বিএনপি-জামায়াতের সমর্থনের চেষ্টায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা

​চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মাঠ গরম হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। নির্বাচনে জিততে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মাঠ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকে সিনিয়র নেতাদের হুংকার, অনুরোধ ও বহিষ্কারের হুমকিতেও পিছু হটেনি বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর গণসংযোগ। ছবিটি রোববার নগরীর উত্তর কাট্টলি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মাঠ গরম হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে। নির্বাচনে জিততে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মাঠ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকে সিনিয়র নেতাদের হুংকার, অনুরোধ ও বহিষ্কারের হুমকিতেও পিছু হটেনি বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটের দিন যার যার পক্ষে ভোট সংগ্রহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থী মাঠে একা হয়ে পড়তে পারেন। এই দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে ভোটের আগে এবং ভোটের দিন গোলযোগের আশংকা রয়েছে।

বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় জরুরি বৈঠক করেছেন দলের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতারা। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

এত কিছুর পরও বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ানোয় নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে দলটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নতুন করে ছক কষতে হচ্ছে।

মাঠ পর্যায়ের তথ্য থেকে বিশ্লেষণ করে সেই প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ১২ জনই চসিকের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী। এরা গতবার কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়, এদের জিতিয়ে আনতে আ জ ম নাছির সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন যা মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতিকূলে যেতে পারে।

একাধিক দলীয় সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের বদলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দেওয়ায় নাছির গ্রুপের নেতা কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। নাছিরের অনুসারীরা এর জন্য শিক্ষা উপমন্ত্রী ও নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়ী মনে করেন। কাউন্সিলর মনোনয়নের দিক থেকেও নওফেলের অনুসারীরাই এগিয়ে আছেন। এসব কারণে রেজাউল করিমের পক্ষে কাজ করতে নাছিরের অনুসারীদের আগ্রহ কম বলে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের গণসংযোগ। ছবিটি রোববার নগরীর উত্তর কাট্টলি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

সূত্র জানায়, ১৩টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররা দলীয় মনোনয়ন পাননি । সেখানে শুধু একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাউন্সিলর পদ নিয়ে এই বিরোধ যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সুরাহা না হয় তবে তা সামগ্রিকভাবে সিটি নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা নতুন করে শুরু হয়েছে ৮ জানুয়ারি থেকে। গত বছরের ২৯ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে স্থগিত হয়। ভোটের নতুন তারিখ ২৭ জানুয়ারি।

এবার ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দুই শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরের ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।

সেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাছিরের অনুসারীদের সঙ্গে নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে প্রচণ্ড অবিশ্বাস ও বাকবিতণ্ডা লেগেই আছে। ইতিমধ্যে অন্তত পাঁচটি সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাঁচটি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে, অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপির অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় নেতারা দলীয় মনোনয়নে একক প্রার্থী হয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মেয়র প্রার্থী রেজাউল অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত হওয়ায় তাকে পরিচিত করানো এবং ভোট চাওয়ার যে উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল তা দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া তিনি নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও নেতা-কর্মীদের ওপর প্রভাব কম থাকায় তার পক্ষে উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছেন না কেউ।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলর পদে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের অনুকূলে যাবে। আর প্রায় সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় দলের ভোট ভাগাভাগি হয়ে বিএনপির একক কাউন্সিলর প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এক্ষেত্রে রেজাউল করিমের ‘ক্লিন ইমেজ’ নির্বাচনী প্রচারণায় কার্যকর ভাবে ব্যবহার করে প্রচারণা বেগবান করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে অভিমত দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ফিরিংগি বাজার ওয়ার্ডের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী বিদ্রোহী প্রার্থী হাসান মুরাদ ডেইলি স্টারকে বলেন ‘আমি জনগণের প্রার্থী, জনগণ আমাকে চায়। কিন্তু যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তারা আমার লোকজনের উপর হামলা-মামলা করছেন। আমার সঙ্গে জামায়াত বা বিএনপির কোনো গোপন আঁতাত নেই বা আগেও ছিল না।’

‘নেতাদের সামনে ছোট করতেই একটি মহল এইসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। তারা আমাকে যত নির্যাতন করুক, আমি মরে গেলেও ইলেকশন করব,’ উল্লেখ করেন তিনি।

লালখান বাজার ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ ওরফে মানিক দাবি করেন, তিনি সব সময় স্বতন্ত্র ভাবেই নির্বাচন করেছেন। ‘দল সমর্থন দেয় আর ভোট দেয় জনগণ। আমি এবার স্বতন্ত্র ভাবেই নির্বাচন করছি। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি আমি নৌকার ভোটার।’

নৌকার ভোটার হয়েও কেন দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘জনগণ যারা কাজ করে তাদের চায়। যারা মাদক বা কিশোর গ্যাং কালচার করে বেড়ায় তাদের খোঁজে না। সুষ্ঠু ভোট হলেই প্রমাণ হবে কে জনগণের রায় পায়।’

তবে এই দুজনই বলছেন তারা মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী পক্ষে রয়েছেন এবং তাদের যদি তিনি ডাকেন তাহলে তার পক্ষে কাজ করবেন।

তবে বিদায়ী মেয়র আজম নাছির বলছেন, ‘দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউলকে ফোন ও তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

2h ago