শার্দুল-সুন্দরের বীরত্বে ঘুরে দাঁড়ালো ভারত

রিশভ পান্ত আউট হয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল বড় লিডই পেতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সপ্তম উইকেটে অসাধারণ দৃঢ়তায় ভিন্ন গল্প লিখেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর আর শার্দুল ঠাকুর। অভিষিক্ত সুন্দর আর মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শার্দুল মিলে সপ্তম উইকেটে গড়েন ১২৩ রানের জুটি। দুজনেই পেরুন ফিফটি। তাদের বীরত্বে ব্রিসবেন টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত।
রোববার গ্যাবায় প্রথম ইনিংসে ৩৩৬ রান করে অলআউট হয়েছে ভারত। স্বাগতিকদের চমকে দিয়ে ১৪৪ বলে ৬২ করেন সুন্দর। শার্দুল ১১৫ বলে করেন ৬৭ রান। এক পর্যায়ের দেড়শোর বেশি লিডের সম্ভাবনা থাকলেও কেবল ৩৩ রানের লিড পায় অজিরা। হ্যাজেলউড ৫৭ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে দিনশেষে কোন উইকেট না হারিয়ে ২১ রান তুলেছে টিম পেইনের দল। ডেভিড ওয়ার্নার ২০ আর মার্কাস হ্যারিস ১ রান নিয়ে খেলছেন।
আগের দিন বৃষ্টিতে অনেকটাই ভেস্তে গিয়েছিল। ২ উইকেটে ৬২ রান নিয়ে নেমে সকালের সময়টা পার করে দেন আজিঙ্কা রাহানে আর চেতশ্বর পূজারা। দলের রান একশো পার হওয়ার পর ভাঙ্গে এই দুজনের জুটি।
জস হ্যাজেলউডের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আবারও খোঁচা মেরে শেষ হয় পূজারার ২৫ রানের ইনিংস। থিতু হওয়া অধিনায়ক রাহানে মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে নিয়ে এগুচ্ছিলেন। কিন্তু তার ইনিংস শেষ হয়েছে কিছুটা বাজে শটে। স্টার্কের কিছুটা বাইরের বল তাড়া করে গালিতে ক্যাচ দেন তিনি। ৯৩ বলে ৩৭ করেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
এই ম্যাচে মিডল অর্ডারে সুযোগ পাওয়া মায়াঙ্কও টেকেননি বেশিক্ষণ। থিতু হয়ে উইকেট ছুঁড়ে দেওয়ার দায় তারও। ৩৮ রান করে হ্যাজেলউডের বলে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ।
পান্ত নেমেছিলেন আগের অ্যাপ্রোচে। মেরে খেলার সেই চেষ্টা এবার বেশি ফল আনতে পারেনি। ২৩ রান করা পান্তকে হ্যাজেলউডের বলে দারুণ রিফ্লেক্সে ক্যাচ জমান ক্যামেরন গ্রিন।
১৮৬ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে তখন শেষের গান ভারতের ইনিংসে। সুন্দর ব্যাট করতে জানলেও খেলতে নেমেছেন প্রথম টেস্ট। অন্যদিকে শার্দুলের প্রথম শ্রেণীর গড় কেবল ১৬। লম্বা টেইল তখন ভারতকে দেখাচ্ছে ভয়। কিন্তু এই দুজন ব্যাট করলেন দেখার মতো। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তার সঙ্গে স্কিলের মুন্সিয়ানায় দেখা গেল। চোখ ধাঁধানো মনোবলে ব্রিসবেনের মাঠে সপ্তম উইকেটে ভারতের হয়ে গড়লেন সর্বোচ্চ জুটি।
স্টার্ক-কামিন্সদের শর্ট বল সামলান অসাধারণ দক্ষতায়। হ্যাজেলউডকেও খেলে দেন অনায়াসে। উইকেটে টিকে থাকারই পণ করছিলেন তারা। বেসিক ঠিক রেখে রান বাড়ানোর কাজটাও করতে থাকেন কার্যকরভাবে। চা-বিরতির আগে দুজনকে ফেরাতে নতুন বল নেয় অজিরা। কিন্তু নতুন বলে আসতে থাকে আরও দ্রুত রান। চা-বিরতির পর আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে থাকেন দুজন। এক পর্যায়ে লিড একশো থেকে পঞ্চাশ এবং পঞ্চাশ থেকেও নেমে আসে।
৯ চার ২ ছক্কায় ৬৭ করা শার্দুলকে বোল্ড করলে শেষ হয় অজিদের চরম হতাশার সময়। এরপর নবদ্বিপ সাইনিকে নিয়েও কার্যকর রান বাড়িয়েছেন সুন্দর। ১৪৪টি বল মোকাবেলা করেছেন তিনি। ৭ চার ১ ছক্কায় করার পর নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি আউট হন স্টার্কের বলে।
হাতে সবগুলো উইকেট নিয়ে ৫৪ রানের লিড অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু এই ম্যাচ জিততে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে অন্তত ৩০০ রানের নিরাপদ খুঁজবে তারা। তা করতে গেলে চতুর্থ দিনের পুরোটাই ব্যাট করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিন সেশন ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচানোর একটা সহজ সমীকরণ পেতে পারে ভারত। এই টেস্ট ড্র করলেই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখতে পারবে চোটজর্জর সফরকারীরা।
Comments