১২ চরের কোথাও স্থায়ী বসতি হলো না আজিজুলের
মুক্তিযুদ্ধের সময় আজিজুল হকের বয়স ছিল ১৮ বছর। তখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের চর পদিনেরখোপে ছিলেন। নদের বুকে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে পাক বাহিনী যায়নি। স্বাধীনতার পর পদিনেরখোপ চরে আরও তিন বছর ছিলেন। এর পর ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেছাড়া হন। বসবাসের জন্য খুঁজছেন নুতন ঠিকানা, নুতন একটি চর। এভাবে ১২টি চরে ঘর তুলেছেন। কিন্তু কোথাও স্থায়ী হতে পারেননি কৃষক আজিজুল হক।
সর্বশেষ ঘর তুলেছিলেন চর মনতলায়। সেটিও ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ঘর সরিয়ে অন্যের জায়গায় রেখেছেন। নৌকায় চড়ে আজিজুল হক খুঁজছেন ব্রহ্মপুত্রের বুকে নতুন কোন চর জেগেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে গড়বেন নতুন ঠিকানা।
কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের বুকে বাতান চর, নালিতা খাতা চর, বল্লভপাড়া চর, মাঝবাড়ি চর, দীঘলকান্তা চর, খারুভাজ চর, পদিনেরখোপ চর, কাজিরপাড়া চর, মনতলা চর, ঢুশমারা চর, শাখাহাতী চর ও চর গাজীপাড়ায় বসবাস করেছেন আজিজুল হক। চার-পাঁচ বছরের বেশি কোনো চরেই বসবাস করতে পারেননি তিনি।
ব্রহ্মপুত্রের বুকে নৌকায় বসে অশ্রুসিক্ত আজিজুল হক ডেইলি স্টারকে জানান তার ৬৮ বছরের সংগ্রামের কথা। একসময় তার কৃষি জমি ছিল। ৩৫ বিঘার সম্পূর্ণটাই এখন ব্রহ্মপুত্রের বুকে। সর্বশেষ আবাসস্থল চর মনতলা ভাঙনে বিলীন হওয়ায় এখন তিনি আশ্রয়হীন। পরিবারের সদস্যরা এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছে। তিনি এখন নৌকায় বসে নতুন চর খুঁজছেন ঠিকানার জন্য।
আজিজুল হক রোজগার করে টাকা জমান বাড়ি সরানোর জন্য। কারণ তার জানা আছে এক চরে বেশিদিন বাস করতে পারবেন না। এভাবে কেটে যাচ্ছে তার জীবন। তবু চর ছাড়তে রাজি নন তিনি।
কৃষক আজিজুল হক ব্রহ্মপুত্র পাড়ের কৃষক মৃত কলিম উদ্দিন সরকারের ছেলে। তার সংসারে রয়েছে স্ত্রী মাসুদা খাতুন (৬০) ও পাঁচ ছেলে। দুই মেয়র বিয়ে দিয়েছেন। এত সংগ্রামের পরও তিনি তার ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন।
নৌকায় বসে চর শাখাহাতীর কৃষক বদিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, আজিজুল হকের মতো আরও শত শত কৃষক পরিবার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙা-গড়ার খেলার ভেতরেই বেঁচে আছেন। তাদের স্থায়ী কোনো ঠিকানা নেই। একটি চরে স্বপ্নের বসতভিটা গড়লে তা একসময় চলে যায় নদের উদরে। নুতন একটি চরে বালুর উপর গড়ে তোলেন নতুন স্বপ্ন।
Comments