জীবন সুরাবানদেরও!
রাজধানীর ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে ফুটপাতে শুয়ে আছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা সুরাবান বেগম। সঙ্গে সমবয়সী আরও তিন জন। ঢাকায় এসেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে। প্লাস্টিকের পাতলা বস্তার ভেতরে শরীরের অর্ধেক ঢুকিয়ে মুখ বের করে তাকিয়ে আছেন রাস্তার দিকে, হয়ত দেখছেন চলন্ত মানুষ।
রোববার ভোররাত ১টার দিকে কথা হয় সুরাবান বেগমের সঙ্গে। ৩০ বছর আগে তার স্বামী কেশর মিয়া মারা গেছেন। এরপর থেকে দুই ছেলে নিয়ে তিনি নান্দাইলে বসবাস করছিলেন। অভাবের সংসারে ছেলেরা গ্রামে কৃষি কাজ করে নিজেদের সংসারই ঠিকমত চালাতে পারেন না। তাই সুরাবান বেগম মাঝে মাঝে ঢাকায় আসেন ভিক্ষা করতে। কিছুদিন ভিক্ষা করে আবার চলে যান গ্রামে। এভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় ঢাকায় ভিক্ষা করেন তিনি।
প্রতিবছর, বিশেষ করে শীতের মধ্যে, ঢাকায় আসেন সুরাবানরা। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বস্তার ভেতর শরীরের অর্ধেকটা ঢুকিয়ে শীতের তীব্র শীতের রাতে উন্মুক্ত রাস্তায় শুয়ে থাকেন তারা।
তাদের অপেক্ষা, শীতবস্ত্র বা নগদ টাকা বিতরণকারীদের জন্য। যে সাহায্যের প্রত্যাশায় তারা মূলত শীতকালে ঢাকা আসেন।
সুরাবান জানান, গত বুধবার আরও তিন প্রতিবেশী রহিমা বেগম (৬৫), হাজেরা বেগম (৭০) এবং তাহেরা বানুসহ (৭০) তেজগাঁও রেলস্টেশন নামেন তিনি। সেদিন থেকেই তারা ফার্মগেটের ফুটপাতে আছেন। প্রতিদিনই দু-একটা কম্বল পাওয়া যায় সেখানে। সেগুলো বিক্রি করে কিছু টাকা পান তারা। এছাড়াও অনেকে নগদ টাকাও দিয়েছেন।
১৫ দিন ঢাকায় থেকে আবার গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন বলে জানান সুরাবান বেগম। আবার তিনি ঢাকা আসবেন এক-দেড় মাস পর। কিছুদিন ভিক্ষা করে আবার চলে যাবেন। এভাবেই চলে তাদের জীবন।
তাহেরা বানু জানান, এখানে যারা আছেন তাদের কারোই স্বামী বেঁচে নেই। দরিদ্র সন্তানরা তাদের ঠিকমতো খাদ্যের যোগান দিতে পারে না। তাই তারা অভাবের সময় ঢাকায় এসে ভিক্ষা করেন।
শীতে কাঁপতে কাঁপতে তিনি বলছিলেন, প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তাদের এভাবেই বসে থাকতে হয়, শুয়ে থাকতে হয়। তা না হলে সাহায্য পাওয়া যায় না।ক্ষুধা তো শীত বোঝে না।শীতের এই কষ্ট না করলে খাব কি!
রাত বাড়তে থাকে। এক বুক হাহাকার নিয়ে একটি কম্বল বা কয়েকটি টাকার জন্য অপলক তাকিয়ে থাকেন সুরাবানরা...।
Comments