বাইডেনের অভিষেকের আগে আরও সহিংসতার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

US rioters
কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলা। ছবি: সংগৃহীত

‘আজ ট্রাম্প অথবা যুদ্ধ। সহজ কথা।’

‘গুলি করতে না জানলে, আপনার শিখতে হবে। এখনই।’

‘আমরা সরকারি ভবনে তাণ্ডব চালাব, পুলিশ মারব, নিরাপত্তাকর্মী মারব, সরকারি কর্মচারী ও এজেন্টদের হত্যা করব এবং আবার ভোট গণনা চাইব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের এই ধরনের বার্তাগুলোতে গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডবের সতর্কতা ছিল। সিএনএন জানিয়েছে, এসব বার্তায় ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগে এ ধরনের আরও সহিংসতার আভাস পাচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের প্রধান নির্বাহী জনাথন গ্রিনব্ল্যাট গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা দেখছি, শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও চরম উগ্রপন্থিরা এই ধরনের ঘৃণ্যবার্তা ছড়াচ্ছে। তারা এই মুহূর্তে বেশ উত্সাহী হয়ে আছে। আমাদের মনে হচ্ছে, এই সহিংস পরিস্থিতি ভালো হওয়ার চেয়ে আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।’

গত বুধবার কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের ফলাফল সত্যায়িত করার সময় ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় ট্রাম্প-সমর্থকরা। হামলাকারীরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় এক পুলিশসহ পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। তাণ্ডবের ফলে সেখানে উপস্থিত কংগ্রেস সদস্যরা কোনভাবে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছিলেন।

সে রাতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও সিনেটের মেজরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেলসহ রিপাবলিকান নেতারা দাঙ্গাকারীদের কঠোর ভাষায় নিন্দা জানালেও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মৃদুভাবে হামলাকারীদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিলেন।

পরদিন বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-সমর্থক অনলাইন ফোরাম দ্য ডোনাল্ড ডট উইন-এ এক মন্তব্যকারী বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন!’

‘আমাদের অবশ্যই কমুনিস্টদের জিততে দেওয়া উচিত না। এমনকি, আমাদের যদি ডিসিকে পুড়িয়ে ফেলতে হয়, ফেলব। পরে, আমরা ডিসিকে ও আমাদের দেশকে ফিরিয়ে আনবো।’

টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সিকিউরিটি পর্যবেক্ষক সংস্থা সিটিজেন ল্যাবের সিনিয়র গবেষক জন স্কট রেইলটন গণমধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেকের বিষয়ে 'ভীষণ' চিন্তিত।

সিএনএন’কে তিনি বলেছেন, ‘বুধবার রাজধানীতে যা ঘটেছে, তা নিয়ে আমি বিস্মিত। যা ঘটেছে ডানপন্থিরা সেটাকে সাফল্য হিসেবে দেখছে।’

নির্দলীয় প্রশাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা অ্যাডভান্স ডেমোক্রেসি জানিয়েছে, বুধবারের আগের ছয় দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিউঅ্যানন সমর্থিত অ্যাকাউন্ট থেকে এ রকম সহিংস ঘটনার উল্লেখ করে ১,৪৮০টি পোস্ট করা হয়েছে।’

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, একাধিক পোস্টে যুদ্ধের উল্লেখ আছে। ‘আজ যুদ্ধ শুরু হচ্ছে’- এমন বিবৃতিও ছিল।

ট্রাম্পের পক্ষে সমাবেশের আয়োজনকারী রাজনৈতিক কর্মী আলী আলেকজান্ডার তাদেরকে ‘যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার’ জন্য বামপন্থিদের দায়ী করেছেন।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলেকজান্ডার ভিডিও যোগাযোগ মাধ্যম পেরিস্কোপে অনুসারীদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি ও তিন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যারিজোনার পল গোসার, অ্যান্ডি বিগস ও আলাবামার মো ব্রুকস আরও বড় কিছু করার পরিকল্পনা করছেন।

সিএনএন ওই তিন কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে কেবল বিগস তার এক মুখপাত্রের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যে তিনি আলেকজান্ডার বা কোনো প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে কোনোভাবেই কাজ করছেন না।

ওই মুখপাত্র আরও বলেছিলেন, ‘কংগ্রেসম্যান বিগস কোনো অবস্থাতেই আলেকজান্ডারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নন। প্রতিবাদকারী বা দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি কখনো বিক্ষোভকে উত্সাহিত করেননি।’

রুটগার্স ইউনিভার্সিটির নেটওয়ার্ক কন্টাজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক জোয়েল ফিনকেলস্টেইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইন্টারনেটে তৈরি হওয়া ষড়যন্ত্র ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মতো মূলধারার সাইটগুলো থেকে ছড়িয়েছে। বুধবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই চরমপন্থি ছিলেন না বরং সাধারণ আমেরিকান ছিলেন।’

‘তারা বুঝতে পারেননি যে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তারা আমাদেরই প্রতিবেশী,’ যোগ করেন তিনি।

বুধবারের পর থেকে ডানপন্থি ও চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে পুলিশের প্রতি এ গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করছেন।

সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টারের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক ক্যাসি মিলার এ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এতে অত্যন্ত বিপৎজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কারণ, এতে কেবল বামপন্থিদের সঙ্গেই সহিংস লড়াই হবে তা নয়, এর ফলে পুলিশদের সঙ্গেও সহিংস সংঘাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’

এদিকে, ২০ জানুয়ারি বাইডেনের অভিষেক দিবসের নিরাপত্তার বিষয়ে সিক্রেট সার্ভিস বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে, ওই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা জন্য অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান আমাদের গণতন্ত্রের একটি মৌলিক উপাদান। ৫৯তম প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সবার নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন:

শেষ ১১ দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন ট্রাম্প?

নিজস্ব যোগাযোগমাধ্যম চালু করবেন ট্রাম্প!

ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ

ট্রাম্পের টুইট: বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যাব না

নিজে নিজেকে ক্ষমার পথ খুঁজছেন ট্রাম্প

মেয়াদ শেষের আগেই ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান

ক্যাপিটল ভবনে হামলা: ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার ৩ সদস্যের পদত্যাগ

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ‘কালো দিন’

ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা: ফার্স্ট লেডির চিফ অব স্টাফের পদত্যাগ

ছবিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলা

নিহত ৪: ওয়াশিংটনের কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প-সমর্থকদের হামলা

Comments

The Daily Star  | English

Wasa water stinks

For the past two weeks, Siddiqur Rahman, a resident of Shantibagh in Dhaka, has been receiving water from Dhaka Wasa infested with insects and accompanied by a strong stench.

12h ago