ফাহিদকে হত্যা করে মরদেহ পুতে রাখা হয়, র্যাবের কাছে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় কলেজ শিক্ষার্থী ফাহিদ হাসান সিফাতকে (১৮) শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাড়ির পাশের জমিতে গর্ত খুঁড়ে পুতে রেখেছিল তারই এক প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষার্থী।
গত সোমবার রাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বলে র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রতিবেশী মতিউর (১৯)।
তার স্বীকারোক্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকার জমিতে মাটি খনন করে মাটির নিচ থেকে ফাহিদ হোসেন সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব।
পরে, দুপুরে ঘটনাস্থলে রংপুরের র্যাব-১৩ কার্যালয়ের অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ‘মতিউর তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে ফাহিদকে ডেকে বাড়ির পাশের ওই স্থানটিতে একটি গাছের নিচে বসায়। কথা বলার এক পর্যায়ে ফাহিদকে গলা টিপে হত্যা করে এবং তার চাচার একটি আবাদি জমিতে আগে থেকে খুঁড়ে রাখা গর্তে মাটি চাপা দেয়।’
এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি কোদালও জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হত্যাকাণ্ডের আগে ফাহিদকে অচেতন করতে কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের অধিনায়ক বলেন, ‘ময়নাতদন্ত এবং কেমিকেল পরীক্ষা ছাড়া এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এবং এতে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা তা বের করতে আরও তদন্ত করা হবে।’
মরদেহ উদ্ধারের সময় র্যাবের পাশাপাশি পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুদর্শন কুমার রায়, পিবিআই ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের এএসপি এবিএম রেজাউল ইসলামসহ পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারের পর পিবিআই, সিআইডি ও র্যাবের সদস্যরা প্রাথমিক সুরতহাল ও আলামত সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইজার উদ্দিন বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। র্যাবের হাতে আটককৃত মূল অভিযুক্ত মতিউরসহ চারজনকে থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’
র্যাবের অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, ফাহিদ হাসান সিফাত দিনাজপুরে পড়ালেখা করলেও কয়েকদিন ধরে বাড়িতেই ছিলেন। গত সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর ফাহিদ নিখোঁজ হন। পরদিন মঙ্গলবার ফাহিদের বাবা সফিকুল ইসলাম ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় আটোয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফাহিদের মুঠোফোন নম্বর থেকে কণ্ঠ পরিবর্তন (সাউন্ড চেঞ্জ) করে তার বাবার মুঠোফোনে ফোন করে অপরিচিত এক ব্যক্তি দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে ফাহিদের বাবা ওই নাম্বারে আট হাজার টাকা বিকাশ করেন। নিখোঁজের পর তিনদিন ধরে সন্তানের খোঁজ না পাওয়ায় ফাহিদের বাবা শুক্রবার র্যাব-১৩ এর নীলফামারী কার্যালয়ে ছেলেকে উদ্ধারের আবেদন করেন।
আবেদন পেয়ে র্যাব-১৩ এর একটি দল জ্যেষ্ঠ এএসপি মুন্না বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে। এরপর বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষার্থী মতিউর রহমান, তার বাবা-মা ও চাচাত ভাইকে আটক করে র্যাব। পরে মতিউর জিজ্ঞাসাবাদে একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে র্যাবের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দেন।
নিহত ফাহিদের বাবা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মতিউরের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রায় তিন থেকে চার বছর আগে মতিউরের চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে আমার বড় ভাইয়ের একটি ঝামেলা হয়েছিল। ওই সময় স্থানীয় সালিশে দেড় লাখ টাকায় তার সমঝোতা হয়েছিল। এ ছাড়া, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
নিহত ফাহিদ হাসান সিফাত ছোটদাপ এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং দিনাজপুর আদর্শ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আটক মতিউর রহমান একই এলাকার বাসিন্দা।
Comments