বাইডেনের শপথের আগে ট্রাম্পের অভিশংসন, যা হতে পারে
ক্ষমতার শেষ সপ্তাহে এসে আবারও অভিশংসনের মুখোমুখি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে (প্রতিনিধি পরিষদ) ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখোমুখি হলেন তিনি।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই ট্রাম্পের অভিশংসন হবে কি না এ নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স বলছে, প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব পাস অভিশংসনের প্রাথমিক ধাপ। ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ হবে মূলত সিনেটের ট্রায়ালে। ১০০ সদস্যের সিনেটে এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সংখ্যা সমান-সমান। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সম্মতি দিলে ট্রাম্প মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন। ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সিনেটের কমপক্ষে ১৭ জন রিপাবলিকানকে অভিসংশনের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
ট্রায়াল কবে হতে পারে?
ডেমোক্র্যাটরা চান দ্রুতই যেন সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে ট্রায়াল হয়। তবে এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল। তিনি জানান, ১৯ জানুয়ারির আগে ট্রায়াল শুরু করা যাবে না। এর অর্থ হলো ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস ছাড়ার পরই ট্রায়াল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট কী অভিশংসিত হতে পারেন?
এর উত্তরে রয়টার্স জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রেও ‘লেট ইমপিচমেন্ট’ সম্ভব। এটা সাংবিধানসম্মত। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল কর্মকর্তাদের অফিস থেকে সরানোর জন্য নয়, ভবিষ্যতে যেন তাদের অফিসের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয় সেজন্যও অভিশংসন করা যায়। এর অর্থ হলো অভিশংসিত হলে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে শাস্তির অংশ হিসেবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে কোনো সম্মানজনক, বিশ্বাসযোগ্য বা লাভজনক পদে বহাল থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
কত দিন ধরে ট্রায়াল চলবে?
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, অভিশংসন পরিচালনা করার জন্য সিনেটের নিজস্ব বিধি আছে। তবে কার্যকর বর্তমান বিধিগুলোর অধীনে একটি ট্রায়ালের জন্য কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
আত্মপক্ষ সমর্থন
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগ হলো, তিনি গত ৬ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বাইরে একটি র্যালিতে বক্তব্য দিয়ে ক্যাপিটলের হামলাকে প্ররোচিত করেছিলেন।
সেদিন কংগ্রেসে বাইডেনের জয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অনুষ্ঠান শুরু হলে ট্রাম্পের একদল উগ্র সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। সে ঘটনায় দুই ক্যাপিটল পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ জন নিহত হয়েছেন।
অভিশংসনের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ‘বারবার মিথ্যা দাবি করে বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রতারণামূলক এবং তা গ্রহণ করা উচিত নয়।’
ট্রাম্প সেদিন সমর্থকদের ‘লড়াই’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
রয়টার্স জানায়, ট্রায়ালে ট্রাম্পের পক্ষে যুক্তি হতে পারে যে, তিনি আক্ষরিক অর্থে ‘লড়াই’য়ের কথা বোঝাননি। তিনি সহিংসতার জন্য কাউকে আহ্বান জানাননি।
অভিশংসনের পর বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে এক ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে যে সহিংসতা দেখেছি আমি স্পষ্টভাবে সেটির নিন্দা জানাই। আমাদের দেশে সহিংসতা ও ভাঙচুরের কোনো জায়গা নেই এবং আমাদের আন্দোলনেও এর কোনো জায়গা নেই।’
ভিডিওটি হোয়াইট হাউসের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে। তবে ওই ভিডিওতে অভিশংসনের বিষয়ে ট্রাম্প কিছু বলেননি।
তিনি বলেছেন, ‘আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো রাজনৈতিক সহিংসতার পক্ষে থাকতে পারে না। আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা আমাদের মহান পতাকাকে অসম্মান জানাতে পারে না। আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো আরেকজন আমেরিকানকে হুমকি বা হেনস্তা করতে পারে না। আপনি যদি এ রকম কিছু করেন তবে আপনি আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না। আপনি আন্দোলনকে আক্রমণ করছেন, আমাদের দেশকে আক্রমণ করছেন। আমরা এটা সহ্য করতে পারি না।’
প্রেসিডেন্ট ওই ভিডিওতে আরও বলেন, ‘গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে আরও বিক্ষোভের সম্ভাবনার কথা জেনেছি। আমি অনুরোধ করছি, কোনো রকম সহিংসতা, আইন লঙ্ঘন ও কোনো প্রকার ভাঙচুর কেউ করবেন না।’
Comments