইছে। বন্যা আইসলে পানিতে থৈথৈ করে।’

শাহাব উদ্দিন আরও জানিয়েছেন, তার ১৫ বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু, জমি বালুতে ঢেকে গেছে। কোনো ফসল হয় না সে জমিতে। এ বছর এক বিঘা জমিতে কিছুটা পলি জমায় সেখানে ধান রোপন করেছন। ফলন আসবে কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। দুই বছর আগেও তিনি নিজের বসতভিটায় বসবাস করতেন। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বসতভিটা চলে গেছে, চলে গেছে আবাদি জমি ও ফলের বাগান। এখন তিনি সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করেন।

‘আইতোত ঠিকঠাক ঘুমবার পাং না। চোখের সামনো বাস্তুভিটা ও চাষাবাদের মাটিগুলা ভাসি উঠে। কোনো দিন হামার জমিগুলাত পলি জমে, কাই জানে। এতোদিন মুই বাঁচিম কিনা আল্লায় জানে,’ হতাশার মধ্যেও আশার আলো দেখতে চান তিনি।

শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫৮) ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আগে তাদের পাঁচটি ঘর ছিল। এখন দুটি ঘরে বাস করছেন। আগে কোনদিন কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। এখন আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে। এমনকি তিনিও সংসার চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করেন। বললেন, ‘ব্রহ্মপুত্র হামাকগুলাক বুমিহীন করছে। হামাকগুলাক নিঃস্ব করি দিছে। হামার বাঁচার পথ বন্ধ করি দিছে।

একই চরে শাহাব উদ্দিনের প্রতিবেশী আব্দুস সোবাহান (৬৪) ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, শাহাব উদ্দিনের মতোই তার বসতভিটা ও ১২ বিঘা আবাদি জমি এখন ব্রহ্মপুত্রের বালুতে ঢেকে গেছে। একই সঙ্গে বালুচাপা পড়েছে তাদের স্বপ্ন-আশা-ভালোবাসা। পরিবার নিয়ে দুই বছর থেকে বাস করছেন খাসের জমির উপর। এখন দিনমজুরির আয় থেকে সংসার চালাতে হচ্ছে তাকে।

বললেন, ‘এ্যালা হামার আশা নাই। স্বপ্নও নাই। হামরাগুলা খুব কষ্টোত বাঁচি আছোং। এ্যালা হামরা সবচেয়ে গরিব মানুষ। হামারগুলার জমি কোনদিন ভাইসবে কাই জানে।’

শাহাব উদ্দিনের অপর প্রতিবেশি মজিবর রহমানও (৬০) ডেইল স্টারকে জানিয়েছেন, দুই বছর আগেও তার বসতভিটা, আবাদি জমি ও সাজানো গোছানো সংসার ছিল। গোলার ধানে সংসার চলতো। বাড়ির সবজিতে পরিবারের চাহিদা মিটতো। কিন্তু, এখন আর কিছুই নেই। তার ১০ বিঘা জমির সবটুকুই নদের বালুতে ঢেকে গেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেছেন, দুই বছর আগেও চর যাত্রাপুর এলাকাটিয় ৫৫ পরিবারের বসবাস ছিল। এলাকাটিতে কৃষি আবাদ ছিল চোখে পড়ার মতো। ফসল উৎপাদন ও গবাদি পশু প্রতিপালন করে গ্রামের সবাই শান্তিতে ছিলেন। পুরো চরটি ভাঙনের কবলে পড়ে ব্রহ্মপুত্রের পেটে চলে যায়। এখানকার পরিবারগুলো ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে বিভিন্ন এলাকায় খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কোনো সহায়তা আসলে তিনি সেসব পরিবারকে প্রাধান্য দিয়ে সহায়তা করে থাকেন বলেও জানিয়েছেন দেলোয়ার হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Lives on hold: Workers await reopening of closed jute mills

Five years on: Jute mill revival uneven, workers face deepening poverty

14h ago