সিলেট জেলা ও মহানগর আ. লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

সমালোচিতরাই গুরুত্বপূর্ণ পদে

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার এক বছরেরও বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দুটির অনুমোদন দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ সন্ধ্যায় এই দুই পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশের পরপরই আলোচনায় ওঠে আসে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা ও কর্মকাণ্ডে সমালোচিত হওয়া আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ার বিষয়টি।

গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার বছর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারির ইজারাদার ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুস্তাক আহমদ পলাশ।

ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বা হাতে পাথর উত্তোলন না করে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন ব্যবহার করেন তিনি, যার ফলে সীমান্তবর্তী লোভা নদী ও নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।

পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে সমালোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতাকে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে করা হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক।

এ ছাড়াও, সম্প্রতি সিলেটের হরিপুরে বন্যপাখির মাংসে ভূরিভোজ করে সমালোচিত হয়েছিলেন সিলেটের পাঁচ সিটি কাউন্সিলর।

তাদের মধ্যে ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াসকে মহানগর কমিটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং তৌফিক বক্স লিপন ও রকিবুল ইসলাম ঝলককে একই কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসসহ নানা কারণে বিতর্কিত, সমালোচিত এবং নিন্দিত ব্যক্তিদের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া শুভবুদ্ধির পরিচয় নয়। আওয়ামী লীগের মতো দায়িত্বশীল দলের কাছ থেকে এই মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বন ও পরিবেশ রক্ষায় যখন সরকার বদ্ধপরিকর, তখন সরকারি দলের জেলা কমিটিতে বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে একজন পরিবেশধ্বংসকারীকে স্থান দেওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক।’

সম্প্রতি সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে নগরীর উপকণ্ঠের টিলাগড়কেন্দ্রীক অপরাজনীতি এবং এর পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টি।

সেসময় টিলাগড় এলাকার ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতা— আজাদুর রহমান আজাদ এবং অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের নিয়ে দুটি বলয় গড়ে দীর্ঘ এক যুগ ধরে টিলাগড়ে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

এ ঘটনার পর সিলেটে নবগঠিত নাগরিক মোর্চ ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ টিলাগড় এলাকায় লাল পতাকা উত্তোলন করে ‘গডফাদার’ মুক্তির দাবি জানায়।

সেসময় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ছাত্রাবাসের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে টিলাগড় এলাকার ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

কিন্তু সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদকে নতুন মহানগর কমিটিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

এমনকি আগের জেলা কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার নতুন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন।

দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’র মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মুরারিচাঁদ কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই দাবি ওঠে, এই গডফাদারদের দল থেকে বাদ দেওয়ার। কিন্তু এখন আমরা দেখছি যে, তাদেরকে তিরস্কারের বদলে বরং পুরস্কৃত করে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনা পূর্ণাঙ্গ কমিটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এরপর এরকম ঘটনায় যখন দল থেকে বিচারের আশ্বাস দেওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সবসময় আশা করি যে, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকেই দলের দায়িত্বশীল পদ বণ্টন করবে, যাতে শুদ্ধ রাজনীতির চর্চার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে তা প্রতিফলিত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমরা বলি যে, রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত হচ্ছে আর এর মধ্যেই যারা রাজনীতির অঙ্গনকে নানাভাবে কলুষিত করছে, তাদেরকে দলে ভালো অবস্থানে স্থান দিলে এর মাশুল দলকেই দিতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Iran announces new wave of attacks on Israel: state TV

Israel says conducted 'extensive strikes' in Iran's west, while explosions near Tel Aviv, sirens blare across Israel; smoke rises after explosion in Iran’s Tabriz

Now