২০২০ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৪৩১: রোড সেফটি ফাউন্ডেশন

‘ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন-বেপরোয়া গতি-চালকদের অদক্ষতাসহ ১০ কারণে ঘটেছে এসব দুর্ঘটনা’

২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে রোডটি সেফটি ফাউন্ডেশনের ‘সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’ এ বলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার রোডটি সেফটি ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত পাঁচ হাজার ৪৩১ জনের মধ্যে ৮৭১ জন নারী ও ৬৪৯ জন শিশু। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছর এক হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৬৩ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫১২ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৩ জন। অর্থাৎ মোট নিহতের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরব্যাপী ১১৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২৭২ জন নিহত, ১৩৭ জন আহত ও ৬২ জন নিখোঁজ হন। ১০৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২২৮ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হন।

মোট দুর্ঘটনার মধ্যে পাঁচ দশমিক ২৩ শতাংশ ঘটেছে ভোরে, ৩২ দশমিক ৮৮ শতাংশ সকালে, ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ দুপুরে ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ বিকেলে, নয় দশমিক ৭৫ শতাংশ সন্ধ্যায় এবং ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ ঘটেছে রাতে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগেভ জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ময়মনসিংহে এবং সবচেয়ে কম মেহেরপুরে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। প্রাণহানি বেড়েছে চার দশমিক ২২ শতাংশ এবং আহতের হার বেড়েছে তিন দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের বছরে তুলনায় ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। করোনার সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালে দুই মাস সড়কে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার পরেও দুর্ঘটনা ২০১৯ সালের তুলনায় বেঢ়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে এই সংগঠনটি। সেগুলো হলো— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’র সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সবশেষে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ রাজনীতির ধারাবাহিক চর্চার কারণে গড়ে উঠেছে। এখানে অনেকগুলো কারণ জড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। তবে প্রধান ও উৎস কারণ— দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির তথাকথিত রাজনীতি। তাই সমস্যাটির সমাধান করতে হলে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেজন্য জাতীয় স্বার্থেই সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English

World bee day: The hum beneath our harvests

In a country where rice paddies stretch endlessly and mustard fields glow golden, the soft hum of bees often fills the air. These tiny creatures -- nature’s most vital workers -- are the quiet pulse beneath our harvests.

14h ago