পারস্য উপসাগরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উত্তেজনা
আগামীকাল ৩ জানুয়ারি ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার এক বছর হতে চলেছে। একে ঘিরে পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা বাড়ার জন্য পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, জো বাইডেন ক্ষমতায় আসায় তিন সপ্তাহ আগে থেকেই ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য উত্তেজনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
গত বৃহস্পতিবার পারস্য উপসাগরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদসংকুল সামরিক তৎপরতা এবং উস্কানির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়েছে ইরান।
মার্কিন সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরে বোমারু বিমান পাঠানোসহ উস্কানিমূলক তৎপরতা চালিয়েছে উল্লেখ করে ওই চিঠিতে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ইরান তার জনগণ, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেকোনো ধরনের ঝুঁকি অথবা শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত জবাব দিতে ইরান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২০২০ সালের ৩ জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে একটি বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়। ইরানের আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ইরাকে থাকা ইরান সমর্থিত বাহিনীগুলো কোনো ধরনের হামলা চালাবে কি না, এ নিয়ে হোয়াইট হাউসে উদ্বেগ বেড়েছে।
শুক্রবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, উপসাগরে কিছু ইরানীয় সামুদ্রিক বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রস্তুতির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে, ওই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছিলেন যে, ইরান স্বল্প পরিসরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরাকে নিয়ে যাচ্ছে।
সিএনএন জানায়, দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর ওই অঞ্চলে সামরিক ক্রিয়াকলাপ বেড়েছে।
শুক্রবার ইরানের অভিজাত কুদস সামরিক বাহিনীর প্রধান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের প্রতিশোধ ‘নিজের বাড়ির লোক’ এর কাছ থেকেও হতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ইরাকের বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কাছে রকেট বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত হলে ইরানে পাল্টা আঘাত চালানো হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো পরিচিত ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নাম না প্রকাশ করে মার্কিন সূত্রের বরাতে জানা গেছে যে, ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার জন্য লবিং করছে ইসরায়েল ও সৌদি আরব।’
নভেম্বরে ক্ষমতা হস্তান্তরের দুই মাস আগে ইরানের মূল পারমাণবিক সাইটে হামলা চালানোর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওভাল অফিসের এক বৈঠকে ইরানে আক্রমণ চালানোর সুযোগ আছে কি না, এ নিয়ে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প।
গত চার বছরে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে হওয়া আলোচিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি আবারও চালু করতে চান বলে জানিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসনকে কঠিন চাপে ফেলতে শেষ সময়ে ইরানের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারেন ইসরায়েলের বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প যুদ্ধের জন্য অজুহাত খুঁজছেন বলে অভিযোগ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
Comments